পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ নিজের কাছে নিজে লজ্জিত হইল, তবু হৃদয়ের ভাবকে পরিবর্তিত করিতে পারিল না । জ্ঞানদা সে যাত্রা অনেক কষ্টে সাম্‌লাইয়া গেলেন। দিন-কয়েক তাহার নিজের এবং বাড়ির সকলের দুর্ভোগের সীমা রহিল না, কিন্তু ক্রমে অবস্থা ভালর দিকে গড়াইতে লাগিল, আত্মীয়-স্বজন সকলে একটু হাফ ছাড়িবার অবকাশ পাইল । রোগিণীর সেবা করিতে করিতে সকলেরই শরীর মনের ক্লাস্তি একেবারে চরম সীমায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল, আর কিছু দিন চালাইতে হইলে, কাহারও আর সাধো কলাইত না । নৃপেন্দ্রবাবুর বন্ধুবান্ধবের অভাব ছিল না, কিন্তু আত্মীয় বলিতে কলিকাতায় কেহ ছিল না । দেশেও র্যাহার ছিলেন, তাহার। আত্মীয়তার সুবিধাটুকু প্রচুর পরিমাণে উপভোগ করিতে চাহিতেন, কিন্তু আত্মীয়তার কোনো দায় ঘাড়ে করিতে একেবারেই অনিচ্ছুধ ছিলেন । জ্ঞানদার আত্মীয়দের সঙ্গে কোন যোগই ছিল না, দ্বিতীয় বরি বিবাহ করার অপরাধে কেহ আর তাহার নামই মূপে অমিত না, সুতরাং তাহাদের নিকটে কেহ কিছু প্রত্যাশা করিত না । অথচ সাহায্যের এখন একান্ত প্রয়োজন। নৃপেন্দ্রবাবুর পক্ষে একলা পারিয়া ওঠা অসম্ভব । যামিনী এ সকল কার্য্যে একেবারে অনভ্যস্ত, একল রোগিণীর শয্যাপার্শ্বে বসিয়া থাকিতেও তাহার ভয় ভয় করে, আর মিহির ত সকল কাজের বাহির । আয়৷ কিসমতিয়া খাটিতে খুব পারে, রাত জাগিতেও তাহার আপত্তি নাই, কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে একজনকে থাকিতে হয়, কারণ সে ঔষধপত্রের নাম পড়িতে পারে না, ঘড়িও নিভুল ভাবে দেখিতে পারে না । প্রথম দু-একদিনের মধ্যেই নৃপেন্দ্রবাবু হায়রান হইয়৷ পড়িলেন । প্রতাপ বিকালে পড়াইতে আসিত, সম্ভব হইলে সকালেও একবার আসিয়া গৃহিণীর খোজ লইয়া যাইত। যামিনীকে দেখিতে পাইত, তবে কথা বলিবার সুযোগ ঘটিত না। কিন্তু এই চোখে দেখিতে পাওয়াটুকুর অপার আনন্দ কাহাকেও বুঝাইয়া বলিবার ক্ষমতা তাহার ছিল না। হয়ত ভাষায় ইহা বুঝাইয়া দিবার সাধ্য কাহারও নাই। যে ইহা অহভৰ করিয়াছে, সেই শুধু বুঝিতে মাতৃ-খণ ఫిసి পারবে, প্রথম যৌবনে প্রথম ভালবাসার পাত্রীকে শুধু চোখে দেখিতে পাওয়াই কতখানি। ঐটুকুর ভিতর দিয়া কি অপূৰ্ব্ব সার্থকত যে জীবনকে প্লাবিত করিয়া দেয়, আকাশ বাতাস আলোককে কি মধুময় করিয়া তোলে, তুচ্ছতম মাহষের জীবনকেও কি মহিমময় বলিয়া বোধ করায়, তাহা বুঝাইবার ভাষা আজও কি হৃষ্ট হইয়াছে ? প্রতাপ মৰ্ম্মে মৰ্ম্মে অতুভব করিত, শিরায় শিরায় তাহার আনন্দের প্লাবন বহিয়া যাইত । জ্ঞানদার অমুথের তৃতীয় দিনে সকালে আসিয়৷ দেখিল, নীচের খাইবার ঘরে নৃপেন্দ্রবাবু চা থাইতেছেন, যামিনী পাশে দাড়াইয় তাহাকে চ ঢালিয়া দিতেছে। বেল তখন সাড়ে আটটা বাজিয়া গিয়াছে। ছোট্ট র পিছন পিছন প্রতাপকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া নৃপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “এই যে আমুন, বস্থন ।” প্রতীপ চেয়ার টানিয়া বসিয়া বলিল, “উনি কেমন ছিলেন রাত্রে ?” নৃপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “মন্দ না, আস্তে আস্তে প্রোগ্রেস করছেন, তবে শুশষ ঠিক-মত হওয়া একান্ত দরকার, পান থেকে চুন খসলেই মহ বিপদ । আমার ত তিন দিন রাত জেগে যা অবস্থা হয়েছে দেখতেই পাচ্ছেন । বাড়িতে দ্বিতীয় একটি এমন মাহুষ নেই যার উপর এ রেস্পন সিবিলিটি আমি দিতে পারি।” যামিনীর গালের কাছট একটু লাল হইয়া উঠিল । মায়ের সেবা যে তাহাকে দিয়া বিশেষ কিছু হইতেছে না ইহাতে সে অত্যন্তই লজ্জিত ছিল, কিন্তু এ ত্রুটির সংশোধন তাহার নিজের সাধ্যায়ত্ত ছিল না । ভয়ে সত্যই তাহার হাত-পা কঁাপিত, জ্ঞানদার মুখের দিকে তাকাইতে-সুদ্ধ তাহার ভরসা হইত না । কেবলই মনে হইত এখনই কি একটা বিপদ তাহার মাথার উপর ভাঙিয়া পড়িবে - সে নীরবে চা ঢলিয়াই চলিল, নৃপেন্দ্রবাবুর পেয়াল৷ দ্বিতীয়বার ভরিয়া দিয়া আর এক পেয়ালা চা প্রস্তুত করিয়া নীরবেই প্রতাপের দিকে ঠেলিয়া äिल । - প্রতাপ চ্যুকাইয়া উঠিল। শেভাগাক্রমে পত্তাপুৰী কেহই তাহার দিকে তাকাইয়া ছিলেন না, মা-হুইলে ।