পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ة ة لا নেপালে গোখা বিজয় । হিমালয়ের ক্রোড়স্থ সমুদায় পাৰ্ব্বত্য প্রদেশের মধ্যে নেপাল সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ। পরিসরে ইহা প্রায় হিমালয়ের এক তৃতীয়াংশ অধিকার করিয়া আছে। ইহা দৈর্ঘে প্রায় ৫০০ মাইল এবং প্রস্থে স্থানে স্থানে প্রায় ১৫০ মাইল হইলেও গড়ে ১০০ মাইলের অধিক হইবে না। ইহার উত্তরে তীব্বত, দক্ষিণে হিন্দুস্থান, পশ্চিমে রোহিলখণ্ড এবং কুমায়ুন, পূৰ্ব্বে সিকিমরাজ্য। নেপালেই জগতের সৰ্ব্বোচ্চ শিখর এবারেঃ বা গৌরীশঙ্কর অবস্থিত এবং ধবলগিরি প্রভৃতি অত্যুচ্চ পৰ্ব্বতমালা ইহার উত্তরসীমায় বিস্তৃত। সরযু, ঘর্ঘর, কুশীগণ্ডকী প্রভৃতি বিখ্যাত নদী সকল নেপাল প্রদেশ হইতেই নিঃস্থত। অতি প্রাচীনতমকাল হইতে নেপাল রাজ্য ভারতবাসীর নিকট বিশেষ পরিচিত। খৃষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দীতে নেপাল রাজ্যের পরিসর বর্তমান সময়ের দ্যায় বিস্তৃত ছিল না। নেপালের বর্তমান রাজধানী কাটমণ্ডুর উপত্যকার চতুর্দিকেই কেবল ইহার স্বাধীন রাজ্য বিস্তীর্ণ ছিল। এই প্রদেশ নেওয়ার নামধেয় মঙ্গোলীয় এবং হিন্দুজাতির সংমিশ্রিত এক শাস্ত স্বভাব নিরীহ পরিশ্রম জাতির আবাসস্থল ছিল। নেওয়ারগণ বৌদ্ধধৰ্ম্মাবলম্বী ছিল। বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারিত হইবামাত্র তাহ নেপালে প্রচারিত হয়। এবং নেওয়ারদিগের ভিতর এইরূপ কিম্বদন্তী আছে যে স্বয়ং বুদ্ধ নেপালে গমন করিয়াছিলেন। এবং যে কুশীনগরে তিনি প্রাণত্যাগ করেন, তাহ নেপালেই অবস্থিত ছিল এমন কথাও কেহ কেহ বলিয়া থাকেন। সে যাহা হউক নেপাল যে বৌদ্ধধৰ্ম্মের এক দুর্গ ছিল তাহাতে আর সংশয় নাই। কিন্তু হিন্দুধৰ্ম্মও এখানে প্রচলিত ছিল। এই দুৰ্ভেণ্ঠ রাজ্যে হিন্দুস্থান হইতে অনেক অত্যাচারি হিন্দু ও বৌদ্ধগণ অবহমানকাল হইতে আশ্রয় লাভ করিয়৷ আসিয়াছে। ইহার প্রাচীন পুরাবৃত্ত সম্বন্ধে নিশ্চয় করিয়া কিছুই বলা যায় না তবে খৃষ্টিয় চতুর্থ শতাব্দী হইতে প্রায় ৫০০ বৎসর ধরিয়া নৈমুনি বংশ এখানে রাজত্ব করে। তৎপরে ভালসিংহ নামে এক রাজপুত বীর আসিয়া এই বংশকে পরাভূত করিয়া নেপালরাজ্য অধিকার করেন। প্রবাসী--বৈশাখ, ১৩১৭ । [ ১০ম ভাগ ভাল সিংহের বংশধরগণ ১১১ বৎসর রাজত্ব করিবার পর কিরাটীগণ কর্তৃক বিতাড়িত হয়। কিরাটগণ বহু শতাব্দী ধরিয়া নেপালে রাজত্ব করে । পর গুপ্তবংশ, সোমবংশ স্বৰ্য্যবংশীয় রাজপুতগণ যথাক্রমে নেপালে রাজত্ব করেন। কেহ কেহ বলেন নৈমুনির পরই গুপ্তবংশ নেপাল অধিকার করেন । আটজন গুপ্ত রাজা নেপালে রাজত্ব করিয়াছিল। সৰ্ব্বাপেক্ষা কিরাটগণ অধিকদিন প্রায় ৮০০ বৎসর নেপালে রাজত্ব করে। কিরাটগণ সম্ভবতঃ রাজপুত বংশ সস্তৃত ছিল না। প্রায় ৩০ জন কিরাট রাজার নাম ইতিহাসে প্রাপ্ত হওয়া যায়। সে সকল নাম সংস্কৃত নয় কিন্তু অন্তান্ত বংশীয় রাজাদিগের নাম সমুদায় আমাদিগের পরিচিত যথা—ভাস্কর