পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীত শ্ৰীগিরীন্দ্রশেখর বসু ゲ বিভিন্ন মার্গ সম্বন্ধে শ্ৰীকৃষ্ণের মতামত গীতায় যে-সকল সাধন-মার্গ বা ধৰ্ম্ম-বিশ্বাসের উল্লেখ আছে, সেগুলি সম্বন্ধে শ্ৰীকৃষ্ণের মত সংক্ষেপে আলোচন করিতেছি। যজ্ঞ--শ্ৰীকৃষ্ণের সময়ে যজ্ঞই সৰ্ব্বাপেক্ষ লোকপ্রিয় ধৰ্ম্মামৃষ্ঠান ছিল এ কথা পূর্বে বলিয়াছি । যজ্ঞকার্য্যে নানারূপ তামসিকতা প্রবেশ করিয়াছিল। শ্ৰীকৃষ্ণ পুনঃ পুন: যজ্ঞকার্য্যে দোষ ও তাহ! নিবারণের উপায় বলিয়াছেন। ৩, ৪, ১৭ ও ১৮ অধ্যায়ে যজ্ঞ সম্বন্ধে আলোচনা আছে। ৩য় অধ্যায়ের ব্যাখ্যায় যজ্ঞের বিশদ বিবরণ দিয়াছি। এখানে পুনরুক্তি নিম্প্রয়োজন । তখনকার লোকে যজ্ঞকে সৃষ্টিচক্রের অঙ্গ বলিয়া মনে করিত ও যজ্ঞ অবশ্যকর্তৃব্য ছিল । শ্ৰীকৃষ্ণ নিজে যজ্ঞের বিশেষ ভক্ত ছিলেন বলিয়। মনে হয় না। তিনি ১৮৫ শ্লোকে বলিতেছেন, যজ্ঞ পরিত্যাগ করিবার আবশ্যকতা নাই, কারণ তাহাতে চিত্তশুদ্ধি হয়। ইহার অধিক যজ্ঞফল শ্ৰীকৃষ্ণ মানেন নাই। যজ্ঞের উপর তৎকালপ্রচলিত আসক্তি নিবারণের জন্য শ্ৰীকৃষ্ণ যজ্ঞের একটা ব্যাপক অর্থ দিয়াছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে দেখা যাইবে যে, শ্ৰীকৃষ্ণ নানা প্রকার কার্য্যকে ( ২৩-৩৩ শ্লোক) যজ্ঞ নামে অভিহিত করিতেছেন। যজ্ঞের এই লক্ষণ মানিলে সাধারণে যজ্ঞকে অবশ্যকৰ্ত্তব্য মনে করিয়াও নিঃসঙ্কোচে বৈদিক যজ্ঞ পরিহার করিতে পারিবে । শ্ৰীকৃষ্ণ দ্রব্যময় যজ্ঞ অপেক্ষা জ্ঞানময় যজ্ঞের প্রাধান্ত দিয়াছেন । তামসিকত নিবারণের জন্য ১৭শ অধ্যায়ে যজ্ঞের শ্রেণীবিভাগ দেখাইয়াছেন। শ্ৰীকৃষ্ণ যজ্ঞকে বন্ধনের কারণ বলিয়া মনে করিতেন এবং তজ্জন্যই বার-বার মুক্তসংজ্ঞ হইয়। যজ্ঞেৰ আচরণ করিতে বলিয়াছেন। শ্ৰীকৃষ্ণ যজ্ঞ সম্বন্ধে লিপ্রচলিত মত পূর্ণভাবে মানেন নাই, পরিবর্তে আকারে তাহা গ্রহণ করিয়াছেন। সংষ্ঠাস— গীতায় বহুস্থলে সংন্যাস-মার্গের বা কৰ্ম্মত্যাগের উল্লেখ আছে। পঞ্চম অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ সংন্যাসমার্গের বিশদ আলোচনা করিয়াছেন। সংন্যাসী বলিলে সাধারণতঃ বুঝায় যিনি সংসার ত্যাগ করিয়া পরিব্রজ। অবলম্বন করিয়াছেন ও যিনি সৰ্ব্বপ্রকার সামাজিক কৰ্ত্তব্য পরিত্যাগ করিয়াছেন। কৰ্ম্ম বন্ধনমূলক ও তাহ মোক্ষলাভের অন্তরায় এই ধারণার বশেই সাধক সংন্যাসমার্গ অবলম্বন করেন। শরীরধারণের জন্য যেটুকু কৰ্ম্ম নিতান্ত আবশ্যক সংন্যাসী কেবল তাহারই আচরণ করেন। জ্ঞানচর্চাই তাহার একমাত্র সাধন।। শ্রুতি, মনুস্মৃতি, শ্ৰীভাগবত ও পুরাণাদি নান হিন্দুশাস্ত্রে জ্ঞানোদয়ে সংন্যাস-মার্গ অবলম্বন করিবার উপদেশ আছে সত্য, কিন্তু শ্ৰীকৃষ্ণ দেখাইয়াছেন পূর্ণ কৰ্ম্মসংন্যাস অসম্ভব। ইচ্ছা-করি আর না-করি শরীরধাত্র সম্পর্কে নানাবিধ কৰ্ম্ম আমাদের করিতেই হয়, অতএব কৰ্ম্মত্যাগের বৃথা চেষ্ট না করিয়া কৰ্ম্মে আসক্তি ও কৰ্ম্মের ফলত্যাগই শ্ৰেয়ঃ । শ্রীকৃষ্ণের মতে আসক্তি ও ফলত্যাগে কৰ্ম্মের বন্ধন হয় না ; এই অবস্থায় শরীরই প্রকৃতির বশে কৰ্ম্ম করিতেছে এবং আত্মা নির্লিপ্তই আছে এই ধারণ জন্মে। জনকাদি কৰ্ম্ম করিয়াই সিদ্ধি লাভ করিয়াছিলেন। কাহারও স্বধৰ্ম্মত্যাগের আবশ্বত নাই। শ্রীকৃষ্ণ কৰ্ম্মসংন্যাসকে স্পষ্ট নিন্দ করেন নাই, কারণ তিনি কোনো মার্গের প্রতিই দ্বেষযুক্ত নহেন, কিন্তু তিনি কৰ্ম্মযোগকে শ্রেষ্ঠ বলিয়াছেন। শ্রীকৃষ্ণ সংন্যাসের এক অভিনব নির্বচন দিয়া তাহ অনুমোদন করিয়াছেন। কৰ্ম্মত্যাগ করিলেই সংন্যাসী হয় না ; যে কৰ্ম্মের আসক্তি ও ফলত্যাগ করিয়া নিঃসঙ্গ চিত্তে কৰ্ম্ম করে সে-ই প্রকৃত সংন্তাসী। এইরূপ সংন্যাসই শ্ৰীকৃষ্ণের অনুমোদিত । বুদ্ধিযোগ—বুদ্ধিযোগ কোন একটি বিশেষ মার্গ নহে। কৰ্ম্মপ্রধান সকল মার্গেই বুদ্ধিযোগ গ্রযোজ্য। ষ্ণুে