পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>8 - নৈতিক আন্দোলনে জিশিতেন না। তিনি • সচরাচর বলিতেন, আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত দোষগুলির নিরাকরণ না করিলে রাজনৈতিক স্বত্বের জন্য আন্দোলন বেশী ফলদায়ী হবে না। যে কোন জাতি চরিত্রবান ও র্তাহীদের সমাজ উন্নত হইলেই মানুষের আস্তান্ত অধিকারগুলিও ক্রমবিধানে তাহীদের হস্তগত হবে। প্রবাসে শেষের দুই বৎসর অত্যন্ত পরিশ্রম করার দরুণ দেবেন্দ্র বাবুর স্বাস্থ্য ভঙ্গ হয়। ১৮৯১ খৃষ্টাব্দে তিনি ২৩ বার ত্রণকাইটিস রোগে আক্রান্ত হন । সে কারণে ডাক্তারের পরামর্শে তিনি স্বদেশে ফিরিতে বাধ্য হন। কলিকাতায় প্রত্যাবর্তনের পর স্বৰ্গীয় আনন্দমোহন বসু দেবেন্দ্রনাথকে সিটি কলেজে ইংরাজী অধ্যাপক নিযুক্ত করেন। সেখানে প্রায় এক বৎসর কাজ করিয়া তিনি fNG ARGITs fris) Ats) (Civil service candidates). পরীক্ষার্থীদের জন্য একটা ক্লাস খুলেন। আমাদের বর্তমান বাঙ্গালী সিবিলিয়ানদের মধ্যে অনেকে মিঃ দাসের ছাত্র ছিলেন। তার বরাবর ইচ্ছা ছিল যে বিলাতে ইংরেজ বালকদিগকে সিবিলসাৰ্ব্বিসের জন্য প্রস্তুত করিবার নিমিত্ত যেরূপ রেনের ইনষ্টিটিউসন আছে, আমাদের দেশেও সেইরূপ একটী শিক্ষালয় থোলা অবিশুক । তাহাতে ছাত্ররা নিজে দেশের থাকিয়া অধিকাংশ বিষয়ে স্বল্প র্যয়ে শিক্ষিত হবে, তার গৃহস্থের ছেলেরা পর্যন্ত উহাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে সক্ষম হবে ; কেননা, অনেক স্থলে পুত্র মেধাবান হইলেও অর্থের অভাবে পিতার তাহাদিগকে অধিক দিনের জন্ত ইংলণ্ডে পাঠাইতে অপারগ হন। কিন্তু তিনি নিজের এই উদ্দেগুটী দেশীয় লোকদের মনে প্রবেশ করাইতে পারেন নাই বলিয়া অনেক সময় দুঃখ করিতেন। - প্রাইভেটটিউশনে - তার কার্য্যশক্তি চালনার যথেষ্ট প্রসর না পাইয়া তিনি নিজেই সেঞ্চুরি স্কুল পরে সেঞ্চুরি কলেজ’ স্থাপন করেন। ঐ কলেজ তিনি ৭বৎসর অতি দক্ষতার সঙ্গে চালাইয়াছিলেন। ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রণালী ও নিয়ম সকল অতি উৎকৃষ্ট ছিল । তিনি বিষ্ঠার সহিত বালকদের চরিত্র গঠনেও বিশেষ মনোযোগ করিতেন। দেশের অনেক শিক্ষিত ও গণমান্ত লোকেরা নিজ নিজ প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩১৭। [ ১০ম ভাগ। SMMMMSMMMMMSMMMMMM MMMMMMMMM MMMMMMMSSMMSMMMMSMMMMMMS --------- --- SumitaBot (আলাপ) ১৮:১৫, ২৫ মার্চ ২০১৬ (ইউটিসি) * পুত্র ও আত্মীয় স্বজনকে সেখানে পাঠার্থে দিয়াছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ একাকী কেবল নিজের শক্তির উপর নির্ভর । করিয়া ঐ বিদ্যালয় স্থাপন করিয়াছিলেন। উহার জন্ত । তাহাকে অনেক কষ্ট ও ক্ষতি স্বীকার সহ করিতে । হইয়াছিল। তাহা ছাড়া আমাদের এই দুর্ভাগ্য কলহপ্ৰিয় । দেশে ঈর্ষ্যার কারণেও তিনি অনেক নিগ্ৰহ সহিয়াছিলেন। ৭ সাত বৎসর অনবরত পরিশ্রম করিয়া কলেজটিকে নিজ পায়ে ভর দিয়া দাড় করাষ্টলেন, প্রতি বৎসর অনেক ছাত্র র্তার