পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ 5) ο নাথ নামে পূজিত হইতে লাগিলেন। বটেশ্বরনাথ জাগ্রত হইয়া উঠিলে ভীলদেবতা বনখণ্ডেশ্বর নিম্প্রভ হইয় পড়িলেন। এই গল্পটি মন্দিরাধিকারী ও পুজারীদিগের স্বকপোল কল্পিতই হউক অথবা ইহার মূলে ঐতিহাসিক সত্য জড়িত থাকুক ইহা যে সাধারণ বটেশ্বরবাসীদিগের মধ্যে সুপরিচিত এবং এতদ্বারা সরলবিশ্বাসী গ্রাম্য নরনারীর মধ্যে যে বটেশ্বরনাথের মাহাত্ম্য স্বপ্রসারিত হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই। এইরূপে ইতিহাসের সহিত উপন্যাস মিশ্রিত হইয়া ভারতে কত পুরাণ ও উপপুরাণের স্বষ্টি হইয়াছে কে তাহার নির্ণয় করিবে ? - ভাদাওয়ার দুহিতা বটেশ্বরনাথের প্রসাদে এইরূপে যুবরাজের আকারে পরিবর্তিত পরম শৈব এবং মহাদেবের বরে অজেয় হইয়া উঠিলেন। রাজা কুটুম্বনের মৃত্যুর পর তিনি প্রবল প্রতাপে ভাদাওয়ার রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন। তাহার প্রৌঢ়াবস্থায় বাদশাহ জাহাঙ্গীর দিল্লীর সিংহাসনে অধিরূঢ় ছিলেন। এই সময় যমুনার পশ্চিম তীরবর্তী জনৈক রাজপুত রাজার সহিত র্তাহার মনোমালিন্ত হয়। তিনি কালিঞ্জর ও বটেশ্বর তাহার রাজ্য বলিয়া দাবী করিয়া বসেন। প্রকৃতপক্ষে যমুনার পুৰ্ব্ব কুলবর্তী স্থান ভাদাওয়ার এবং পশ্চিম কূলবৰ্ত্তী রাজ্যান্তভূক্ত ছিল। কিন্তু যমুনার এই উভয় তীরবর্তী স্থানই বটেশ্বর বলিয়া খ্যাত ছিল সুতরাং রাজা বদন সিং তাহার ইষ্টদেবতার আশ্রিত তীর্থ পরহস্তগত হইতে দিতে কিরূপে সন্মত হইতে পারেন ? তিনি বাহুবলে তাহ দখল করিয়া রাখিলেন। বিপক্ষ রাজা দিল্লীর বাদশাহের নিকট বিচারপ্রার্থী হইলেন। বাদশাহ কালিঞ্জর ও বটেশ্বর যমুনার কোন কুলে অবস্থিত প্রথমে জানিবার জন্য আজ্ঞা দিলেন। এই রাজাজ্ঞার সংবাদ পাইয় অদ্ভূত কৰ্ম্মা বদন সিং যমুনার প্রবাহ পথ তিন মাইল পশ্চিমে সরাইয়া দিয়া ঐ দুই স্থানকে ইহার পুৰ্ব্ব কুলবর্তী করিয়া দিলেন। ইতিপূৰ্ব্বে যে নারাঙ্গীবাগ ও ভাসমান সেতুর উল্লেখ করা হইয়াছে তিনি সেই স্থান হইতে যমুনার পথ পরিবর্তিত করিয়া দেন এবং তাহাতে বাদশাহের দরবারে তাহারই জয়লাভ হয়। সেই সময় হইতে অস্থাবধি যমুনার পূর্ব ও বর্তমান প্রবাহ পথের মধ্যবর্তী ভূমিভাগ উভয় বটেশ্বর এবং “বদনবাহ” বলিয়া উক্ত - প্রবাসী—জ্যেষ্ঠ, ১৩১৭ । [ ১০ম ভাগ । হইয়া থাকে। কথিত আছে যমুনাকে এইরূপে ৩ શઃ পশ্চিমে প্রবাহিত করিলে ভক্তবৎসল বটেশ্বরনাথ ও ব্রহ্মলাল স্বেচ্ছায় নদীর পূর্ব উপকূলে ও তন্নিয়ে স্ব স্ব স্থানে আসি৷ বিরাজ করিতে থাকেন। ক্রমে বটেশ্বরনাথের মন্দির, তাছার উভয় পাশ্বে বহু শিবালয়, সম্মুথে বহু বিস্তীর্ণ বিশ্রান্তঘাট, এবং সৰ্ব্বশুদ্ধ একোত্তর শত শিবলিঙ্গ স্থাপিত হইল। ইহাদের অধিকাংশ সরাউগী বণিকদিগের কীৰ্ত্তি। এই সরাউগী বণিকদিগের প্রধান পুরুষ ইন্দ্রভূযন (ইন্দ্রভূষণ ) সরাউগ একজন সিদ্ধ যোগী ছিলেন । তিনি যোগবলে অনেক অলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করিতে পারিতেন। তাহার সহিত অনেক অদ্ভুত গল্প জড়িত হইয় তাহাকে এখানে দেবতার আসন দান করিয়াছে। তাহার রাজপ্রাসাদতুল্য অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ এখনও বর্তমান রহিয়াছে। উহা সমুন্নত ভূমির উপর নিৰ্ম্মিত এবং ইষ্টকময় । এক্ষণে গোসাইদিগের দ্বার অধিকৃত। ইহার অনতিদূরে এবং বটেশ্বরের মধ্যে সৰ্ব্বোচ্চ ভূমির উপর আর একটী অট্টালিকা আছে। ইহার নাম "গোসাই জী কি হাবেলী”। প্রকৃত পক্ষে ইহা একটা ক্ষুদ্র দুর্গ। দুর্গেরই মত ইহার চতুর্দিক মুদৃঢ় উচ্চ বুরুজ দ্বারা স্বরক্ষিত, ইহার প্রবেশপথও বিলক্ষণ দুর্গম । ইহাতে শত্রুর আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার উপযোগী স্থাপত্য কৌশলের অভাব নাই। কিন্তু ইহার ভিতর প্রকোষ্ঠ, প্রাচীর, ছাদ প্রভৃতি ভগ্ন হইয়া পড়িতেছে। ভিতরের এই ভগ্নদশা বাহিরের দুর্ভেদ্য প্রাচীর দেখিয়া বুঝা যায় না। এই প্রকাও অট্টালিকার মধ্যে একমাত্র অধিকারী জনৈক ব্রাহ্মণ এবং তাহার কয়েক জন ভৃত্য ! আমরা সেই অতি প্রাচীন ভগ্ন দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করিয়া অতি কষ্টে ও সাবধানে উভয় হস্ত দ্বারা প্রাচীর স্পর্শ করিতে করিতে অন্ধকার পথের ভিতর দিয়া দ্বিতলে পরে ত্রিতলে এবং শেষে সৰ্ব্বোচ্চ বৃক্লজের উপর উঠিলাম। এই স্থান হইতে চতুর্দিক লক্ষ্য করিয়৷ দেখিলাম কেবল কৃষিক্ষেত্র, বন, জঙ্গল এবং মধ্যে মধ্যে লোকালয়। পল্লীপথগুলি অত্যন্ত বন্দুর এবং পাৰ্ব্বত্য পথের মত। প্রকৃতির রুক্ষ কঠোর ভাবই প্রবল ; কেবল যমুনার উপকূলশোভী মন্দিরশ্রেণী এবং বিশ্রাস্তুঘাট নয়নাভিরাম ! এই দুর্গের পূর্ব অধিকারী এবং দুর্গ নিৰ্ম্মাত৷ ছিলেন গোসাই সারদাপুরী। তিনি যোগী এবং মহাত্মা ংখ্যা । ] ছিলেন। তাহার বহু শিষ্যের মধ্যে বাসুদেব পুরীই তাহার প্রিয় ছিলেন এবং সারদা পুরীর তিরোভাবের পর তিনিই দুর্গাধিকার ও গুরুর যাবতীয় বিষয়ের অধিকার করিয়া বসেন। বামুদেব পুরী গুরুর পার্থিব বিষয়ের অধিকার পাইলেন বটে কিন্তু সংযমী সারদা পুরীর সদগুণের অধিকারী হইতে পারেন নাই। তাহার পরিণামে বাসুদেব লব্ধধন বিনষ্ট করিয়া অল্প বয়সেই কাল কবলে পতিত হন। সারদা পুরীকে যে প্রাঙ্গনে সমাধিস্থ করা হইয়াছিল বামুদেবকে তাহার পাশ্বেই সমাধিস্থ করা হয়। আমরা গুরু শিষ্যের সমাধি দেখিলাম। বাস্বদেবের পর এই দুর্গের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় হইয়া পড়িয়াছিল এবং বোধ হয় ইহার স্বত্বাধিকারীও আর কেহ জীবিত ছিল না। এক্ষণে এই পরিত্যক্ত ভগ্ন দুর্গ পূৰ্ব্বোক্ত ব্রাহ্মণের অধিকারে আছে। অধিকারীর নাম "টুধু”। টুধু পূৰ্ব্বে বাস্থ্যকর ও নর্তক ছিল ; এক্ষণে পেঢ়াবস্থায় ৰটেশ্বরনাথের মন্দিরের ও অন্তান্ত দেবালয়ের উপস্বত্ব স্বরূপ বার্ষিক ৩০০০ টাকার শত অংশীদারের মধ্যে একজন। আমরা এই স্থান হইতে বিশ্রাস্তঘাট ও বটেশ্বরনাথের মন্দির দেখিতে গেলাম। মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবেশ করিতেই চতুর্দিকে অসংখ্য ঘণ্টা দেখিতে পাইলাম। শুনিলাম যাহাদের কোন মানসিক থাকে তাহারা প্রার্থনা পূর্ণ ইষ্টলে এখানে ঘণ্টা বাধিয়া যায়। এইরূপে দেবালয় প্রাঙ্গনে নিম্ববৃক্ষ শাখায় প্রাচীর গাত্রে, রজুতে বদ্ধ ক্ষুদ্র বৃহৎ ঘণ্টার সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে। কেহ কেহ শিবের মস্তকে বিবিধ বস্ত্রের শিরস্ত্রাণ বাধিয়া দেয় এবং রাজা, বণিক ও ধনী উপাসকগণ চাউলের অঞ্জলি দিয়া শিবলিঙ্গকে ঢাকিয়া ফেলিতে চেষ্টা করেন। চাউল দ্বার বিগ্রহকে আবৃত করিতে পারিলে মহাপুণ্য সঞ্চয় হয় বলিয়। এখানে লাকের বিশ্বাস। জনশ্রুতি আছে যে বgরাজা পঞ্চাশ চাউল দিয়াও বটেশ্বরনাথকে ঢাকিতে পারেন নাই কিন্তু জি বদন সিং এক মণ চাউলের অঞ্জলি দিবা মাত্র বটেশ্বরনাথ তন্মধ্যে অদৃশু হইয়া যাইতেন। বটেশ্বরনাথের মন্দিরের পা েই বিশ্রাস্তঘাটের উপর হরপাৰ্ব্বতীর মন্দির। উপবিষ্ট হরের বামপাশ্বে উপবিষ্ট পাৰ্ব্বতী। মূৰ্ত্তিম্বয় স্থূলকায় এবং দর্ঘে ৩ ফুটের কম নহে। 