পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোধ হয় পর জীবনে কাৰ্য্যশক্তি চালনের অধিক প্রসর পাইয়াছিলেন। - ছয় বৎসর ইংলও বাসের পর ১৮৮২ খৃষ্টাব্দে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু কোন কারণে মনক্ষুণ্ণ -হওয়ায় পাচ মাসের পর পুনরায় সঙ্গীক বিলাতে চলিয়া যান। এতদিন তিনি ছাত্র ছিলেন। ২৫ বৎসর বয়সে তিনি জীবনের কাজ আরম্ভ করেন। সেখানে গিয়া তিনি প্রথমে ভারতগামী ইংরেজ যুবকদিগকে ভারতীয় ভাষা শিক্ষা দিবার জন্য একটা ক্লাস খুলেন। ঐ কাজে তিনিই প্রথম পথ দেখান। তাহাতে তিনি হিন্দী, ফার্সী, সংস্কৃত ও হিন্দুস্থানী ভাষা শিথাইতেন। বাল্যকাল থেকে ফার্সী o মতে ঐ ভাৰ পিথিয় পড়াইতে পড়াইতে উহাতে ব্যুৎপন্ন - হন। শিক্ষাকার্য্যে তার পারদর্শীতা দেখিয়া, সিবিল সাৰ্ব্বিস পরীক্ষার্থীদের জন্য বিলাতে যে রেনের স্কুল-ছিল, (Wren's Institution) (rià fortwta fofii ars* সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ও বাবেক ... easons (Birkbeck Institution) তিনি প্রফেসরী করিতে লাগিলেন। ঐ সময়ে বিলাতের বড় বড় মাসিক, -সাপ্তাহিক ও দৈনিক সংবাদ পত্রে তিনি অনেক প্রবন্ধ লিথিতেন। তার বরাবর ইচ্ছা ছিল, আমাদের দেশীয় ভিন্ন ভিন্ন লোক ও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা ইংরেজদের সমক্ষে বুঝাইয় দিলে তাহারা ভারতবাসীকে ভাল করিয়া চিনিতে * পরিবে, ও আমাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করিবে। Nineteen Century' af) (ff) *) Sf3 "s), বিধবা" নামক প্রবন্ধটা তার করুণ হৃদয় ও বালবিধবাদের প্রতি সমভাবের পরিচায়ক। ঐ সব প্রবন্ধের কতকগুলি #48 of Hi Sovt oftto “Speeches of Hindoo Life নামে পুস্তক প্রকাশ করেন। বিখ্যাত রাজেন্দ্রলাল মিত্র, কৃষ্ণদাস পাল প্রভৃতি ইংরেজীবিশারদদের লেখার ছায় তার পুস্তক বিলাতে সৰ্ব্বত্র অনেক রিভিউ ও সংবাদ পত্রে প্রশংশিত হইয়াছিল। - বহুকাল (১৪ বৎসর) বিলাতে বাস করিলেও অস্তরে তিনি ভারতবর্ষীয় ছিলেন আর স্বদেশের প্রতি তার প্রকৃত ভক্তি ছিল। ঐ হিন্দু জীবনের দৃষ্ঠাগুলিতে তার স্বদেশ ও দেখিয়া পাঠকেরা তার স্বদেশপ্রেম বুঝিতে পারবেন। - ভাষা শিথিতে র্তার অত্যন্ত অভিলাষ ছিল। এখন অবসর ১০ম ভাগ । স্বদেশীদের প্রতি ভালবাসার স্পষ্ট প্রমাণ দেখা যায়। একথান। ইংরেজী পত্র তার পুস্তকের সমালোচনা করিয়া, যাহা লিথিয়াছেন তাহার কিয়দংশ উদ্ধৃত করিলাম, তাহ “Mr. Das is a Hindoo by birth and English by education, and he does credit to both. He not only writes clear fluent English, with a delicate humour that makes it a delight to read, but he is a Hindoo at heart, his writing shows that he loves his country.” - ঐ সময়ে সংবাদপত্রে লেখার কাজ আরো উত্তমরূপে চালাইতে পারিবেন বলিয়া তিনি নিজেই সংক্ষিপ্ত লিখা বা । 