পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ Sకం94 আদিম যুগের সহজ সরল ভাব, পৌরুষের ভাব, অকৃত্রিমতার ভাব এবং সজীবতা, সরলতা ও তেজস্বিতার ভাব হারায় নাই । একদিকে যেমন এই সকল গুণ ইহান্তে সম্পূর্ণরূপে বিদ্যমান রহিয়াছে তেমনি আবার এই মুক্ত ভাবের সঙ্গে সঙ্গে ইহা অন্যান্য আধুনিক মল্পিত চিত্রকলা-পদ্ধতির সমতুল অথবা ততোধিক ভাবে লাবণ্য ও ললিত্য যোজন করিতে সক্ষম হইয়াছে । অতি-বিলাসি তার, অতি-আলিস্করিক তার ও অতি-সাম্প্রদায়িকতার অথবা কোনরূপ আড়ষ্টত দোষের ছাপ পড়ে নাই । বাংলার এই অপূৰ্ব্ব চিত্রকলা একদিকে যেমন চিরপ্রাচীন তেমনি অপরদিকে আবার ইহা চিরনতম । এই চিত্রকলার ভাষার অক্ষর প্রকরণ অতি স্বল্প ও সহজ । ইহ! কেবল রেখার সতেজ, মুনিপুণ, প্রপর ৪ ভাবব্যঞ্জক প্রয়োগ এবং অল্প কয়েকটি প্রাথমিক বর্ণের অমিশ্র ব্যবহারের উপর নির্ভর স্থাপন করে। ইহার ভাষার ব্যাকরণ অতি সঙ্গজ ও অতি প্রাঞ্চল। পরিপ্রেক্ষিতের মাপকাঠির খুঁটিনাটি ও আলেছায়ার খেলাধূলার চতুরতা ও বাহুল্য মিশাইয়৷ ইহ। কখনও আপনার ব্যাকরণকে অস্থা জটিল করিয়া তুলিবার প্রয়াস করে নাই । ইহার আকার-বিদ্যাস ও বর্ণসমাবেশ ও সমগ্নয় অতি শোভন ও আমি দ্যমুন্দর । আলঙ্কারিকতার চূড়ান্ত কৌশলও যে এই চি একরগণ প্রদর্শন করিতে পারে তাহারও শ্রেষ্ঠ প্রমাণ এই সকল প্রাচীন পট হইতে পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলার এই প্রাচীন চিত্রকলায় কেবলমাত্র ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উদ্দেশ্যে রূপ-কল্পনার বিলাসিভার অযথা বাড়াবাড়ি নাই, অথচ ইহা রস-প্রাচুর্যে ভরপুর । ইছাতে অঙ্কিত মহ্যগণের আকৃতি হাবভাব সম্পূর্ণভাবে কৃত্রিমতা ও মুদ্রাদোষবিহীন এবং সাধারণ মানুষের সহজ ও জীবন্ত ভাব পরিপূর্ণ। একদিকে বাংলার এই পল্লীশিল্পীদের জীবজন্তু-অঙ্কনের ক্ষমতা যেমন অসাধারণ নৈপুণ্যের পরিচায়ক, তেমনি অপরদিকে মাহুযের অন্তরতম মনোভাবের অবিকল ব্যঞ্ছনা একমাত্র তৃলির অবলীলাময় টানে ফুটাইয়। তুলিতে ইহাদের ক্ষমতাও জগতে অদ্বিতীয় । বৃক্ষলতাদি পত্রের অঙ্কনের অতি চমৎকার ও মনোহর অীলঙ্কারিক রীতিও এই চিত্রপটগুলির ও এই ইহাতে মুদ্রাদোষের চিত্রকরদের একটি অন্যতম বিশেষ আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলায় শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-বিন্যাসের ও ভাবব্যঞ্জনার আদর্শে ধে অস্বাভাবিকতা, দুৰ্ব্বলতা, কৃত্রিমত ও অতি-কবি ভাব লক্ষিত হয়, বাংলার এই প্রাচীন চিত্র কল-পদ্ধতিতে সেই সকল দুৰ্ব্বলতা ও দোষ নাই । এই সকল চিত্রপটে একদিকে পুরুষদেহের বীরোচিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ও ভাব-ভঙ্গীর অঙ্কন-প্রণালী ও অপরদিকে নারীদেহের লীলায়িত রূপলাবণ্য-মাধুরীর বিচিত্র অঙ্কন-কৌশলের স্বভাবজাত সমাবেশ দেখিয়া অবাক হইতে হয়। অনুকরণমূলক অঙ্কনবাহুল্য বর্জন করিয়৷ ইঙ্গিতে ভাবের ও রসের পরিপূর্ণ ব্যঞ্জনাশক্তি এই সকল চিত্রপটের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ । ইহার একটি চিত্রে ও কোন রকম ভাবের অপরিস্ফুটত অথবা ধোয়াটে ধরণ নাই । চিত্রে অতি-পরিস্ফুটভাবে কাহিনী বিবৃত করিবার অসাধারণ ক্ষমতা এই চিত্রকলা-পদ্ধতি ভারতের অদিম যুগ হইতে পূর্ণ ভাবে বজায় রাখিয়া আসিতে সমর্থ হইয়াছে। রামপটে অঙ্কিত কৰ্ম্মযোগমূলক পেঞ্চপকাহিনীর ইতিহাস ও প্রাচীন ভারতের পারিবারিক জীবন-প্রণালী শক্তিপটে অঙ্কিত গভীর আধ্যাত্মিক জ্ঞানমূলক দার্শনিকের সত্য এবং কৃষ্ণপটের আধ্যাত্মিক প্রেমমূলক ‘রমান্তক ? ( romanticism )র ভাব-তরঙ্গ বাংলার এই সকল প্রাচীন শিল্পিগণ অতি সরল ও সহজভাবে সাধারণের বোধগম্য করিয়া চিত্রপটে তাহাদিগকে অসাধারণ ভাবব্যঞ্জক ও অনিন্দ্যসুন্দর রূপ প্রদান করিয়া তাহদের অদ্ভুত প্রতিভার পরিচয় প্রদান করিয়াছেন। সৰ্ব্বোপরি বাংলার পল্লীগ্রামের সরল প্রকৃতির স্ত্রী-পুরুষগণের চরিত্রের একটি অনিৰ্ব্বচনীয় ও অতুলনীয় নিজস্ব মাধুৰ্য্যরসে এই সকল চিত্রপটের রেখা, বর্ণ ও রূপকল্পন ওতপ্রেতিভাবে পরিপ্লাবিত । বাংলার এই প্রাচীন চিত্রশিল্পিগণ রসকলার সঙ্গে ধর্মের যে ঘনিষ্ট ও অটুট সম্বন্ধ তাহা কখনও ভুলিয়া যান নাই এবং তাহ মানুষের মনে অবিরত জাগাইয়া দিবার জন্য প্রত্যেক চিত্রপটের শেষভাগে যমরাজার সভায় চিত্রগুপ্তের অভ্রান্ত খাতার চিত্র ফুটাইয়া তুলিয়া এবং যমরাজার অনুশাসনে ধর্মের অন্তিম জয় ও অধৰ্ম্মের অস্তিম