পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

براي لا " ভগ্ন পেনেট পুনঃস্থাপিষ্ঠ করিবার জন্য বুদ্ধেক্ষ মস্তকের উপরিভাগ সমতল করিয়া এবং অৰ্দ্ধাঙ্গুল স্থল রাখিয়া একটী রেখার দ্বারা তাহ মস্তক হইতে স্বতন্ত্র করা হইয়াছে ; কিন্তু তথাপি তেত্রিশ কোটা দেবতাপূজক হিন্দুস্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতার, বৌদ্ধ মস্তক এককালে বিলুপ্ত করিবার সাহস হয় নাই। যাহা হউক কিছুকাল এই ভাবে অতীত হইবার পর, বোধ হয় কোন হিন্দু রাজা অথবা কোন ধনী উপাসক ইহাতে তৃপ্ত না হইয়া সমস্ত পাষাণ দওটাকে শিবলিঙ্গ করিয়া তাহার পাদমূলে প্রদীপের আকারে ইষ্টকময় নুতন পেনেট নিৰ্ম্মাণ করিয়া দেন। ইষ্টকময় অষ্টকোণ বেষ্টনী এই সময়ের নিৰ্ম্মিত বলিয়া বোধ হইল। এই শিবলিঙ্গ বনখণ্ডেশ্বর বলিয়া প্রসিদ্ধ। লিঙ্গমুৰ্ত্তি দেখিয়া আমাদের কৌতুহল অধিকতব বৃদ্ধি পাইল এবং বটেশ্বরের প্রাচীন ইতিবৃত্ত জানিবার জন্য আগ্রহ জন্মিল । আমরা কয়েকদিন ধরিয়া স্থানীয় প্রাচীন অধিবাসী ও মন্দিরের অধিকারিগণের নিকট সন্ধান হইয়া নিকটস্থ যমুনার পরপরবর্তী গ্রামবাসীদিগের মুখে শুনিয়া এবং বটেশ্বেরের চতুৰ্দ্দিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া যতদূর অনুসন্ধান করিতে পারিয়াছি তাহা নিম্নে লিপিবদ্ধ করিলাম । এক্ষণে যথায় যমুনা প্রবাহিত হইতেছে পূৰ্ব্বকালে ইহার তিন মাইল উত্তর পূর্ব দিক দিয়া প্রবাহিত হইত। এখনও পৰ্ব্বতাকার মৃন্ময় উপকূলভাগ ও লালুকাময় শুষ্ক নদীগর্ভজন্ত তাহার প্রমাণ প্রদর্শন করিতেছে। যমুনার বর্তমান উপকূলও এইরূপ মৃৎপাহাড়ের আলিবন্দে বদ্ধ। ইহার পূৰ্ব্ব পাশ্বন্থ সমুন্নত ভূমির উপর বটেশ্বরের পুরাতন লোকালয় অবস্থিত । এক্ষণে ভগ্ন অট্টালিক, প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নস্ত,প, শুষ্ক কৃপ, পরিত্যক্ত গৃহশ্রেণী ইহার পূর্ব ঐশ্বৰ্য্য কুচিত করিতেছে। নিয়ের ক্ষবিস্তীর্ণ সমতলভূমি যাহা এক্ষণে মেলাস্থল ও কৃষিক্ষেত্ররূপে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ যমুনার পূর্ব ও আধুনিক প্রবাহ রেখার মধ্যবর্তী নিম্ন ভূভাগ নিবিড় কাননে পরিবৃত ছিল এবং তাহার স্থানে স্থানে ভালগণের বসবাস ছিল । সরলমতি পনবাসী ভীলগণ এই বনের অধিষ্ঠাতা দেবতা