কলেজ থেকে পাশ হইতে লাগিল। গবর্ণমেণ্টের রিপোর্টেও সেঞ্চুরী স্কুল ও কলেজের প্রশংসা দেখা গেল। ঐ সময়ে ১৮৯৮ খৃষ্টাব্দে কলিকাতায় যে বৎসর প্রথম প্লেগ প্রবেশ করে সেই ভয়ের আবির্ভালে সমস্ত লোক সহর থেকে যে যেখানে পলাইয়া যায়। স্কুল ও কলেজগুলি সব খালি হইয় পড়ে। সেই দুই বৎসর কলিকাতার যত দেশীয় বিদ্যালয়ের অবস্থা অতি শোচনীয় হইয়াছিল। তবে পুরাণ কলেজগুলি, যাহা সাধারণ দান বা পাঁচজনের সাহায্যের উপর নির্ভর করিত, সেগুলি অনেক ক্ষতি সত্ত্বেও মাথা তুলিতে পারিয়াছিল, কিন্তু সেঞ্চুরী স্কুলের ভাগ্যে তাহা ঘটিল না। কারণ, দেবেন্দ্রনাথ নিজ কলেজের জন্ত অপরের কাছে কোনরূপ সাহায্য প্রার্থনা করা অতি গৰ্হিত লজ্জাস্কর কাজ মনে করিতেন। দুই বৎসর অত্যন্ত পরিশ্রমের সঙ্গে ভাবনা যোগ হওয়াতে মিঃ দাসের মাথার অসুখ জন্মাইয়া যায়। হয়, ইস্কুল ছাড়িয়া দিয়া বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যলাভ, নতুবা স্বাস্থানাশ ও জীবনক্ষয়-এই দুই সমস্তায় পড়িয়া ডাক্তারের পরামর্শে তিনি কলেজ ত্যাগ করিতেই বাধ্য হইলেন। লেখকের যোগ্য পুত্রের মৃত্যুতে যেরূপ শোক হয়, সেঞ্চুরী কলেজ উঠাইয়৷ দিতে দেবেন্দ্রনাথ সেইরূপ মনস্তাপ পাইয়াছিলেন। তিনি দৃঢ় প্রকৃতির লোক ছিলেন, অল্প ছঃথে কখন বিচলিত হইতেন না। কিন্তু যে দিন সেঞ্চুরী কলেজ বিসর্জন দেন, তিনি অশ্র সম্বরণ করিতে পারেন নাই—ও তিন দিন ভাল করিয়া অtহার করেন নাই । তার উদার স্বভাব বিষয়ে অবখ্য ইহা বলা উচিত যে তই একটী দেশীয় কলেজের কর্তৃপক্ষরা তার সেঞ্চুরী স্কুল কিনিয়া লইবার প্রস্তাব করেন ; তিনি উছাতে বলেন, যে ব্যক্তি টাকার জন্ত নিজ ১ম সংখ্যা । ] সন্তানকে বিক্রয় করে সে অতি নীচ, এই ইস্কুল ও কলেজ আমার সস্তানের দ্যায়, আমার কাছে ওরূপ প্রস্তাব করিবেন না। ছাত্রদিগকে অন্ত কোন স্কুল ল কলেজে, ভৰ্ত্তি হইবার সময় কোনরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হইতে না হয়, সেইজন্য তিনি সকলকে নিজেই ūjiao (transfer certificate) দেন ও সেই মাসের ফি ফিরাইয়া দেন। সেঞ্চুরী কলেজ ডিসমিস করিয়া মস্তিষ্কের পীড়ার দরুণ তিনি কিছুদিন দাৰ্জিলিং এ বাস করেন। পরে একবংসর বরিশাল ব্ৰজমোহন ইনষ্টিটিউশনে অধ্যাপকতা করেন। সেই সময়ে বহরমপুর কলেজের প্রিন্সিপালের পদ খানি হওয়াতে কর্তৃপক্ষীরা তাহাকে আবেদন করিবার জন্ত আহবান করেন, মহারাজা মনীন্দ্রচন্দ্র নদীরও দুই একজন দেশীয় মেম্বরের একান্ত ইচ্ছা ছিল যে তিনিই ঐ পদে ভর্তি হন, কিন্তু ইংরেজ জজ ও ম্যাজিষ্ট্রেট এক ফিরিঙ্গীকে ঐ কাজ দেন। বরিশাল থেকে আবার তিনি দাৰ্জিলিংএ যান, সেখান থেকে আসিয়া কিছুকাল সিট ও রিপণ কলেজে অধ্যাপকতা করেন। দেবেন্দ্রনাথের চরিত্র সম্বন্ধে অনেকের একটা ভ্রম ধারণা এই সম্বন্ধে দূর করা আবখ্যক । কেহ কেহ মনে করিতেন তিনি অত্যন্ত উগ্র প্রকৃতির লোক ও অহঙ্কারী ছিলেন, সেইজন্য কোন স্থানে অধিক দিন কাজ করিতে পারেন নাই। কিন্তু র্তার স্বভাব কিছু গরম