পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ টাকা না পাইলে চরণকে খুন করিবে। যাহা হউক, উপস্থিত বিপদ ত কাটিয়া গিয়াছে, খুন করিলেই হইল, মগের মুল্লক কিন, ছ। স্বান করিয়া আসিয়া তাড়াতাড়ি খাইয়া চরণ হাটে চলিয়া গেল ; তামাকটুকু খাওয়ার অবসর পাইল না, বেল পড়িয়া গিয়াছে। হারুর জ্ঞর খুব বাড়িয়া গিয়াছে, চক্ষু রক্তবর্ণ হইয়াছে। হারুর কাছে পেচাঁকে বসাইয়। নিত্যকালী ছেলে দুটিকে খাওয়াইল । পরে নিজে ছেলের কাছে বসিল, পেচী ভাত লইয়া খাইল । ভাত বেশী ছিল না, যাহা ছিল পেচী কিছু থাইয়া কিছু মার জন্য রাখিল । পেচ খাইয়। ধাই ঘাটে গিয়াছে অমনি হারুর ফিট হইল। নিতাকালী একটু অন্যমনস্ক ছিল, হঠাৎ চাহিয়া দেখে ছেলের এই অবস্থ। । সে চীৎকার করিয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে পাড়ার অনেকে আসিয়া পড়িল। হাট-বার, পুরুষ মায়য কেউ বাড়ি ছিল না, মেয়েরা আসিয়া কেবল কোলাহল করিতে লাগিল। নিত্যকালী উঠানে গড়াগড়ি দিয়৷ চীৎকার করিয়া কাদিতে লাগিল। একজন দৌড়িয়া গিয়া মহেশের মাকে ডাকিয়া আনিল। মহেশের ম ঝাড়ায়, জলপড়ায় টোটক ঔষধে সিদ্ধহস্ত, কত রোগী সে যমেৰ মুখ হইতে ফিরাইয়া আনিয়াছে। সে আসিয়া প্রথমে একটা ঝাড়া দিল, তাহাতে উপকার না হওয়ায় কিছু জলপড়িয়া হারুর মুখে চোখে ঝাপটা দিল, ক্রমে হারুর চোখ নামিল ও দাত ছাড়িল, তাহার ফিট ছাডিয়া গেল। নিত্যকালী উঠিয়া তাহাকে কোলে লইল। রমণীবৃন্দ যে যাহার মত নিত্যকালীকে উপদেশ দিয়া মহেশের মার প্রশংসা করিতে করিতে ক্রমে প্রস্থান করিল। নিতাকালী ছেলেকে আর কোল হইতে নামাইতে সাহস করিল না, তাহার খাওয়াও আর হইল না সন্ধ্যা হইয়া আসিল, পেচী উঠিয়া ঘরে, তুলসী তলায়, প্রদীপ দেখাইল। রন্ধন করিবার কিছু নাই, যে-কৰ্মট ভাত ছিল তােহা . ভাইদের খাওয়াইয়া তাহাদিগকে শোয়াইল ; তারপর মায়ের কাছে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। রাইচরণ জোর পা চালাইয়া হাটের দিকে যাইতেছিল, রাস্তাঙ্গ নেপাল দুলেকে তামাক খাইতে দেখিয়া S99శు তাহার কম্বেতে কয়েকটা টান দিয়া লইল। পাশের বাড়ির মালী-বোঁ পথে দেখিয়া চরণকে ডাকিয়া একটা টক দিয়া দিল তাহার জন্য এক টাকার ধান কিনিয়া আনিতে। হাটে পৌঁছিয়া চরণ প্রথমেই গাজার দোকানের ওদিকে গেল, যদি কোন রকমে কিছু কিনিতে পারা যায়। দেখিল কয়েক জন ভলাণ্টিয়ার সার বাধিয়া শুইয়া আছে, গাজ পাইবার কোন উপায় নাই। অনেক লোক জমিয় গিয়াছে। দুই এক জন ভলাণ্টিয়ারদের মাড়াইয়াই যাইতে চেষ্টা করিয়াছে, আর সকলে তাহদের থামাইয়া দিতেছে, চরণ দেখিল গজি পাইবার কোন উপায় নাই । সে অন্য দিকে যাইতে পা বাড়াইয়াছে এমন সময় হাটের উত্তর দিকে ভীষণ গণ্ডগোল আরম্ভ হইল। মাঝে মাঝে হাট লুট হুইতেছিল ; ভলান্টিয়ারগণ উঠিয়৷ সেই দিকে ছুটিল, অনেক লোকও সেই দিকে ছুটিল, অনেকে আবার পৈতৃক প্ৰাণ লইয়। উল্ট দিকে ছুট দিল । চরণ এবং তাহারই মত বুদ্ধিমান অন্ত কয়েক জন লোক ভাবিল এই ত সুযোগ , তাহার গাজার দোকানের জানালায় উপস্থিত হইল । চরণ ভাবিল গাজা কিনিবার এমন সুযোগ আর মিলিবে না। ধান ত সব সময়েই পাওয়া যাইবে, সে এক টাকার গাজা কিনিয়া ফেলিল । ভাড়াতাড়ি গাজ কিনিয়া ভিড় ঠেলিয়া বাহির হইতে চেষ্টা করিতেছে এমন সময় এক ষণ্ডামৰ্ক-গোছের লোক দরজা ভাঙিয়া দোকানে চুকিয়া পড়িল। তাহার উদ্দেশ্য বুঝিয়া দোকানদার বাধা দিতে চেষ্টা করিতেই তাহাকে এক পদাঘাতে ফেলিয়া দিয়া যতটুকু গাজা ছিল সব কোচড়ে লইয়া লোকটা দুই লাফে বাহির হইয়া গেল। সকলে স্থা করিয়া দাড়াইয়া রহিল। দাঙ্গ নিবারণের জন্য হাটে পুলিস মোতায়েন ছিল। গুণ্ডা পলাইবার পর যখন চরণের দল বাহির হইবার চেষ্টা করিতেছে, তখন পুলিস আসিয়া তাহাদের ঘিরিয়া ফেলিল। কয়েক জন দৌড়িয়া পলাইয়া গেল, চরণের সাত জন ধরা পড়িল, সকলের নিকট হইতেই কিছু কিছু গাজ বাহির হইয়া পড়ায় তাহারাই যে অপরাধী এ-বিষয়ে পুলিসের আর সন্দেহ রহিল না। দোকান