পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ولاo& a. 'హ్ర్ কিন্তু তাহা করিতে এতখানি চেষ্টা তাহীকৈ-ইতিপূর্বে করিতে হয় নাই। চোখ দুইটা যেন বনামূগের মত চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছে, তাহার কোন শাসন ন। মানিয়া নিজের ইচ্ছ-মত ছুটিয়া যাইতে চায় । অধিকক্ষণ ভদ্রতারক্ষা করিতে সে পারিলও না, আর একবার যামিনীর দিকে চাহিয়া দেখিল যামিনী ঠিক তাহার সামন-সামনি বসিয়াছে, চাকররা খাবার আনিতে আরম্ভ করিয়াছে, মৃদুকণ্ঠে তাহদের কি সব উপদেশ দিতেছে। মেয়েদের সাজসজ্জাও ইহার আগে প্রতাপ কোনদিন লক্ষ্য করে নাই। ইহা লইয়৷ মেসে অনেক সময় তাহাকে ঠাট্টা সহ করিতে হইত। কিন্তু সকল দিকেই তাহার পরিবর্তন সুরু হইয়াছিল। আজ সে বিশেষ করিয়াই দেখিল, যামিনী পরিপাট করিয়া চুল বাধিয়াছে, এমন স্বন্দর কবরী-রচনা প্রতাপ আগে যেন কোথাও দেখে নাই। একটি কচিপাতার রঙের ঢাকাই শাড়ী তাহার কোমল সুন্দর দেহটিকে যেন গভীর স্নেহে আলিঙ্গন করিয়া রহিয়াছে, গলায় একটি প্রবালের মাল৷ দুলিতেছে। কানে বিলম্বিত দুইটি মুক্তার দুল যেন জলদেবীর অশ্রুবিন্দুর মত টলটল করিতেছে। যামিনী এত সুসজ্জিত কেন ? নিজের ঘরে, নিত্যকার খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে এত সযত্ন সজ্জা কি সচরাচর কেহ করে ? তাহার কান গরম হইয়৷ উঠিল, সে আসিবে জানিয়াই কি ঘামিনী এতটা করিয়াছে, ভাবিতেই যেন তাহার সর্বাঙ্গে পুলকের শিহরণ খেলিয়া গেল । মূখ প্রতাপ জানিত না যে, ইহা এ বাড়ির নিত্য নিয়ম | দিনের বেলাতেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হইয়া খাইতে আসিলে জ্ঞানদার কাছে বকুনি খাইতে হইত। কিন্তু রাত্রির খাওয়াটার নাকি মৰ্য্যাদা বেশী, তাই এ সময়ে ফিট্‌ফার্টু হইয়া না আসিলে, জ্ঞানদা রাগ করিয়া ছেলেমেয়েকে টেবিল হইতে তুলিয়া দিতেন, তাহাড়ের আবার গিয়া সাজসজ্জা ঠিক-মত করিয়া আসিতে হইত। কৰ্ত্তাও নিষ্কৃতি পাইতেন না, কাজেই এ সময়ে খানিকটা বেশভূষা করা সকলেরই অভ্যাস হইয়। গিয়াছিল। মাছের yইট এক টুকরা মুখে দিয়াই মিহির চীৎকার S99áు করিয়া উঠিল, “কি বালি মাখিয়ে ভেজে নিয়ে এসেছে ? এ যে গেল। যায় না।” যামিনী বলিল, “এমন কিছু খারাপ হয় নি।” মিহির বলিল, “তোমার মুখে ত কিছুই খারাপ লাগে ন। নিজে কিছু দেখ না কি না ?” নৃপেন্দ্রবাবু ছেলেমেয়ের ঝগড়া থামাইয়া দিয়া বলিলেন, “থাক থাক, যা হয়েছে তাই থাও। তোমার মা কিছু এখন দেখতে পারছেন না, একটু খারাপ ত হতেই পারে ।” প্রতাপ কি যে খাইতেছিল, সে বিষয়ে তাহার নিজের কোনে চেতনা ছিল না। মিহিরের কথায় তাহার জ্ঞান হইল যে সে মাছই খাইতেছে। এমন কি মন্দ হইয়াছে ? মিহিরের উপর অকস্মাৎ সে অত্যস্ত চটিয়া গেল। ছেলেটার যদি কোন কাণ্ডজ্ঞান আছে। একটু খাওয়ার গোলমাল হইলে এমন কি চণ্ডী অশুদ্ধ হইল যে, তাহ। লইয়া এত গোলমাল করিতে হইবে ? নিজে বাল্যে ও কৈশোরে যে এই অপরাধ কতবার করিয়াছে, তাহ প্রতাপ একেবারেই ভুলিয়া গেল । খাওয়াটা তাহার নামমাত্রই হইত বোধ হয়, যদি না নৃপেন্দ্রবাবু উপস্থিত থাকিতেন। প্রতাপের অবাধ্য চক্ষু ও মন কিছুতেই খাবারের দিকে যাইতে চাহে না । সম্মুখে এমন মনোহারিণী একটি ছবি তাহার সমস্ত চিত্তকে ক্রমাগতই সেই দিকে আকর্ষণ করে। খাওয়ার মত এমন একটা নিতান্ত স্থল জিনিষ, তাহাও ইহাকে কি চমৎকার মানাইতেছে । তাহার পাশে বসিয়া মিহিরট গিলিতেছে ঠিক যেন জানোয়ারের মত। মাষ্টার-মহাশয়ের মনে আজ ছাত্রের জন্য বিন্দুমাত্রও মমতা অবশিষ্ট ছিল না। নিজের থাইতেও তাহার লজ্জা বোধ হইতেছিল, যামিনীর সামনে বসিয়া সে গরুর মত মুখ নাড়িয়া খাইবে কেমন করিয়া ? না-জানি তাহাকে কি কুৎসিতই দেখাইবে। নৃপেন্দ্রবাবু বলিলেন, “আপনি ত কিছুই খাচ্ছেন না দেখি । রান্নাট আজ সত্যিই ভাল হয়নি।” প্রতাপ ব্যস্ত হইয়া উঠিল, “না রান্না বেশ ভালই হয়েছে। এত সকাল সকাল খাওয়া আমার আভোস নেই , কি না। আমি সচরাচর অনেক পরে খাই ।”