পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- রামচন্দ্র ও গুহক যতীন্দ্র পটুয়ার অঙ্কিত পটের এক অংশ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হইতে চলিয়াছে। এখনও চেষ্টা করিলে ইহাদিগকে অবলুপ্তি হইতে রক্ষা করা যাইতে পারে। কিন্তু আর বিন্দুমাত্রও বিলম্ব করিলে তাহ অসম্ভব হইয়৷ পড়িবে। সৰ্ব্বশেষে এখন চিত্রশিল্পের কথা বলি। বাংলার নিভৃত পল্লীগ্রামের দৈনন্দিন জীবনে চিত্রকলার যে-সকল ব্যবহার সাধারণতঃ পাওয়া যায়, তাহা তিন-ভাগে বিভক্ত করা যাইতে পারে —প্রথমত, ‘পটুয়া-জাতীয় লোকের পুরুষানুক্রমিক প্রথানুসারে অঙ্কিত লম্বা লম্বা চিত্রপট ; দ্বিতীয়তঃ, পল্লীগ্রামের মেয়েদের অঙ্কিত আলিম্পলা ও প্রাচীরচিত্র ; এবং তৃতীয়তঃ, মাটির ঘোড়া ও পুতুল এবং কাঠের পুতুল ইত্যাদির উপর চিত্রাঙ্কন। এই তিন প্রকার চিত্রের দৈনন্দিন অজস্র ব্যবহারে বাংলার . পল্পীজীবন এককালে কি অতুল সৌন্দর্ঘ্যের অভিব্যক্তিতে পরিপূর্ণ ছিল, এবং বর্তমান বাংলার শহরের ভ্রান্তশিক্ষা-প্রসূত কৃত্রিম ও প্রাণহীন আদর্শ এখনও যে-সকল সুদূর পল্লীতে পৌছিতে পারে নাই, সেখানে পল্লীজীবন এখনও যে কি অতুল সৌন্দর্য্যের অভিব্যক্তিতে পরিপূর্ণ আছে, তাহ শিক্ষিত ও অদ্ধশিক্ষিত শহুরে বাঙালীর অভিজ্ঞতা ও ধারণার অতীত। বাংলার নিরক্ষর সরল পল্লীবাসী স্ত্রীপুরুষগণের অস্তরে বিশ্বের স্বষ্টির আনন্দরসের নিবিড় দৈনন্দিন অনুভূতি ও তাহদের অস্তরে অনুভূত পরব্রহ্মের সেই সহজ নিৰ্ম্মল আনন্দের সহজ সরল অভিব্যক্তি এই বিচিত্র ছন্দোবদ্ধ বর্ণ-সন্নিবেশকুপে বাংলার মৃদুর নিভৃত পল্লীতে পল্লীতে এখনও যে-পরিমাণে আত্মপ্রকাশ করিতেছে, পুথিবীর অন্য কোনো দেশে সেরূপটি নাই বলিয়। আমি বিশ্বাস করি। বর্ণ-সঙ্গীতের ( colour music) এই অসাধারণ প্রতিভা বাংলার পল্লীর স্ত্রীপুরুষের চরিত্রকে যুগের পর যুগ স্থমার্জিত করিয়া বাংলার প্রাচীন সংকৃষ্টিকে একটি অতুলনীয় মধুর ও গৌরবময় রূপ দিতে?