পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.২১০ ఏకం9శు কাগজখানা লইয় আগে দুই ভায়ে টানা-হেঁচড়; চলিত, এখন প্রতাপ তৃতীয় ভাগীদার জুটিয়াছে। আজ কিন্তু খবরের কাগজে তাহার মন ছিল না, কাগজখানা সামনে ধরিয়া সে গভীর চিন্তায় ডুবিয়া ছিল । গত রাত্রির মুহূর্তুগুলি আবার সে মানসপথে অতিক্রম করিতেছিল, তাহীদের সকল রস আবার পরিপূর্ণ করিয়া উপভোগ করিতেছিল। দেখিতে গেলে, রাত্রিটাতে কিছুই ঘটে নাই, কিন্তু প্রতাপের মনে হইতেছিল এমন রাত্রি তাহার জীবনে কখনও অসে নাই, আসিবেও না আর । ঘামিনীর এত কাছে আর কি সে কোনদিনও আসিতে পরিবে ? সারারাত সে যেন প্রহরীর মত এই দেবী নিকেতনে জাগিয়া, তাহাকে সকল অমঙ্গলের হাত হইতে রক্ষ করিতেছিল। যে-কাজে সে আসিয়াছিল, তাহার কথা বহুচেষ্টায় তাহার মনে করিতে হইতেছিল। নিতান্ত আয় অতিশয় সাবধান, না হইলে জ্ঞানদার সেবা-শুশষ৷ কেমন মে হইত, তাহা বলিবার নয় । যতক্ষণ যামিনীর ঘরে আলে জলিতেছিল, ততক্ষণ প্রতাপের চোখে পলক পড়ে নাই । আলে। যখন নিবিয়া গেল, তখন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয় প্রতাপ বসিয়া পড়িল । সম্মুখের দীর্ঘ রাত্রি কেমন করিয়া তাহার কাটিবে ? এত দূরে এত কাছে থাকিয়াও ? ঘামিনী একরকম প্রতাপের অপরিচিত। বলিলেও হয়, কয়টা কথা মাত্র সে দায়ে পড়িয়া একদিন তাহার সহিত বলিয়াছে। কিন্তু প্রতাপের হৃদয়ে তাহার চেয়ে আস্তরতম আত্মীয়া কেহ নাই। তাহার সমগ্র জীবনের সঙ্গে ধামিনীর সত্ত যেন মিশিয়া গিয়াছে। নিজেকে আহুভব করিবার ক্ষমত। যতদিন প্রতাপের থাকিবে, ততদিন যামিনী এমনিভাবেই তাহার মধ্যে জাগিয়া থাকিবে । অথচ বাহিরের জগতে তাহারা হয়ত চিরদিন এমনি অপরিচিতই থাকিয়৷ যাইবে । আয়! থাকিয়া থাকিয়া বাহিরে আসিয়া, প্রতাপকে নানা কথা জিজ্ঞাসা করিয়া সচেতন করিয়া যাইতেছিল । রাত্রি প্রায় একটা যখন, তখুন সে প্রতাপকে ঘণ্টা-দুই ঘুমাইতে অনুরোধ করিয়া গেল । “আপ, থোড়া শে। খাইয়েγ% আভি কুছ কাম নেহি হ্যায় ।” প্রতাপ ঘুমাইবে কিনা ইতস্তত: করিতে লাগিল। নৃপেন্দ্রবাবুর কাছে সে সারারাত জাগিয়া থাকিবার কথা দিয়াছে, এভাবে ঘুমান তাহার উচিত হইবে না, যদিই কোন প্রয়োজন হয় ? কিন্তু নিজের অজ্ঞাতসারেই মাথাট। তাহার বুকের উপর ঝুঁকিয়া পড়িতে লাগিল । একেবারে ঘুমাইয় না পড়িলেও, খানিকট তন্দ্র তাহার আসিয়াইছিল। হঠাৎ ভয়ানক চমকিয়৷ সে সোজা হইয়া বসিল । স্বল্পই দেখিল, ন সত্য ? মুছু লঘু পদক্ষেপে কে ঐ তাহার সম্মুখ দিয়া শরতের লঘু শুভ্ৰ মেঘখণ্ডের মত ভাসিয়া চলিয়া গেল ? যামিনীষ্ট কি, না প্রতাপের আকুল আগ্রহই এমন করিয়া তাহার দৃষ্টিকে ছলনা করিল ? কিন্তু পরমুহূৰ্বেই তাহার সংশয় ভঞ্জন হইল, ঘরের ভিতর ঐ ত ঘামিনীরই কণ্ঠস্বর, অতি মুদুকণ্ঠে সে আয়ার সঙ্গে কথা বলিতেছে। জ্ঞানদার অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয় নাই ত ? তাহ। হইলে প্রতাপের অসাবধানত কি অমার্জনীয় হইবে না ? ধামিনী কি বলিতেছে, তাহা শুনিবার জন্য প্রতাপ উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিল, কিন্তু স্পষ্ট কোন কথ। ত হার কানে আসিল না । যামিনী আর আয় বাহির হইয়া আসিল । প্রতাপ তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইল । আয় জিজ্ঞাসা করিল, “আপ শোয় নেহি বাবু ?” প্রতাপ একটু হাসিয়া মাথা নাড়িল । হিন্দী বলা তাহার অভ্যাস ছিল না, যামিনীর সামনে ভুল হিনী বলিয়া বোক বনিবার মারাত্মক একট। আতঙ্ক তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল। যামিনী বলিল, “আপনি একটু ঘুমিয়ে নিলে পারতেন, মা ভালই ছিলেন, এখন একটু নড়ছেন দেখলাম ।” যামিনী আবার যে তাহার সঙ্গে কথা বলিবে, ততটা আশা করিতে প্রতাপের ভরসা হয় নাই। মনে মনে সে নিজের অদৃষ্টকে সাধুবাদ করিতে লাগিল, ভাগ্যে সে ঘুমাইয় পড়ে নাই। এমন সুবর্ণ স্থযোগ হেলায় হারাইলে, এ জীবনে সে-দুঃখ আর সে তুলিতে পারিত না । যামিনীয় কথার উত্তরে বলিল, “ন, না জগতে আমার কিছু কৃষ্ট হচ্ছে না, রাত-জাগা আমার অভ্যাস আছে।”