বনখণ্ডেশ্বরের পূজা করিয়া পরিতৃপ্ত হইত। পরে কোন সময় রাজপুতবংশীয় জনৈক সর্দার রাজরাওয়াৎ বনবাসী ভৗলগণকে জয় করিয়া এই প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭। ১০ম ভাগ । সকল প্রদেশ ও তৎসঙ্গে যমুনার পশ্চিম তীরবর্তী পটেশ্বর আপনার অধিকারভুক্ত করেন। তদবধি এখানে ধীরে ধীরে আর্য্যনিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজুরাওয়াতের বংশধরগণ সপ্তদশ পুরুষ ধরিয়া এখানে রাজত্ব করিবার পর চৌহান বংশীয় ভিগুরাজ কুটুম্বন শেষ রাওয়াংকে পরাস্ত করিয়া এই স্থল ও ইহার চতুৰ্দ্দিকস্থ খণ্ডরাজ্য সকল দখল করিয়৷ বসেন। তাছার অধিকৃত রাজ্য ভাদা ওয়ার নামে প্রসিদ্ধ হয়। কুটুম্বনের সমসাময়িক এবং তাহারই স্ববংশীয় জনৈক চৌহান সর্দার যমুনার পশ্চিম পারস্থ ভালনিবাস ধ্বংস করিয়া স্বরাজা স্থাপন করেন। বর্তমান মৈনপুরীর রাজা রামপ্রতাপ সিং বাহাদুর র্তাহারই বংশোদ্ভব । চৌহান সর্দার ভাদাওয়ার রাজের পরম ৭ঙ্কু ছিলেন। এক সময়ে উভয়েরই পাটরাণী অন্তঃসত্ত্ব হইলে উভয় বন্ধ এইরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে একজনের পুত্র ও অপরের কন্যা হইলে তাহারা বৈবাহিক সম্বন্ধে বদ্ধ হইবেন । দৈবক্রমে যথাসময়ে উভয়েরই কন্য। সস্তান হইল। চৌহান সর্দার প্রথমেই বন্ধুকে কন্সার জন্ম সংবাদ দান করলেন । ভাদাওয়াররাজের চৌহান সর্দারের বৈবাহিক হইবার ইচ্ছা বলবর্তী ছিল ; তিনি ক্ষুণ্ণ হইলেন। কিন্তু কি জানি কি কৌতুকচ্ছলে বন্ধুকে বলিয়া পাঠাইলেন র্তাহার পুত্র সন্তান হইয়াছে। এ রহস্ত কিন্তু ক্রমে গুরুতর হইয়া দাড়াইল । ংবাদ চতুর্দিকে রাষ্ট্র হইয়া পড়িল। রাজকুমারের জন্মোৎসবে প্রজাবৰ্গ মহোৎসবের অনুষ্ঠান করিল। হঠাৎ কৌতুকচ্ছলে যাহা রাজার মুখ দিয়া প্রচারিত ছিল দিন দিন তাঙ্গ সত্যের আকার ধারণ কবিয়া বাজাকে মহাচিন্তাকুল করিয়া তুলিল। রাজা প্রজাবৰ্গ ও বন্ধুর নিকট এবং জনসমাজে চা প্রতিভ ও অপদস্থ হুইবার ভয়ে একটী সত্য গোপন রাখিবার জন্য ক্রমাগত অসত্যের আশ্রয়গ্ৰহণ করিতে বাধ্য হইলেন । তিনি অতি সাবধানে রাজকন্যাকে রাজপুত্রের ষ্ঠায় পালন করিতে ও কুমারোচিত শিক্ষা দিতে লাগিলেন । ছদ্ম কুমারের নাম হইল বদন সিং। সন্তানদ্বয়ের বিবাহের বয়ঃক্রম হইলে চৌহানরাজ বন্ধুকে তাঙ্গর পূৰ্ব্ব প্রতিশ্রুতি স্মরণ করাষ্টয়া দিলেন, বিবাহের দিন ধার্য্য হষ্টল। বদন সিং বরবেশে সজ্জিত হইয়া চৌহানরাজকুমারীকে বিবাহ করিয়া গৃহে আনিলেন। চৌহান দুহিত।