'short-hand' শিথিয়াছিলেন আর ৩ মাসের মধ্যেই উহাতে এরূপ পারদর্শী হয়েছিলেন যে মিনিটে ১৫ • দেড় শত কথা লিখিতে পারিতেন। কোন বিষয় শিখিবার ইচ্ছ। হলে যতদিন না উহাতে সম্পূর্ণ অভঙ্গ হইতেন ততদিন । উহা ছাড়িতেন না। কোন কাজ বা বিষ্ঠ অল্প শিথিয়া বা অৰ্দ্ধেক শিথিয়া কখন ক্ষান্ত থাকিতেন না । বলিতেন, “আমার যদি ২টা মাথা ও ৪টা চোপ হইত, তাহলেও বা আমার শিক্ষার বাসনা কিছু পূর্ণ হইবার আশা থাকিত ।” * বলা বাহুল্য, বিলাতে কৰ্ম্মক্ষেত্রে তার এইরূপ সকল । বিষয়ে সমকক্ষতা দেখিয়া একতাপ্রিয় ও স্বদেশভক্ত ইংরেজদেৱ অনেকে তার প্রতি ঈর্ষ্যাপরায়ণ হয়ে তাকে দুই একবার কৰ্ম্মচ্যুত করিয়াছিল ; আর দুই বার তিনি নিজেই কাজ ছাড়িয়াছিলেন । তিনি কিরূপ উচ্চ প্রকৃতির লোক ছিলেন তাঙ্গ নীচের ঘটনাটি পড়িলেই পাঠকেরা বুঝিতে পারবেন। কেছ কোনরূপ অপদস্থ করিলে তিনি হাজার ক্ষতি স্বীকার । করিয়াও কাজ ছাড়িয়া দিতেন। যখন তিনি রেনের | ইনষ্টিটিউশনে সংস্কৃতের অধ্যাপক ছিলেন, কতকগুলি ছাত্র তাহার কাছে ইংরেজী ও অঙ্ক শিক্ষা করিত। কর্তৃপক্ষদের অনেক সময় - ১ম সংখ্যা । ] মধ্যে একজন ইহা জানিতে পারিয়া একদিন দেবেন্দ্রনাথকে । বলিলেন–মিষ্টার দাস! তোমার এ কি রকম ব্যবহার। তুমি আমাদের সংস্কৃত অধ্যাপক হইয়া ছাত্রদিগকে অঙ্ক ও ইংরাজী শিক্ষা দাও, ইহা ত ঠিক নয়। তিনি উত্তর করিলেন —আমি আপনাদের কলেজে সংস্কৃত অধ্যাপক, স্কুল গৃহে ঐ ভাষা ভিন্ন অন্য কোন বিষয়ে পাঠ দেওয়া আমার অনুচিত । কিন্তু আমার বাড়ীতে আমি যে কোন বিষয়ে প্রাইভেট শিক্ষা দিতে পারি। তাছাতে কর্তৃপক্ষ বলেন—তুমি ভারত বর্ষীয়, ভারতীয় ভাষা ও জ্ঞানে তোমার যতই অধিকার থাকুক না, আমাদের দেশে আসিয়া ইংরেজী শিক্ষা দেও। @fxt* ** *žží (presumption) çát* zu I &t&t&& মিঃ দাস উত্তর করিলেন-আপনাদের মাতৃ-ভাষী বলিয়াই উহাতে যে আপনাদের একাধিপত্য আছে বা উহা অষ্ট কেহ ভাল করিয়া বুঝাইতে পারে না, এরূপ ভাবিবেন না। আমাকে আপনার ওরূপ সঙ্কীর্ণতার মধ্যে রাখিয় আমার মানসিক স্বাধীনতা নষ্ট করিলে আমি আর আপনাদের সঙ্গে একত্র কাজ করিতে পারিব না। এই বলিয়া পর দিনই তিনি কাজ ছাড়িবার দরখাস্ত দিলেন । - তিনি ইংলণ্ডে বাসকালে শিক্ষকতা, খবরের কাগজে লেখা, অনুবাদ প্রভৃতি জীবিক অর্জনের কাজ ব্যতীত নিজ যত্নে অনেক গুলি নুতন ও পুরাতন ভাষা শিথিয়ছিলেন। লাটিন, গ্রীক, ইটালীয়, ফরাসী, তিনি ঐ সময়ে ভাল করিয়া শিথিয়াছিলেন। তাহা ছাড়া প্রত্যহ অবসর মতে তিনি ইংলণ্ডের প্রধান লাইব্রেরি –ব্রিটিস মিউজিয়ম রিডিং রুম, ( British museum Reading Room ) at No oilyগারে গিয়া ৪। ৫ ঘণ্টা পুস্তকে ডুবিয়া থাকিতেন। জীবন চরিত, ইতিহাস ও দর্শন তার অতি প্রিয় পাঠ্য বিষয় ছিল। বাঙ্গল, সংস্থত হিন্দী, হিন্দুস্থানী, ফাসী, ইংরেজী, ফরাসী, লাটিন, গ্রীক, ও ইটালিয়—তিনি সৰ্ব্ব শুদ্ধ এই দশটা ভাষা জানিতেন । বিলাতে বাস কালে তিনি "মিরোণী’ নামে একথান। ইটালীয় ভাযার নাটক বাঙ্গলাতে অনুবাদ করেন, কিন্তু তাহার কাগজ পত্রের মধ্যে উঠা পাওয়া যায় নাই । কেবল "পাগলের কথা” নামে তিনি যে বাঙ্গলা ভাষায় একখান পুস্তক লিখিয়াছিলেন, তাছারই পনর অধ্যায় সম্পূর্ণ অবস্থায় পাওয়া গিয়াছে। " ঐ কালে সংস্কৃত ভাষা ও হিন্দু দর্শন শাস্ত্রের আলোচনা তিনি যথেষ্ট করিতেন। সংস্কৃতের ন্যায় বিশুদ্ধ ও উন্নত ভাষা আর জগতে নাই, এই ভাবটী তিনি সাধ্যমত স্বৰ্গীয় দেবেন্দ্রনাথ দাস । - كة ইংরেজদের মনে-বসাইবার চেষ্ট পাইতেন। তিনি কতকগুলি ইংরেজ বন্ধুর পরামর্শে প্রায় ৪ মাস ধরিয়া নিম্নলিখিত বিষয়ে লেকচার দিগছিলেন । ১। বৈদিক কাল। চাঁরি বেদ, সমুদয় উপনিষদ। ২। ভারতের প্রাচীন সাহিত্য-বাল্মিকীর রামায়ণ, ব্যাসের মহাভারত, কালিদাসের কাব্য ও নামক, প্রাক্কতাদি সংস্কৃতের অবাস্তর ভাষাসমূহ। ৩। সংহিতা ব্রাহ্মণ (উপনিষদ ও আরণ্যক) ও স্বত্র। ৪। প্রাচীন দর্শন শাস্ত্র যথা—মীমাংসা, ৱেদান্ত, ছায়, বৈশেষিক সাংখ্য ও যোগ । ৫ । পরবর্তী দর্শন শাস্ত্র, জৈন, চাৰ্ব্বাক, ভগবদগীতা, ও বৌদ্ধ শাস্ত্র । - - - ৬। পানিনি প্রভৃতি সংস্কৃত ব্যাকরণ, কোষ, অলঙ্কার, অঙ্কুশাস্ত্র, বীজগণিত, জ্যোতিষ, ব্যবহার, (মনু ও যাজ্ঞ বন্ধ চিকিৎসাশাস্ত্র, কলা (সঙ্গীত, ভাস্কর কার্য প্রভৃতি) ইত্যাদি বিষয়ক প্রাচীন সংস্কৃত শাস্ত্র। - যে ব্যক্তি উপরোক্ত অতগুলি জটিল ও কঠিন বিষয়ের । অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করিতেন তার বিজ্ঞা ও পাণ্ডিত্য যে কি পরিমাণ তাহ পাঠক বিবেচনা করুন। পৃথিবীতে তার শতাংশের একাংশ বিস্তাবিশিষ্ট ব্যক্তি কত সন্মান পাইয় থাকেন। তিনি এদেশে সাধারণের নিকট একজন বিলাত ফেরত শিক্ষক মাত্র ছিলেন। সাধারণের এরূপ ধারণার জন্ত দোষ দেওয়া যায় না। কারণ দেবেন্দ্র বাবু, যেরূপ আশ্চৰ্য্য আত্মগোপন করিয়া জীবন কাটাইয়াছেন, তাহাতে তাহার অতি আত্মীয় লোকের পর্যন্ত স্তাহাকে চিনিতে পারেন নাই। তিনি সমাজে কাহারও সহিত মিশিতেন না। নিজের ক্ষুদ্র বাড়ীতে পুস্তকরাশিতে ডুবিয়া থাকিতেন। তিনি বলিতেন, মানুষের অপেক্ষা পুস্তকই অতি হিতকর বন্ধু। ক্লারণ, উহার সংসর্গে সকল সময়ে ও সকল অবস্থায় মনে শাস্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়। দেবেন্দ্রনাথ একেশ্বরবাদী ছিলেন, আর ঈশ্বরোপাসনায় কোনোপ্রকার আড়ম্বর ভালবাসিতেন না। বলিতেন, । নিজের শরীর ও মন পবিত্র রাখিয়া নিজের গৃহে উপাসন করিলেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়, কেবল নিষ্ঠার আবওক । রজনীতিতে তিনি অত্যন্ত আস্থা লইতেন । কিন্তু হাe.