হইলেও তিনি বদরাগী ছিলেন না, আর অহঙ্কারীও ছিলেন না, কেবল অত্যন্ত আত্মাভিমানী ও স্বাধীনচেত ছিলেন। তার ঐ অভিমানকেই অনেকে অহঙ্কার মনে করিত। যে কেহ তার সঙ্গে আলাপ করিয়াছে তিনিই জানেন মিঃ দাস কিরূপ সরল প্রকৃতির লোক ছিলেন। কোন কোন দিন অপরাহ্নে কলেজ ঙ্কোয়ারে তিনি যখন ছাত্রবৃন্দ পরিবৃত হইয়া বাক্যালাপ করিতেন, তখন কেহই বলিতে পারিত না যে তিনি তাহাদের পিতৃস্থানীয় অধ্যাপক—বালকদের সঙ্গে তিনি ঠিক বন্ধুর দ্যায় ব্যবহার করতেন। আর তার স্বাধীন মন অধিক দিন বেড়ের মধ্যে থাকিয়া কাজ করিতে পারিত না বলিয়া তিনি ঐক্কপ কাজ ছাড়িয়া দিতেন । র্তার মাথার পীড়া ক্রমশ: বৃদ্ধি পাইতে লাগিল । তার সঙ্গে ডিসপেপসিয়াও,যোগ দিল। সে কারণে তিনি স্বগীয় দেবেন্দ্রনাথ দাস । - ミQ SMMSMMMMSAMMMMMS MSMMSMMSMMSMSMSMSMS কলেজের শিক্ষকতা ছাড়িয়া মৃত্যুর পূর্বে পাঁচ বৎসরকাল এফ, এ, ও বি, এর পাঠ্যপুস্তকের নোট বা টীকা প্রস্তুত করিয়া জীবিক নিৰ্ব্বাছ করিতেন। উহাতে-ৰ্তার যথেষ্ট আয় হইত বটে, কিন্তু তিনি আর সম্পূর্ণ স্বাস্থালাভ করিতে পারেন নাই। তিনি প্রত্যহ দুইবার কলিকাতার গড়ের মাঠে বেড়াইতে যাইতেন । এই বিশুদ্ধ বায়ু সেবন ও নিয়মিতরূপে বাসের দরুণ তিনি দেখিতে বেশ হৃষ্টপুষ্ট ও সবল ছিলেন, রোগ তাহাকে একেবারে আক্রান্ত করিতে পারেন নাই। পাঁচ বৎসরে তিনি সৰ্ব্বশুদ্ধ ৩১ একত্রিশ খানি ইংরেজী পুস্তকের নোট বা টীকা প্রস্তুত করেন। তার মৃত্যুর ১• দিন পূৰ্ব্বেও তিনি একখানি নোট বাহির করিয়াছিলেন। তিনি পরবশ জীবনকে যেরূপ ঘৃণা ও ভয় করিতেন, সেইরূপ একদিনের জন্তও শয্যাগত হন নাই। তাহার পায়ে জুতার ঘা ও ফোড়া হইয়। তিনি কিছুদিন কষ্ট পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু কাজে অপারগ হন নাই। দুইদিন মাত্র জর ভোগ করিয়া হঠাৎ তাহার বুক খারাপ হইয়া মৃত্যু হয়। পরে ডাক্তারেরা বুঝিতে পারেন রক্ত-বসন্তই তার মৃত্যুর কারণ। দেবেন্দ্র বাবু জীবনে ইংরেজী, সংস্কৃত, অন্ধ ও অন্তান্ত ভাষার শিক্ষা ও আলোচনা-করিয়াই ক্ষান্ত ছিলেন না। মাতৃভাষাও তার অতি আদরের সামগ্রী ছিল, তিনি বলিতেন, যখন কৰ্ম্ম হইতে অবসর লইবেন, তখন ইংরেজী ও ফরাসী ভাষা হষ্টতে সদগ্রন্থ সকল অনুবাদ করিয়া দেশীয় ভাষা পুষ্ট করিবেন। কিন্তু সেদিন আসিবার আগেই ভগবান তাহাকে ডাকিয়া লইলেন। কেবল “পাগলের কথা” নামক একথানি বাঙ্গলা পুস্তক তিনি ইংলণ্ডে বাস কালে লিখিয়াছিলেন। উহার কোন কোন অংশ ‘সময়ে বাহির হইয়াছিল। সম্পূর্ণ গ্রন্থখানি দাস প্রেসে মুদ্রিত হইতেছে, উহা প্রকাশিত হইলে পাঠকের পড়িয়া দেখিবেন উহ। তাহার কতদূর বিজ্ঞতা ও গবেষণার পরিচায়ক। পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি দেবেন্দ্র বাবু জীবনে কখন আত্মপ্রকাশ করেন নাই, তিনি কোনরূপ বাহিক আড়ম্বর বা নিজের ঢাক বাজানকে অত্যন্ত ঘৃণা করিতেন। যে কোন বিষয়েই হউক তিনি সরল প্রকৃতি ও নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি