পাতা:প্রবাসী (দশম ভাগ, প্রথম খণ্ড).pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> a.o. এবং সংক্রামক পীড়ার স্বষ্টি হয় নাই। তাঁহার এমন আশ্চৰ্য্য ক্ষিপ্রতার সহিত সেই সমস্ত দেহ স্থানান্তরিত এবং উদরসাং করিয়াছিল যে সেই ভীষণ যুদ্ধ অবসানে শৃগালগণকেও রণভূমিতে যাইয়া মাংসাভাবে ক্রনন করিতে করিতে ইতস্তত: বিচরণ করিতে হইয়াছিল! ব্যাটটিলার (Batetela) নরভুকগণ এই নর-মাংস-ভোজন ব্যাপারে এতদূর উন্নতি লাভ করিয়াছে যে সমগ্র ব্যাটটিলা দেশটি তন্ন তন্ন করিয়া খুজিলেও একজন পলিতকেশ, খঞ্জ, অথবা অন্ধকে দেখিতে পাওয়া যায় না, এমন কি, পিতার দেহে জরার কোনো চিহ্ন দেখিবামাত্র পুত্র তৎক্ষণাৎ তাহাকে ভক্ষণ করিয়া নিদারুণ জরার হাত হইতে নিষ্কৃতি প্রদান করে ! কোনো অপরাধীর প্রাণদণ্ডের আদেশ হইলে নরভুকগণ, শিকারী কুকুরগণের মধ্যে নিক্ষিপ্ত শশকবৎ, মুহূৰ্ত্ত মধ্যে তাহাকে ছিড়িয় খণ্ড খণ্ড করিয়া ভক্ষণ করে। তাহার মাংস লইয়া এমনই টানাটানি পড়িয়া যায় যে কেহই, অগ্রে তাহাকে হত্যা করিয়া পরে মাংস খাইবার প্রতীক্ষা করে না ; কারণ, তাহার আশঙ্কা থাকে যে, হত্যা করিতে তাহার যতক্ষণ লাগিবে ততক্ষণে অপরাপর নরভুকগণ সমস্ত মাংসই গ্রহণ করিবে, মুতরাং সে একটুকরাও পাইবে না। Captain Hinde ইহাদের সম্বন্ধে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৌতুহলোদ্দীপক গল্প প্রকাশ করিয়াছেন ; আমরা তন্মধ্যে দুইটী এখানে উল্লেখ করিতেছি – একদা ইহাদের একজন শাস্ত্রী পাহারা দিবার সময়ে ঘটনা বশতঃ তাহার পিতাকে গুলি করিয়া মারিয়াছিল। কিন্তু পাহারা ছাড়িয়া যাইয়া তৎক্ষণাৎ তাহার মৃত পিতার মাংস ভোজন করিতে অসমর্থ হওয়াতে, সে ঘোরতর অসন্তোষ প্রকাশ করিয়াছিল। দ্বিতীয় গল্পটি একটি ভয়ানক শোকাবহ ব্যাপার, একদা এক যুবা ব্যাসনৃগো (Basongo) Toto Captain Hindeৱ হেপাজতে ছিল ; একদিন মধ্যাহ্ন ভোজনের সময়ে সে Captainএর নিকট তাহার ছুরিকা চাহিয়া লইল, এবং অবিলম্বে শিবিরের পশ্চাৎভাগে যাইয় তাহার একটি ছোট বালিকার (ক্রীতদাসী) মস্তক কাটিয়া আনিল, পরে রন্ধন করিবার সময়ে একজন সৈনিক উহা দেখিতে প্রবাসী—জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭। [ ১০ম ভাগ পাইয়া Captainকে জানায় ; অতঃপর তাহাকে দুইমাস। শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়া রাখা হয়, কিন্তু এই দুই মাসেই তাহার অবস্থা এত শোচনীয় হইয়া পড়িয়াছিল যে তাহাকে দেখিলে সময়ে সময়ে জীবিত কি মৃত বলিয়া সন্দেহ হইত। তখন তাহাকে শৃঙ্খলমুক্তি করিয়া সতর্ক করিয়া দেওয়া হয় যে সে যেন আর কখনো নর-মাংস-ভোজন না করে। একপক্ষ অতীত হইতে না হইতেই একদা একজন হান্স (Hansa) সৈন্ত পুনরায় তাহাকে Captainএর নিকট উপস্থিত করিয়া বলিল যে সেনা-নিবাসের ভিতরে এবং বাহিরের ছেলেপেলেগুলিকে সে থাইয়া ফেলিয়াছে। একটি থ’লে টাঙান ছিল, তাহ পরীক্ষা করিয়া দেখা গেল