পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S$8 রাম মিথ্য হইতে পারে না ; মহাভারত কাব্য হইলেও শ্ৰীকৃষ্ণ হয়ত কাল্পনিক নহেন। মহামতি টডের রাজস্থান ভ্ৰমপূৰ্ণ হইতে পারে . কিন্তু মহারাণ প্রতাপের বীরত্ব, স্বদেশাভিমান ও স্বাধীনতার উপাসনা সীমাহীন কল্পনাপ্রাস্তরের সুদূর আলেয়া-ভ্রাস্তি নহে। সমস্ত ভারতবর্গ এতদিন মিথ্যার উপাসনা করে নাই ; স্তাবকের ছন্দে কালের বাতাসে মহারাণ প্রতাপের মিথ্যা থ্যাতি কথায় কথায় পল্পবিত উঠে নাই—ইহাই বৰ্ত্তমান প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য বিষয় । এই প্রবন্ধের অনেক স্থলে মহামহোপাধ্যায় গৌরীশঙ্কর হীরাচাদ ওঝার মত উদ্ধৃত করা হইয়াছে ; কারণ এ-যুগে রাজপুত-ইতিহাসে তিনিই গুরুস্থানীয়। তাহার গবেষণপূর্ণ ‘রাজপুতানেক ইতিহাস’ বৰ্ত্তমানে সৰ্ব্বাপেক্ষ। প্রামাণ্য গ্রন্থ । তবে কোন কোন স্থলে গৌরীশঙ্করজীর সহিত আমাদের কিঞ্চিং মতভেদ আছে। মুসলমান-পক্ষের যে-সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ মহারাণা প্রতাপের অকীৰ্বিজনক বলিয়া পণ্ডিতজীর ধারণ জন্মিয়াছে, তিনি সেগুলি সঙ্গত কারণ ছাড়া অবিশ্বাস করিয়াছেন বলিয়া মনে হয় । সমাট আকবর ও র্তাহার সমসাময়িক ভারতবর্ষের ইতিহাস হিসাবে ঐতিহাসিক আবুল-ফজল রচিত ‘আকবরনামা’ অমূল্য গ্রন্থ । মহারাণা প্রতাপ সম্বন্ধে ইহাতে যেটুকু লিখিত আছে তাহাই ইতিহাস । একমাত্র রাজপুত-কাহিনীর উপর নির্ভর করিয়াছিলেন বলিয়া টড, সাহেব পদে পদে ভুল করিয়াছেন। আবুল-ফজলের ‘আকবরনামা’য় সকল ঘটনার সঠিক বর্ণনা নাই বলিয়৷ আমরা আবুল-ফজলকেই মিথ্যাবাদী বলিয়া থাকি । প্রকৃতপক্ষে দোষ আবুল-ফজলের নহে ; তিনি মিথাকথা গড়িয়া তুলেন নাই । ‘আইন-ই-আকবরী পাঠে জান৷ যায়, মোগল-দরবারের ঘটনা, বিভিন্ন কৰ্ম্মচারী ও মনসবদারগণের মৌখিক বিবৃতি ইত্যাদি কেরাণীরা যাহা দেখিত কিংবা গুনিত তাহার একবর্ণ ব্যতিক্রম না করিয়া লিখিয়া রাথিত । প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় অন্ত কৰ্ম্মচারীরা এই লেখাগুলির সারাংশের কয়েকটি প্রতিলিপি তৈয়ার করিয়া উটুর দপ্তরে দাখিল করিত। মোগল-দরবারের %Ýಸ್ಲಿ ইত্যাদি—এই সমস্ত よD○○を> সংবাদলিপি (news sheets)-অবলম্বনে লিখিত । এখন যদি কুমার মানসিংহ প্রতাপসিংহের কাছে অপমানিত হইয়া সম্রাটের প্রকাশু দরবারে বলেন, 'জাহাপনা ! প্রতাপসিংহ আমাকে খুব খাতির করিয়াছেন এবং চজুরের খেলাং পরিধান করিয়া শাহানশার তাজিম করিয়াছেন, তাহা হইলে এই ঘটনার দশ-পনের বংসর পরে ঐ তারিখের দরবারী সংবাদলিপি পড়িয় ইহ অবিশ্বাস করা কোন ঐতিহাসিকের পক্ষে সম্ভব কি ?-- বিশেষতঃ ইহার সততে যাচাই করিবার যখন অন্ত কোন উপায় থাকে না। কিন্তু পূৰ্ব্বসংস্কারের বশবর্তী হইয়! আবুল-ফজলকে কিংবা দরবারী সংবাদলিপিগুলিকে মিথ্যা বলিয়া উড়াইয়া দিলে সত্যের মর্যাদা ক্ষুঃ করা হয় । দ্বিতীয় কথা, মহারাণ। প্রতাপের সমসাময়িক মোগলদরবারের একাধিক ইতিহাস আছে ; কিন্তু মেবারের কোন ইতিহাস নাই, আছে শুধু ভাটের কাহিনী ও কবিতা । কাব্যকে যদি ইতিহাস-রূপে গ্রহণ করা যায়, তবে মহারাণ প্রতাপের সর্বাপেক্ষা প্রামাণ্য ইতিহাস প্রতাপের পুত্র অমরসিংহের সময়ে লিখিত ‘অমর-কাব্য’। দুঃখের বিষয়, উহার সম্পৰ্ণ পাণ্ডুলিপি এখনও আবিষ্কৃত হয় নাই । এক্ষেত্রে মুসলমান-লেখকেরা যাহা লিথিয়াছেন, তাহা খণ্ডন করিবার মত উপযুক্ত প্রমাণ না থাকিলে উহাই গ্রহণ করা বিচারসম্মত ; যেমন,আমরা বহুদিন হইতে টডের রাজস্থানে পড়িয়া আসিতেছি যে, হলদীঘাটের যুদ্ধে মহারাণ প্রতাপের ঘোড়া “চৈতক [ চেটক ] মানসিংহের হাতীর মাথায় পা তুলিয়া দিয়াছিল" , অথচ ইহা টড সাহেব চক্ষুষ দেখেন নাই, কিংবা কোন প্রত্যক্ষদশীর লিখিত কোনও বিবরণও সম্ভরতঃ তিনি দেখেন নাই । আকবরের দরবারী ইমাম-মুন্ন আকল কাদের বদায়নী হলদীঘাটে প্রতাপের প্রতিপক্ষে যুদ্ধ করিয়াছিলেন । তাহার পুস্তকপাঠে মনে হয় হলদীঘাটে রাণা প্রতাপ এবং মানসিংহ —উভয়েরই মধ্যে আদৌ দেখা-সাক্ষাৎ হয় নাই ; প্রতাপ যুদ্ধ করিয়াছিলেন মানসিংহের বড় ভাই মাধোসিংহের সঙ্গে ! এস্থলে কোনটি গ্রহণযোগ্য তাহা, পাঠক বিচার করিবেন। **