পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ বাংলার রসকল-সম্পদ Σ Σ Σ দাড়িতে বাড়িতে দেখাইয় এবং তৎসঙ্গে রামলীলাপটের, কৃষ্ণলীলাপটের, শক্তি পটের ও যমপটের কাহিনী স্বরচিত ‘তি-কবিতায় সহজ ও সরলভাবে বিবৃত করিয়া এবং সুললিত স্বরে তাহ আবৃত্তি করিয়া গাহিয়া গাহিয়া বিস্তর রাজগার করিয়৷ বেড়াইত । সম্প্রতি আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার ও শহুরে শিক্ষার প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে ইহার চাহিদা এবং ইহার গুণগ্ৰাহিত বাংলার গ্রাম হইতে বিলুপ্ত হইয়া ষাইতেছে এবং তাহার সঙ্গে সঙ্গে অনুপম শিল্পকলা-নিপুণ এই গ্রাম্য পটুয়াদের অন্নসংস্থান ং ওয়াও দায় হইয় পড়িয়াছে । চাহিদার অভাবে বাধ্য হইয়। ইহাদের মধ্যে বেশীর ভাগ লোককেই পট আঁকা ও পট-দেখান ব্যবসা ছাড়িয়া জনমজুরের ব্যবসা গ্রহণ করিতে হইয়াছে । ইহা ছাড়া ভারত-ইতিহাসের ও বাংলার ইতিহাসের প্রহেলিকাময় আবর্তনে হিন্দুর শিল্পশাস্থে অসাধারণ ব্যুৎপন্ন এই সুনিপুণ চিত্রকরগণ এখনও হিন্দুদের পূজার জন্য দেবদেবীর ছবি অশকার ও মাটির প্রতিম গড়িবার কাজ করায় ব্যাপৃত থাকা সত্ত্বেও হিন্দু সমাজের গণ্ডী হইতে বিতাড়িত হুইয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ঘৃণা বলিয়া বিবেচিত হইতেছে এবং এই দুই ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের সীমান্তপ্রদেশে অনশনে ও অৰ্দ্ধাশনে অতি দুর্ভাগ্যময় ও দীনতাময় জীবন যাপন করিতেছে । সামাজিক নিদারুণ নিপীড়ন সত্ত্বেও ইহারা ইহাদের যে পুরুষানুক্রমিক রসকলা-সম্পদ সযত্বে চচ্চ ও বহন করিয়া আনিয়া বর্তমান বাংলাকে দান করিয়াছে, তাহ অমূল্য ও অতুলনীয় এবং জগতের রসকলার আসরে ইহা যে একটি শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করিবে তাহ নিঃসন্দেহ । ইহাও নিঃসন্দেহ যে, ইহাদের রসকল!-পদ্ধতি অতি প্রাচীন ভারতের প্রাগ-বৌদ্ধ-যুগের আদিম রসকল!-পদ্ধতির অবিকল-প্রবাহিত বিশুদ্ধ পরম্পরার অভ্রষ্ট ও সপরিবর্তিত রূপ-ধার। ভারতের অন্যান্য প্রদেশে সেই অতি প্রাচীন প্রাগ-বৌদ্ধযুগের চিত্রকলা-পরম্পর তাহার আদিম ধারার বিশুদ্ধত অক্ষুণ্ণ রাখিয়া এখনও বাচিয়া থাকিতে সমর্থ হয় নাই। কিন্তু বাংলার প্রতিভা যে সেই অসাধ্য-সাধনে সক্ষম হইয়াছে, বাংলার দীন-দুঃখী পটুয়াগণের চিত্রকলা তাহার জীবন্ত প্রমাণ । # ‘মুদ্রারাক্ষস প্রভৃতি প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থসমূহে যে ‘চিত্ৰলেখা গুলির ও যমপট ইত্যাদি চিত্রপটের ও তাহাদিগের চিত্রকর ও প্রদর্শকদিগের ভূরি ভূরি উল্লেখ পাওয়া যায়, সেই চিত্রকরগণ যে ইহাদেরই পূৰ্ব্বপুরুষ ছিলেন এবং সেই সকল চিত্ৰলেখা ও চিত্ৰপট যে ইহাদের পূৰ্ব্বপুরুষদেরই তুলিকাস্ট অতুল রূপ-সমৃদ্ধিতে বিভূষিত ছিল তাহাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ হইতে পারে না এবং পাল-যুগে বিখ্যাত ‘নাগ-পদ্ধতি-পন্থী চিত্রকর ধীমান ইহাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন বলিয়া অনুমান যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। কারণ এখনও ইহারা পটে নাগচিত্র-সুশোভিত মনসাদেবীর প্রতিকৃতি অঙ্কন করিতে অভ্যস্ত । আজকাল সাধারণ লোকে ইহাদিগকে “পটুয়া" নামে অভিহিত করিলেও ইহারা আপনাদিগকে প্রাচীন সংস্কৃত চিত্রকর।’ নামেই অভিহিত করিয়া থাকে এবং ইহার যে প্রাচীন ভারতের চিত্ৰলেখা অঙ্কনকারী চিত্রকরদের বংশসম্ভৃত, ইহার একটি আশ্চৰ্য্য প্রমাণ এই যে, বৰ্ত্তমান হিন্দুসমাজে সাধারণ লোকের কথা দূরে থাকুক সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদের মধ্যেও চিত্র আঁকার প্রক্রিয়াকে 'লেখা’ নামে অভিহিত করিবার প্রথা যদিও সম্পূর্ণ লোপ পাইয়া গিয়াছে তথাপি এই চিত্রকরগণ এই সূত্রে কখনও ‘অঙ্কন’ অথবা আঁকা’ কথা ব্যবহার করে না । পরন্তু সৰ্ব্বদাই সেই অতি প্রাচীন ‘লেখা কথাটিই আজ পর্য্যস্ত ব্যবহার করিয়া থাকে। চিত্রশিল্পকুশলতার সঙ্গে সঙ্গে তাহাদের পূৰ্ব্বপুরুষদের ব্যবহৃত পরিভাষাগুলিও ইহার যুগের পর যুগ সযত্বে বহন করিয়া আসিতেছে । এতদিন আমরা অজন্তার সুবিখ্যাত চিত্রকল!-পদ্ধতিকেই ভারতের সর্বাপেক্ষ প্রাচীন চিত্রকলা-পদ্ধতির একমাত্র অবশিষ্ট উদাহরণ বলিয়া ধরিয়া লইতাম ; কিন্তু এখন হইতে বাংলার এই নিজস্ব চিত্রকলাই সেই গৌরবময় স্থান অধিকার করিবে । ইহা ছাড়া বাংলার এই প্রাচীন চিত্রকলা-পদ্ধতির আরও যে-কয়েকটি গৌরবময় বিশেষত্ব আছে তাহা ইহাকে বিশ্বের চিত্রকলার সর্বোচ্চ আসনে বসাইবে বলিয়া আমি বিশ্বাস করি । দেশবিদেশের জন্তান্ত বিখ্যাত অংি চিত্রপদ্ধতির দ্যায় বাংলার এই নিজস্ব চিন্ত্ৰপদ্ধতি বিশ্বমানবের