8 বটেশ্বর ও বনখণ্ডেশ্বর । SAASAASAASAASAASAASAAMS MAMM MMMMMMMMS একথও প্লকাও পাথর কাটা মূর্তিদ্বয় গঠন করা হইয়াছে। হরের কপোলদেশ বাৰ্দ্ধক্যসূচক লোল কিন্তু নিটোল। মুখমণ্ডলের ভাব গম্ভীর, সৰ্পের ফণার দ্বারা জটাজুট মুকুটের আকারে সম্বন্ধ। হরের মূৰ্ত্তি দেখিলে হিন্দুস্থপতির প্রশংসা না করিয়া থাকা যায় না কিন্তু পাৰ্ব্বতীর মূৰ্ত্তি স্থলত্বে ও দৈর্ঘ্যে হরের উপযোগী হইলেও শিল্পকলায় স্থপতির গৌরব রক্ষা করিতে পারে নাই। গড়মুক্তেশ্বরে ( গণমুক্তেশ্বর ) এইরূপ হরপাৰ্ব্বতীর যুগলমূৰ্ত্তি দেখিয়াছি। সেখানেও পাৰ্ব্বতীর মুষ্টি ভাল হয় নাই। হিন্দুস্থপতি যে অননুকরণীয় শিল্পচাতুৰ্য্যে ধ্যানীবুদ্ধ ও শিবমূৰ্ত্তি গঠন করিতে পারেন অত্যুচ্চ কল্পনা থাকিলেও নারীর সাকার মূৰ্ত্তি গঠনে বোধ হয় তদ্রুপ দক্ষতা প্রকাশ করিতে পারেন না। পাশ্চাতা স্থপতিকে তথায় জয়লাভ করিতে দেখা যায়। পুরুষের অনুসন্ধানে প্রাচ্যের এবং প্রকৃতির অনুসন্ধানে পাশ্চাত্যের অত্যধিক প্রবণতাই কি ইহার কারণ ? যাহা হউক এই মন্দির এবং হরপাৰ্ব্বতীর মূৰ্ত্তি গোপা গুজর নামে জনৈক ধনী মহাজন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। এস্থান হইতে প্রায় দুই মাইল ব্যবধানে এইরূপ আর একটী হরপাৰ্ব্বতীর । যুগলমূৰ্ত্তি স্বতন্ত্র স্থপতি কর্তৃক নিৰ্ম্মিত হয়। কিন্তু সে মুৰ্বি এরূপ সুন্দর হয় নাই। প্রবাদ এই যে উভয় শিল্পীই আপনার কার্য শেষ হইলেই তৎক্ষণাৎ স্বৰ্গলাভ করে । হরপাৰ্ব্বতীর মন্দিরে উত্তর দক্ষিণমুখী দুইটা প্রবেশ দ্বার। পূৰ্ব্ব পশ্চিমে প্রাচীর। বিগ্রহের সন্মুখস্থ অর্থাৎ পূৰ্ব্ব প্রাচীর গাত্রে প্রস্তরে উৎকীর্ণ সূর্য্যের একচক্ররথ। স্বৰ্য্য রথি, অরুণ সারথি । এই মন্দিরের অনতিদূরে পঞ্চমুখী মহাদেবের মন্দির। বিগ্রহের নাম পঞ্চমুখেখর। আমরা এইরূপে অনেক মন্দির দেখিয়া বস্ত্রনিবাসে ফিরিলাম। পূৰ্ব্বে এই বটেশ্বরে সরাউগী বণিকগণের বাসহেতু মানপৰ্ব্বোপলক্ষে বিবিধ পণ্যদ্রব্যের ক্রয় বিক্রয়ের মেলা বসিতে আরম্ভ হয়। ক্রমে ইহা বৰ্ত্তমান আকারে পরিণত হইয়াছে। বটেশ্বরে এক্ষণে ৫০ ঘর বাজপেয়ী ব্রাহ্মণ, ২ ঘর মথুরার চৌবে, কয়েক ঘর গোঁসাই, এক ঘর মহারাষ্ট্র, ৫০ ঘর মাল্লা, ২০০ ঘর কামার এবং কয়েক ঘর মিশ্রজাতির বাস। - বটেশ্বর কিন্তু এখন আর ভাদাওয়ার রাজ্যের অন্তভূক্ত -