বর্ষ। চন্দ্রবন্ধ পৃথ্বীবী, হরিবল্ম ইত্যাদি। এই বৰ্ম্ম রাজগণ স্বৰ্য্যবংশ সস্তৃত ক্ষত্রিয় ছিলেন। এই বংশের শেষ নৃপতি অপুত্রক অবস্থায় একটমাত্র কন্যা রাখিয়া গতাস্থ হন। এই কন্ত সতীদেবী নেপালের রাণী হন এবং কাশীরাজ হরিশ্চন্দ্র দেবের সহিত ইহার বিবাহ হয়। সতীদেবীর রাজলক্ষ্মী নামী একটমাত্র কন্য। জন্মে। মায়ের মৃত্যুর পর রাজলক্ষ্মী নেপালের সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু জয়দেব নামক এক জ্ঞাতি কর্তৃক রাজলক্ষ্মী সিংহাসন চু্যত হন। জয়দেব অধিক দিন রাজ্য ভোগ করিতে পারেন নাই। মিথিলারাজ হরিসিংহ দেব আসিয়া নেপালের সিংহাসন অধিকার করেন। মুসলমানগণ হরিসিংহের রাজ্য অধিকার করাতে তিনি নেপাল রাজ্যে প্রবেশ করেন। অনুমান ১৩২২ খৃঃ এই ঘটনা হয়। হরি সিংহের নেপাল রাজ্য অধিকার করিতে কিছু মাত্র আয়াস স্বীকার করিতে হয় নাই। হরি সিংহের বংশধরগণ এতাবৎকাল নেপালে প্রতিষ্টিত ছিলেন। ১৭৬৯ খৃষ্টাব্দে গোর্থীরাজ । পৃথ্বীনারায়ণ কর্তৃক এই বংশীয় রাজা বিতাড়িত হইয়াছেন। । গোর্থ কর্তৃক নেপাল বিজয় অতিশয় আধুনিক ব্যাপার ভারতে ইংরাজ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা এবং নেপালে গোর্থ বিজয় প্রায় সমসাময়িক । হরি সিংহের অধঃতন সপ্তম পুরুষ অক্ষ মল্লের ১৫৬৮ খৃঃ অঃ মৃত্যু হয়। তিনি মৃত্যুকালে আপনার তিন পুত্র ও এক কন্যাকে রাজ্য বণ্টন করিয়া দেন। জ্যেষ্ঠ পুত্রকে ভাটগাঁও, দ্বিতীয়কে বেনিপার T. কিরাটদিগের । ১ম সংখ্যা । ] উপত্যকায়, তৃতীয়কে কাটমুণ্ড ও কন্যাকে পাটন দান করেন। ইহার দুই শত বৎসর পরেও পৃথ্বীনারায়ণ এই তিন পৃথক রাজ্য দেখিতে পান, এবং পৃথক ভাবে ইহাদিগকে পরাজিত করেন। ভাটগাও কাটমুও ও পাটনের মল্লরাজগণ হিন্দুছিলেন বটে কিন্তু তাহারা বৌদ্ধ ধৰ্ম্মকে প্রশ্রয় দিতেন এমন কি বৌদ্ধ মন্দির সকলে বিস্তর দান করিতেন। এবং এখনও নেপালের চতুর্দিকে এই মল্লরাজগণের অনেক কীৰ্ত্তি দেখিতে পাওয়া যায়। পৃথ্বীনারায়ণ যখন নেপাল আক্রমণ করেন তখন এই মল্লরাজগণ পরম্পরের সহিত গৃহ বিবাদে মন্ত ছিলেন। পৃথ্বীনারায়ণ যখন নেপাল উপত্যক আক্রমণ করেন তখন পাটনে রোমান কাথলিক মিশন ছিল। তথাকার of (Father Guiseppe) or Go Hz& Assotta দর্শন করিয়াছিলেন তাহা লিপিবদ্ধ করিয়াছিলে , তাহা হইতে আমরা পৃথ্বীনারায়ণের নেপাল বিজয় ব্যাপারের অনেক কথা জানিতে পারিয়াছি। সেই সময়ে পাটনের সিংহাসনে জ্ঞানপ্রকাশ নামে একজন সাহসী ব্যক্তি অধিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু তাহাকে সদারগণ কিছুদিন পরে সিংহাসনচ্যুত করে। এবং সিংহাসন লইয়। অনেক বাকবিতণ্ড উপস্থিত। অবশেষে তাহারা পৃথ্বীনারায়ণকে পাটনের সিংহাসন অধিকার করিবার জন্য আহবান করে এবং তিনি কনিষ্ঠ ভ্রাতা দলমদন শাহকে পাটনের শাসনকৰ্ত্ত করিয়া প্রেরণ করেন । দলমদন পাঠনের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হইলে পর পৃথ্বীনারায়ণের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেন এবং স্বাধীন ভাবে পাটনে রাজত্ব করিতে থাকেন। কিন্তু দলমদনও অবশেষে সর্দার এবং প্রজাগণ কর্তৃত রাজ্য হইতে বিতাড়িত হন। পাটনের প্রজাগণ তেজনরসিংকে রাজা মনোনীত করে । ইতিমধ্যে ভাটগাওএর রাজা রণজিং মল্পের পাটন এবং কাটমুণ্ডের রাজাগণের সহিত যুদ্ধ উপস্থিত হয় তিনি কুক্ষণে আপনার সাহায্যাৰ্থ পৃথ্বীনারায়ণকে আহবান করিলেন। পৃথ্বীনারায়ণ এই গৃহ বিবাদের সুযোগে নেপাল অধিকার করিবার আশায় সত্বর রণজিং মল্লের সাহাযপর্থে উপস্থিত হইলেন। অচিরে রণজিং মল্পের পৃথ্বীনারায়ণের দুরভিসন্ধি নেপালে গোখা বিজয় 〉o > বুঝিতে থাকি রহিল না। তিনি কাটমুগু ও পাঠনের রাজাদিগের সহিত সন্ধি স্থাপন করিয়া এই সাধারণ শত্রর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করিলেন । - পৃথ্বীনারায়ণ চতুর্দিকে পৰ্ব্বতোপরি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র छूर्ण নিৰ্ম্মাণ করিয়া চতুপার্শ্বস্থ ভূস্বামীগণকে নানা উপায়ে হস্তগত করিয়া গোর্থ সেনাদলের সহায়তায় মল্ল রাজাগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করিলেন। পৃথ্বীনারায়ণ প্রথমেই কীৰ্বিপুর আক্রমণ করিলেন। কীৰ্ত্তিপুর নেপাল উপত্যক দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত-এবং উপত্যক হইতে প্রায় ৩০০ ফিট উচ্চ-কীৰ্ত্তিপুর পাটনের রাজার অধীন ছিল। পৃথ্বীনারায়ণ কীৰ্ত্তিপুর আক্রমণ করিলে তাহারা পাটনরাজের নিকট সাহায্য ভিক্ষা করে, পাঠনরাজ সাহায্যাৰ্থ অগ্রসর হইলেন না—তখন কীৰ্ত্তিপুরবাসিগণ পাটনের পদচ্যুত রাজা জ্ঞান প্রকাশের সাহায্য ভিক্ষা করে তিনি সসৈন্তে পৃথ্বীনারয়ণকে আক্রমণ করিলেন এবং এই যুদ্ধে গোর্থীগণ সম্পূর্ণ পরাভূত হইল। কীৰ্ত্তিপুরবাসিগণ কৃতজ্ঞতার চিহ্ন স্বরূপ জ্ঞান প্রকাশকে তাহাদিগের রাজা মনোনীত করিল। পৃথ্বীনারায়ণ কীৰ্ত্তিপুর অবরোধ করিয়া রহিলেন এবং চতুর্দিকের শস্ত ধ্বংস করিয়া কীৰ্ত্তিপুরে দুর্ভিক্ষ উপস্থিত করিবার চেষ্টা করিলেন কিন্তু তাছাতে কৃতকাৰ্য্য হইলেন না। অবশেষে এই ঘোষণা করিলেন যে ব্যক্তি, পুরুষ স্ত্রীলোক বা বালক কীৰ্ত্তিপুরবাসীদিগকে কোন প্রকারে সাহায্য করিবে তাহাকে তৎক্ষণাং হত্যা করা হইবে। রোমান কাথলিক আচাৰ্য্য এইরূপ অপরাধী কত ব্যক্তির মৃতদেহ পথপাশ্বে দোদুল্যমান দেখিয়াছেন। পৃথ্বীনারায়ণ চক্রান্তকারী ব্রাহ্মণদিগের সহায়তায় অনেক সর্দারগণকে হস্তগত করিলেন এবং তাহাদিগের পরস্পরের সহিত মনোমালিন্য উপস্থিত করিতেও সক্ষম হইলেন এবং দ্বিতীয়বার কীৰ্ত্তিপুর আক্রমণ করিলেন। এবারেও কীৰ্ত্তিপুরবাসিগণ বীরত্ব সহকাৰে আত্মরক্ষা করিল পৃথ্বীনারায়ণ কিছুই করিতে পারিলেন না। পৃথীনারায়ণের এক ভ্রাতা শুরপ্রতাপ যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হন। তিনি রোমান কাথলিক মিশনের ডাক্তারের চিকিৎসায় আরোগা লাভ করেন। ইহার কয়েক মাস পরে পৃথ্বীনারায়ণ তৃতীয়বার কীৰ্ত্তিপুর আক্রমণ করেন।