পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- 〉やや দুইটি উচ্চ শ্রেণীর - আমাদিগকে দেখিবামাৰই বুলি ছিল যে, আমরা ব্রিটিস রাজ্য ছাড়াইয়া তাহাদের দেশে গিয়া পড়িয়াছি। “তোমরা এখানে কি করিতেছ?” “কোথায় যাইবে ?” “আমাদের দেশে কেন আসিয়াছ ?” এই কয়েকটি প্রশ্ন তাহারা আমাদের উপর গুলির মত বর্ষণ করিল। প্রশ্নকারী ব্যক্তিদ্বয় এতকাল সৈন্ত বিভাগে কাৰ্য্য করিয়া সংপ্ৰতি বাৰ্দ্ধক্যহেতু ব্যবসায় অবলম্বন করিয়া নিরীহ জীবন যাপন করিতেছে। তাহাদের সর্ব শরীরে উদ্ধি অঙ্কিত, লজ্জা নিবারণের নিমিত্ত দেহের অতি সামান্ত অংশ বক্সে আবৃত ছিল। দড়ি দিয়া গলার সহিত এক একটি থলিয়া ঝুলানে ছিল। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়া কুকুর ও লোহার টুকরা সংগ্ৰহ করিবার অভিপ্রায়ে ইহারা বাহির হইয়াছিল। কুকুর ইহাদের পরম প্রিয় জন্তু—খুব যত্ন পূৰ্ব্বক কুকুরগুলিকে ইহারা পালন করিয়া থাকে—যখন সেগুলি বেশ হৃষ্টপুষ্ট হইয়া উঠে তখন মারিয়া খাইয়া ফেলে। এক এক থও লোহা পাইলে নাগাদের এতদূর আনন্দ হয় যে চক্ষু আনন্দাশ্রতে সিক্ত হইয়া যায়। নাগা দুইটির নিকট বিদায় লইয়া আমরা আবার অগ্রসর হইতে লাগিলাম। আমার মনে হইয়াছিল পথ ফুরাইয়৷ আসিয়াছে কিন্তু সেই বনের ভিতরে একটা খোলা জায়গায় আসিয়া দেখি সম্মুখে শৈলমাল নীল আকাশে মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া রহিয়াছে। আমাদের সঙ্গী বন্ধুবর জয়েনিং এই অঞ্চলের পথঘাট বিলক্ষণ অবগত আছেন, তাহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া বুঝিতে পারিলাম যে গন্তব্য স্থানে পহুছিতে আরো দুই ঘণ্টা বিলম্ব আছে। তৎসঙ্গে তিনি ইহাও মন্তব্য করিলেন যে, পথের দুরূহ অংশ এখনো সাম্নে রছিয়াছে। থানিকদূর অগ্রসর হইয়াই বন্ধুবরের উক্তির যাথার্থ অনুভব করিলাম। এবার আমাদিগকে চারি সহস্র তিন শত বারে খান সিঁড়ি ভাঙ্গিয়া জটিল বক্রপথে দুই হাজার তিন শত আশী ফিট উদ্ধে উঠিতে হইয়াছিল। সোপানগুলি ছাট কাটা মসৃণ পাথরের তৈরি নহে কোথায়ও একটা বৃক্ষমূল, কোনোথানে বা তিন ফুট উচ্চ একথও প্রস্তর সিঁড়ির কার্য্য করিতেছে। মাঝে মাঝে পাহাড় খুব খাড়া, কোথায়ও বা মুড়ি বিছানো পঞ্চ দিয়া চলিতে পা পিছলাইয়া যায়। এই দুর্গম পথ দিয়া চলিতে চলিতে আমরা এমন স্থাপাইয়া প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭ । [ ১০ম ভাগ । পাচ মিনিট অন্তর আমাদিগকে । পড়িতেছিলাম যে প্রত্যেক বিশ্রাম করিতে হইয়াছিল। পথিমধ্যে আর একদল নাগার সহিত আমাদের দেখা হইল । ইহারা অল্পবয়স্ক যুবক, গঠন বলিষ্ঠ ও সুন্দর, দা ও বর্ষা প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া শিকার করিতে যাইতেছিল। বালক বয়সে নাগাদের চেহারা বেশ স্বন্দর থাকে, বয়স যতই বাড়িতে থাকে তাহদের আকৃতি ততই রুগ্ম ও কুৎসিৎ হইয়া পড়ে। গন্তব্য স্থানে পহুছিবার কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে আমরা একটি । নাগা-পল্লীতে প্রবেশ করি। নাগাদের কুটারগুলির তালপত্রের ছাউনি আমাদের সর্বপ্রথম দৃষ্ট আকর্ষণ করে। । স্থানে স্থানে তালের কুঞ্জ দেথিয়া আমরা আনন্দ লাভ করিতেছিলাম। পল্লীর মধ্য দিয়া আমরা যখন যাইতে ছিলাম, তখন দুই পাশ্ব হইতে কুকুর, শূকর ও উলঙ্গ শিশুর পাল বিচিত্র রব কবিতে করিতে আমাদের দিকে আসিতে- ' ছিল। পথিপাশ্বে আমরা একটি মন্দির দেখিয়াছিলাম, সেখানে অলঙ্কারে ভূষিত এক দেববিগ্রহ রহিয়াছে। | উক্ত পাৰ্ব্বতা পল্লী ছাড়াইয় একটু উপরে উঠিয়াই আমরা গন্তব্য স্থানে উপনীত হইলাম । নাগা রাজের প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্র সচিব মহাশয় উভয়ে আমাদিগের অভ্যর্থনা করেন। এই পররাষ্ট্র সচিব মহোদয় সদালাপী বিশিষ্ট ভদ্রলোক, মুখে একটিও দাত নাই। তিনি আমাদের সহিত বাক্যালাপ সময়ে, আবেগভরে কখনো আমাদের হাত কখনো বা কোটের বোতাম ধরিয়া টানাটানি করিতেছিলেন । ইহাতে আমাদের আপত্তির এইমাত্র কারণ ছিল যে, নাগার কালেভদ্রে স্নান করে বলিয়া তাহাদের শরীর হইতে অসহ্য দুৰ্গন্ধ বাহির হইয়৷ থাকে। বংশনিৰ্ম্মিত একখানি মঞ্চের উপর বসিয়া আমর জলযোগ করিলাম। বিদেশী অতিথিদের বাসের নিমিত্ত প্রত্যেক নাগার ঘরে একটা করিয়া মঞ্চ থাকে। পাহাড়ের গাত্রে শূন্তে এই মঞ্চগুলি তৈরি করা হয়—কোনো কোনো মঞ্চ হইতে নিম্নবৰ্ত্তী স্থান একশত পঞ্চাশ ফিটেরও বেশী নীচে—কোনো রকমে কেছ পড়িয়া গেলে তাহার মৃত্যু মতি। মহাশয় আমাদিগকে কহিলেন যে, ২য় সংখ্যা । ] আমাদের নিকট হুইস্কি মদ্য ছিল। রাজা, রাজ-প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্র সচিব মহোদয়গণ আমাদের নিকট হইতে উক্ত মদ্য চাহিয়া নিয়া পান করিলেন। অবিমিশ্র হুইস্কি পান করিবার সময়ে তাহাদের একটুও কষ্ট বোধ হয় নাই। নাগার খুব মদ্যপায়ী। তাহারা ভাড়ে ভাড়ে জলের মত মদ্য পান করিয়া থাকে। জলযোগ ও বিশ্রামের পর আমরা নাগাদের রাজধানীর বড় বড় বাড়ীগুলি দেখিতে গেলাম। এক একটা বাড়ী এমন প্রকাও যে দূরবর্তী সমতল ক্ষেত্র হইতে দেখিতে পাওয়া যায়। গৃহগুলির একটা বিশেষত্ব এই যে, মাঝ থানের খুটিগুলি ছাদ ভেদ করিয়া প্রায় দশ ফিট উচু হইয়া রহিয়াছে। ছাদের দ্যায় খুটিগুলিও তালপত্র দ্বারা আচ্ছাদিত । গৃহের ভিত্তি মাটি দিয়া তৈরি করা হইয়াছে। আমরা প্রথমে যে বাড়ীটিতে প্রবেশ করি ঐ বাড়ীর প্রাচীর শিকার-লব্ধ পশুচৰ্ম্মে, হরিণ মহিষের শৃঙ্গে, পক্ষীর চঞ্চুতে সজ্জিত ছিল, এতদ্ভিন্ন দেওয়ালের গাত্রে কয়েকখানি ছবিও টাঙ্গানো ছিল। ইহার পর আমরা যে বাড়ীটি দেখিতে গেলাম সেটার দৈর্ঘ্য অনেক শত গজ হইবে—সেখানে বিবাহিতা নারীরা বাস করেন—সেখানে আমরা প্রবেশ করিতে পাই নাই— দূর হইতে গৃহের মধ্যে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত কতকগুলি বাক্স দেখিয়াছিলাম। আমরা