২য় সংখ্যা । ] ভাদাওয়ার রাজ্যে এবস্তপ্রকার বন্দিনী হইলেন । এইরূপে প্রতারিত হইয়া রাজপুতানী প্রতিশোধ লইবার অবসর অন্বেষণ করিতে থাকেন। একদা তিনি কোন সুযোগে স্বীয় দুঃখকাহিনী লিপিবদ্ধ করিয়া গোপনে পিতার নিকট পাঠান। এই পত্র পাঠ মাত্র চেঞ্জান সর্দার ক্রোধে অধীর হন এবং ভাদ (ওয়ার রাজ ও জাল জামাতার মস্তকসহ কন্যাকে ফিরাইয়া আনিবার জন্য রাজপুতবাহিনী লইয়৷ যমুনার পশ্চিমকৃলে আসিয়া উপস্থিত হন। হটাৎ এইরূপ আক্রমণ ভয়ে ভীত হইয়া অপ্রস্তুত কুটুম্বন স্বীয় ইষ্টদেব বটুকেশ্বর শিবের অর্চনায় মন সমর্পণ করিলেন। ভক্তবৎসল মহাদেব সেই রাত্রে স্বপ্নযোগে রাজাকে অভয়দান করিলেন এবং তাহার কথাই সত্য হইবে বলিয়া আশ্বাস দিলেন। পরদিন কুটুম্বন বন্ধুভাবেই চৌহান সর্দারকে বলিয়া পাঠাইলেন তাহার শত্রভাবে আসিবার প্রয়োজন নাই, বদন সিং তাহার পুত্র এবং তিনি প্রতারিত হন নাই। চৌহান সর্দার বলিলেন তাহার জামাত সৰ্ব্বসমক্ষে যমুনা স্নান করিয়া সিক্ত বসনে তাহাকে প্রণাম করিয়া যাইবেন তবে তিনি সস্তুষ্ট হইয়া সসৈন্তে স্বরাজ্যে প্রত্যাবর্তন করিবেন। রাজা তাহাতেই সন্মত হইলেন। বদন সিং রাজাজ্ঞা শ্রবণ করিয়া চিন্তাকুল হইলেন। বদন সিং নাম লইলে কি হইবে, যুবরাজের পরিচ্ছদে রাজপুত্র বলিয়া পরিজ্ঞাত হইলে কি হইবে, স্নান করিয়া নদীবক্ষ হইতে সৰ্ব্বসমক্ষে উঠিয়া যাইতে হইবে বলিয়া পূর্ণযেীবন রাজকুমারীর সৰ্ব্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিল। তাঞ্জন্ম ছদ্মবেশের কথা, পিতার অবিমূৰ্য্যকারিতা ও কলঙ্কের কথা, নিরপরাধিনী সরলা বালিকা ও বন্ধু কল্প্যার প্রতি অবিচার এবং প্রবঞ্চনার কথা ভাবিয়া সকলের সম্মুখে তাছাকে ও তাছার পিতাকে উপহাসাম্পদ হইতে হইবে মনে করিয়া এবং অচিরেই তাহার জন্মভূমি নরশোণিতে প্লাবিত হইবে এই আশঙ্কায় রাজকুমারী দুঃখে, ক্ষোভে এবং লজ্জায় মৃতপ্রায় হইলেন। নয়নের জলে তাহার বক্ষ ভাসিয়া গেল। তিনি ঘৃণার সহিত শিরস্তাণ ভূতলে নিক্ষেপ করিয়া ঘনকৃষ্ণ কেশরাশি উন্মুক্ত করিয়া দিলেন এবং রাজকুমারীর উপযুক্ত বসনে স্বীয় কুসুম-সুকুমার