যে তাহার মধ্যে একটি শিশুর বাছ এবং পা রহিয়াছে। আরো অনুসন্ধান করিয়া জানা গেল যে সেই পক্ষে সেনানিবাস হইতে ৩৪টি শিশু অদৃগু হইয়াছে, সকলেরই প্রতীতি জন্মিল যে উক্ত ব্যাসনৃগো সর্দারই শিশুগুলিকে ভক্ষণ করিয়াছে। অতঃপর তাহার সংশোধনের আর উপায় নাই দেথিয় তাহাকে গুলি করিয়া মারা হইয়াছিল। Captain Hinde বলেন যে তাহার অধীনস্থ নরভুক কয়েদী এবং ভৃত্যগণ প্রায়ই তাহার নিকট অভিযোগ করিত যে তাহারা অত্যন্ত মাংস-প্রিয়, অথচ শিবিরে ছাগ এবং পক্ষী যথেষ্ট নাই সুতরাং তাছাদের মধ্যেই একজন অলস ভূতাকে ভক্ষণ করিবার জন্ত তাহারা কাতরভাবে প্রার্থন করিত। ইহ প্রতিপন্ন করিতে পারা যায় না যে নরভূকগণ অধঃপতিত জাতি। কারণ লিভিংষ্টোন (Livingstone) সাহেব Manyemaগণের স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য সম্বন্ধে সাক্ষা দিয়াছেন। বিশেষতঃ, ইছার প্রচুর প্রমাণ আছে যে আফ্রিকার এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে নর-মাংস ভোজী জাতিসমূহ,-পশু বা পক্ষীর মাংসভোজী জাতিসমূহ অপেক্ষ অল্প নিষ্ঠুর এবং রক্তপিপাস্থ, এবং তাহার স্ত্রী এবং সন্তানের প্রতি যথেষ্ট স্নেহ প্রকাশ করে। এখন, নিরামিষভোজিগণ, সুসভ্য মাংসভোজিগণকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে পারেন যে নর-মাংস-ভক্ষণ করিতে । র্তাহাদের আপত্তি করিবার কারণ কি ? যে যুক্তিদ্বারা র্তাহারা পশু অথবা পক্ষীর মাংস-ভক্ষণকে সমর্থন করেন, - তাহার গলায় । ২য় সংখ্যা । ] সেই যুক্তিবলেই নরমাংস-ভোজনকে দৃঢ়তর রূপে সমর্থন করা যায়। ইহাতেও ত শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, অধিকন্তু ইহার অনুকূলে বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত এবং প্রচলিত কিম্বদন্তী অাছে। আসল কথাটি এই যে মনুষ্যের স্বাভাবিক বুদ্ধিই এই নরমাংস-ভোজনের একান্ত বিরোধী। কারণ, তাহার দ্যার আকৃতি প্রকৃতি-সম্পন্ন যে-সমস্ত জীবের সহিত তাহার সহানুভূতি এবং আত্মীয়তা স্থাপিত হইয়াছে, তাহাদের মাংস-ভক্ষণ করিতে তাহার প্রবৃত্তি হয় না। এই জন্তই ভ্রমণকারিগণ নরমাংসাশিগণের অমানুষিক খাদ্য সম্বন্ধে অতি অশ্রদ্ধার সহিত বর্ণনা করিয়া থাকেন। যখন মনুষ্য মনুষ্যেতর জীবের সহিত মনুষ্যের হার আত্মীয়তা অনুভব করিতে পারে, তখন এই স্বাভাবিক জ্ঞান বা প্রবৃত্তিই, শুধু নরমাংস কেন, সৰ্ব্ব প্রকার মাংস-ভক্ষণেরই বিরোধী হইয় পড়ে। কিন্তু দুঃথের বিষয় এই যে আফ্রিকার অসভ্য নরভূকগণ মনুষ্যের সহিত ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা তদূর উপলব্ধি করিতে পারিয়াছে, স্বসভ্য ইউরোপীয়গণ পশুপক্ষীদের সহিত তদপেক্ষ অধিক আত্মীয়তা উপলব্ধি করিতে এখনো সমর্থ হন নাই! নরমাংস-ভোজন ক্রমে ক্রমে তই কমিয়া আসিতেছে, পশু ও পক্ষীর মাংস ভোজনও তৎসঙ্গে সেই পরিমাণে কমিয়া আদিতেছে, ইউরোপের সুসভ্য মাংসভোজী জাতিসমূহ যেরূপ আফ্রিকার নরমাংস ভোজীদিগের নরমাংস-ভোজন ক্রমেই বন্ধ করিতেছেন, নিরামিষভোজিগণও উক্ত সভ্য মাংসভোজিগণকে মাংস ভোজনে তদ্রুপ প্রতিনিবৃত্ত করিতেছেন। হী । মৃত্যুবিষয়ক নুতন তথ্য। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসক ডাক্তার ফেলিক্স রেনোর | (Dr. Felix Regnault) arz f“Tz toz ztH সকলেই মৃত্যু-বীজ নিজ নিজ শরীরে ধারণ করিতেছেন। স্বযুসন্ধানে জানা গিয়াছে যে ২০ বৎসরের কমে কোন রোগেই কাহারও মৃত্যু ঘটে না। সাধারণতঃ লোকের শ্বিাস যে এক বৎসরই একটি রোগীর মৃত্যুর পক্ষে যথেষ্ট সময়, এমন কি কেহ কেহ সময়ে সময়ে হঠাৎও মারা পড়ে। ংকলন ও সমালোচন—মৃতু্যবিষয়ক নূতন তথ্য । > q > - - এ কথা সত্য যে শিশুর কয়েক মাসের মধ্যেই মারা পড়িতে পারে কিন্তু সাধারণতঃ পূৰ্ণবয়স্কদের সকল রকম মৃত্যুই ক্রমে ক্রমে ও অল্পে অল্পে ঘটিয়া থাকে। শিশুদের মৃত্যু প্রায়ই অপঘাত হেতুক অথবা কোনও যন্ত্রের জন্মগত দৌৰ্ব্বল্য হইতেই ঘটিয়া থাকে। শতকরা প্রায় পচানব্বই জন পরিণত-বয়স্ক লোকের শরীরেই কোনও না কোনও সাংঘাতিক রোগবীজ সংক্রামিত হইয়াছে। যদিও এখন তাহারা অনুভব করিতে পারিতেছেন না কিন্তু ভবিষ্যতে তাছাই কর্কট রোগ (Cancer) বহুমূত্র প্রভৃতি কোনও না কোনও মারাত্মক রোগরূপে প্রকাশিত হইবে। ডাক্তার রেনো (Dr. Regnault) বলেন যে মৃত্যু প্রায় সকল সময়েই ( অপঘাত মৃত্যু বাদ দিলে) কোনও না কোনও বিশেষ রোগ হইতেই ঘটিয়া থাকে। চিকিৎসা যতই সুন্দর রূপে সম্পন্ন হউক না কেন, অতি সামান্ত রোগও আরোগা হওয়ার পর একটি না একটি বিশেষ যন্ত্রকে দুৰ্ব্বল করিয়া রাখিয়া যায়। যন্ত্রটি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট ন হইলেও অন্ততঃ উহার আত্ম-রক্ষার ক্ষমতা অনেকটা কমিয়া যায়। এইরূপে প্রত্যেকেরই বৃদ্ধ বয়সে দেখা যায় যে তাহার কোনও না কোনও যন্ত্র তাহার অন্যান্ত শারীর যন্ত্র অপেক্ষ দুৰ্ব্বল। এই দুৰ্ব্বল যন্ত্রটিই তাহার মৃত্যুর কারণ হইয়া দাড়ায়। অত্যন্ত অধিক বয়স পর্য্যন্ত বাচিয়া থাকিলেও যুগপৎ সকল যন্ত্রের ক্ষয়ে কাহারও মৃত্যু হয় না; কোনও একটি বিশেষ যন্ত্রের ক্ষয়েই মৃত্যু হইয়া থাকে। কাহারও শ্বাস যন্ত্র, কাহারও মূত্র যন্ত্র, কাহারও যকৃৎ, কাহারও বা মস্তিস্কের ক্ষয় হইতে দেখা যায়। এই যন্ত্রক্ষয় বহুদিন পূৰ্ব্ব হইতেই আরম্ভ হইয়া থাকে। এখন প্রশ্ন এই যে একটি যন্ত্র অন্যান্য যন্ত্র অপেক্ষা সহজে ক্ষয় হয় কেন ? চিকিৎসকেরা বলেন যে ঐ যন্ত্রটি পূৰ্ব্বে । কোনও না কোনও সময়ে আক্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিল এবং তাঙ্গর ফলে এত সহজে অকৰ্ম্মণা হইয়া পড়িয়াছে । যন্ত্রটি রোগমুক্ত হইলেও আর পূর্বাবস্থা প্রাপ্ত হয় না। একটি কল ( Machine ) যত ভাল করিয়াই মেরামত করা যাউক না কেন কিছুতেই ইহা পূৰ্ব্বতন অবস্থা প্রাপ্ত হয় না। কলের সেই অংশটি ১৯২০ বৎসর ক্রমান্বয়ে অতি মৃন্দরন্ধপে কাজ করিলেও অন্যান্ত অংশ অপেক্ষা