স্ত্রীলোকদের ধান ভানিবার ঘরটি দেখিয়াছি। সেই ঘরের এক পাশ্বে একথানা টেবিল পড়িয়াছিল—কোনো প্রকাও বৃক্ষের গুড়ি খোদিয়া বহু পরিশ্রমে এই বিশ ফিট লম্বা, তিন ফিট চওড়া, তিন ফিট উচ্চ টেবিল তৈরি করা হইয়াছে। সে থান হইতে আমরা নাগা যুবকদের বাসভবনে যাই, তথায় ফাপা কাঠের নিৰ্ম্মিত ১৮ ফিট লম্বা একটা ঘণ্টা দেখিতে পাই ; বিশেষ বিশেষ পৰ্ব্বদিনে কাঠের তৈরি একটা হাতুড়ি দিয়া এই ঘণ্টাটাকে পেটানো হয়—এই ঘণ্টার ধ্বনি এমন গম্ভীর যে অনেক মাইল দূর হইতেও ইহার শব্দ শোনা যায়। আমরা যখন যুবকদের গৃহে ছিলাম তখন সহসা রাষ্ট্রসচিব তথনো দর্শনযোগ্য একটি বিশেষ দৃশু আমাদের দেখা হয় নাই। এই বলিয়া তিনি আমাদিগকে লইয়া একটি গৃহে প্রবেশ করিলেন। - ংকলন ও সমালোচন—নাগাদের দেশে ভ্রমণ । >と? তাহার ইঙ্গিতে আমরা কয়েকটি তাকের দিকে চাহিয়৷ শ্রেণীবদ্ধ মাথার খুলি দেখিতে পাই! আমরা একেবারে অবাক হইয়া গেলাম! আমরা তাক কয়েকটির উপর শৃঙ্খলাক্রমে সজ্জিত ১৭০টা মাথার খুলি দেখিয়াছিলাম। এই খুলিগুলি ংগ্রহের ইতিহাস অতিশয় ভীষণ। প্রতিবেশী প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিদের সহিত প্রকাশুযুদ্ধে কয়েকটা পাওয়া গিয়াছে, অপরগুলি নিরপরাধ ব্যক্তিদের মাথার খুলি ! খুলি আনিয়া দিতে পারিলে নাগা যুবকেরা তাহাদের রাজার নিকট হইতে সম্মানস্থচক উল্কি-চিহ্ন পাইয়া থাকে বীর বলিয়া ঐ সন্মান পাইবার লোভে নাগা যুবকেরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া নরহত্যার নিমিত্ত বনে বনে মাঠে মাঠে ঘুরিতে থাকে । মনে যুবক সমতলক্ষেত্রবাসী এক নিরীহ কৃষকের অনুসরণে প্রবৃত্ত হইল। কৃষকের সহিত নাগার কোনো শক্রতা নাই। কৃষক নিঃশঙ্কচিত্তে ভোর বেলা তাহার ক্ষেতে কাজ করিতে আসিল-সে কেমন করিয়া বুঝিবে যে রক্তপিপাসু এক নাগা যুবক তাহার গতিবিধি লক্ষ্য করিয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ ফিরিতেছে ? সন্ধা হইয়া আসিল—কৃষক তাহার কার্য শেষ করিয়া অরণ্যের মধ্যবৰ্ত্তী সংকীর্ণ পথ দিয়৷ অস্পষ্ট আলোকে বাড়ী ফিরিতেছিল, এমন সময়ে সহসা জঙ্গলের ভিতর পত্রের মৰ্ম্মর ধ্বনি শুনিয়া সে চমকিয়াউঠিল—পরমুহুর্তেই একটা ভীষণ আঘাত পাইয়া ভয়বিহ্বল হইয়া থমকি দাড়াইল - নিমেষমধ্যে দ্বিতীয় একটি আঘাতে হতভাগ্য ভূতলশায়ী হইল! এবংবিধ বৰ্ব্বর নরহত্যাকে এখনো নাগার গৌরবের কার্ষ্য বলিয়া মনে করে। যেমন করিয়া হউক কোনো যুবক একটা নরমুণ্ড লইয়া নগরে ফিরিয়া আসিলে তাহাকে সন্মান দেখাইবার জন্ত নৃত্যগীত ও ভোজ দেওয়া হইবেই হইবে। বীরত্ব-ব্যঞ্জক উল্কি-চিহ্ন প্রাপ্ত কোনো নগা যুবককে এক ভদ্রলোক প্রশ্ন করিয়াছিলেন—“তুমি এ যাবৎ কোনো মানুষকে বধ করিয়াছ ?” সে উত্তর করিল—“না, আমি সবেমাত্র এক বৃদ্ধ ও একটি ছদ্ধপোন্য শিশুকে খুন করিয়াছি !” - এখানকার এই চিত্রশালিকায় করুন কোনো নাগা বেশীক্ষণ দাড়াইবার