অঙ্গ আবৃত করিয়া উন্মত্তার স্থায় অন্তঃপুর হইতে নিস্ক্রান্ত হটলেন । চৌহান ছহিতা তাহার বটেশ্বর ও বনখণ্ডেশ্বর। >ミs মুখে আত্মবিসর্জনের স্থির সঙ্কল্প লক্ষ্য করিয়া বুঝিলেন আজ ইনি যমুনায়ান করিতে নহে কিন্তু কালিন্দীর কোলে বাপ দিয়া চিরশান্তি লাভ করিতে চলিয়াছেন। সমদুঃখিনী চৌহান দুহিতার হৃদয় সহানুভূতিতে গলিয়া গেল। তিনি হাস্যমুখে আসিয়া তাহার হাত ধরিলেন। উভয়ের চোথে চোখে পরামর্শ স্থির হইয়া গেল এবং রাজ কন্যা ও রাজবধু । পদব্রজে যমুনাভিমুখে অগ্রসর হটলেন। যমুনার উপকূল পুষ্পমালায় সুশোভিত ও লোকে লোকারণ্য হইয়াছে। সকলেই রাজজামাতার স্নান পৰ্ব্ব দেখিবার জন্য উদগ্রীব। এমন সময় যুবতীদ্বয়কে স্বর্গ হইতে সদ্য অবতীর্ণ দেবকল্লার মত আসিতে দেখিয়া সকলে ভক্তি ও বিস্ময়ের সহিত আকাশ, নদী, কানন প্রতিধ্বনিত করিয়া “মাতাজীকি জয়” বলিয়া উঠিল। কুলকামিনীর আজন্ম সংস্কার কোথায় যাইবে ? যুবতীদ্বয়ের মুখে দৃঢ় সংকল্পের ভাব প্রকটত থাকিলেও সহসা লজ্জা ও সঙ্কোচ আসিয়া যেন উভয়কে ঘিরিয়া ফেলিল। আলুলায়িত কুন্তলা ব্রীড়াবনত বদন রাজবালদ্বয় অবিলম্বে যমুনাগর্ভে বাপ দিলেন। একজনের করে অপরের কর দৃঢ়বদ্ধ। চৌহান রাজ দেখিলেন যাহার জন্য এত উদ্যোগ করিলেন তাহার সেই প্রাণাপেক্ষ প্রিয় কন্যাও যমুনায় আত্মবিসর্জন করিলেন। তাহার বদন মণ্ডল পাণ্ডুবৰ্ণ ধারণ করিল কিন্তু পরক্ষণেই তিনি রোষে, ক্ষোভে, মহাসমরের আয়োজন করিবার জন্ত গাত্ৰোথান করিলেন । এমন সময় যুবরাজ বদন সিং সহস্তে বদনে যমুনা গর্ভ হইতে উত্থিত হইলেন, তাহার বামে রাজবধু চৌহান দুহিতা, দক্ষিণ কক্ষে শিবলিঙ্গ । কন্যায় যেস্থানে ডুবিয়া ছিলেন তথায় দুইটা শিবলিঙ্গ দিল। প্রথম বটুকেশ্বর দ্বিতীয় ব্ৰহ্মলাল। কুটুম্বন দুহিতা নদী গর্ভে প্রবেশ করিবামাত্র বটুকেশ্বর প্রসন্ন হইয়া বলিলেন “পুত্র, তুমি কি চাও?” কুমারী বলিলেন “পিতা” আমি যে আপনার কথা !" বটুকেশ্বর বলিলেন “আমার বাক্য মিথ্যা হইবার নহে, তুমি অদ্য হইতে পুত্রই হইলে । এক্ষণে আমি আর নদীগর্ভে বাস করিব না আমায় উপকূলে স্থাপিত কর।” ব্ৰহ্মলাল উঠিলেন না সুতরাং উপকূলের নিয়ে অৰ্দ্ধমগ্ন এবং বর্ষাকালে সম্পূর্ণ জলমগ্ন হইয়াই রছিলেন। বটুকেশ্বর পরে বটেশ্বরের অধিষ্ঠাতা দেবতা বলিয়া বটেশ্বর --