পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ শোধ Ş6. নিরুদিষ্টা বধূর উদ্দেশে তাহার অলস স্নর ক্ষেতের উপর দিয়া গড়াইয়া চলিয়াছে। কিছুদূরে আগে আগে ছইয়ে ঢাকা একখানি গোযান যাইতেছিল ধুল উড়াইয়া । কানাই ইক দিল, “কোথাকার গাড়ী গো ?” চালকও উত্তর দিল, কিন্তু কথা বোঝা গেল ন। তাহার হাকে ছইয়ের নীচে পর্দাখানা একটু সরাইয়৷ ফুটিয়া উঠিল একখানি কমনীয় মুখের একটি ধার ও কৌতুহলী একটি চোখ । রংটা ফস । কানাইয়ের মনে হইল, মুখখানি বেশ । কিন্তু তাহার লক্ষ্মীর মুখখানি আরও মিষ্ট । সে দীর্ঘপদক্ষেপণে গাড়ীখানাকে পিছনে ফেলিয়া আগাইয়া গেল । দেড় ক্রোশ পথ পার হইলেই দক্ষিণে ক্ষেতের পারে গড় ই নদীর বিরাট চর। উদাস হাওয়ায় আকাশ পানে বালুর ধ্বজ উড়াইয়া দিয়াছে। ঐ যে ভাঙনের ফাকে ফাকে জলের একটু দেখা যায়—নীল, রৌদ্রালোকে চিকু চিক্‌ করিতেছে। নদীপারেই লক্ষ্মীর বাপের বাড়ী ; দিলগঞ্জের ঠিক পশ্চিমে। লক্ষ্মী যেদিন প্রথম তাহার ঘরে আসে, নদীপারে মেঘ করিয়াছিল, কালে ; চারিদিকে থমথমে ভাব। লক্ষ্মীটা নদীর দিকে তাকাইয়া কি কান্নাই *াদিয়াছিল । পথের দক্ষিণে বাশবনের মাথায় তখন সূর্য্য ঢলিয়া পড়িয়াছে, কানাই চণ্ডীপুরে পৌছিল । ছোট গ্রাম । থানকয়েক খড় ও টিনের ঘর। পশ্চিমে একটা প্রকাগু দীঘি । পথটা গিয়াছে তাহারই তীর ঘেষিয়া। দুটি বধু তখনও ঘাটে একরাশি কাপড় কাচিতেছে। লক্ষ্মীরও এই রোগ। পুষ্করিণীতে একরাশি সিদ্ধ কাপড় লইয়া কাচিতে বসিবে, তা বর্ষাই বা কি, শীতই বা কি। বারণ মানে না । সেবার তো মরিতে মরিতে সারিয়া উঠিয়াছে। কানাইয়ের বুকের ভিতরটা কাপিয়া উঠিল। লক্ষ্মী এখন ভাল আছে ত ? দীঘিট পার হইতেই দক্ষিণ দিক হইতে কে যেন স্থাকিল, “আরে কে ও ? কানাই যায় না কি ?” কানাই ফিরিয়া দেখে, ঘরের পাশে গদাই দাস রৌত্রে বসিয়া পাটের দড়ি পাকাইতেছে । গদাই কহিল, “এই আস হচ্ছে ? তামাকটাও এই সাঁজলাম—” বলিয়াই ষ্টাক দিল, “ওরে হারাণি, কন্ধেটায় একটুকরা আগুন দিয়ে যা ।” তাম্রকুটের বুমের অভাবে কানাইয়ের পা দুইখানা ক্রমেই ভারি হইয়া উঠিতেছিল, মনটাও যেন মুস্থ ড্রাইয়। পড়িয়াছিল। কিন্তু বেলাও বেশী নাই, সম্মুখে দেড় ক্রোশি মাঠের শেযে দিলগঞ্জের কালে রেখাটি তাহাকে টানিতেছে চুম্বকের মত। এদিকে-ওদিকে তাকাইয়া সে পরিশেষে গদাইয়ের কাছে গিয়াই গাঠরি নামাইয়া বসিল । হারাণীও ততক্ষণে একথানি জলন্ত কাঠ আনিয় কন্ধিটার মুখে রাখিয়া একটু চাড় দিয়া থানকয়েক কয়ল! ভাঙিয়া দিয়া গেল । কানাই কহিল, "বনমালীর খবর কি খুড়ে ?” “খবর আর কি ? গত সনে সে ত মারা গেছে । বিষয়আশয় ত সবই বেঁচে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল—” “খুড়ে, এ ধৰ্ম্মের মার । মাথার উপর এখনও ভগবান আছেন । শোয়াশো টাকার জন্যে আমার আমন সোনাফল খামারখানা নীলেমে তুললে। সেখান থাকলে আজ আমি চাকরিতে বার হই ? তার সেই ছেলেট ?—” “ছোড়াটার কথা আর ব’ল না—ভারি বদ । আমাদের ঐ উত্তর দিকে রাধাকান্তর বাড়ি থাকত। একদিন কি যেন নষ্টামি করেছিল । রেধো তাই মারধোর করে । ছোড়াটা সেই থেকে পালিয়ে যায়—এ সব তুমি যাবার পরই হয়েছিল। শুনছি না কি সে তোমাদের গায়েই কোথায় আছে । তুমি ত বছর পরে বাড়ি আসছ ? ' কানাই মাথা নাড়িয়া কহিল, “হঁ৷ ” “উত্তর অঞ্চলের হাল-চাল কি রকম ?” “এই রকমই। আমাদের মত গরীব-দুঃখীদের বড় কষ্ট।” তারপর কন্ধিটায় একটা শুকুটান দিয়া গদাইয়ের হাতে তুলিয়া দিতে দিতে কহিল, “যাই খুড়ে । একদিন যেও —আমি সাত দিন থাকৃব—” গদাই একবার কানাইয়ের নীল পিরাণটার দিকে, একবার মাথার উপর গুরুভার গাঠ রিটার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাইল। কানাই তাহার কাছ ইভেণ্ডীয়া চলিতে লাগিল সোজা। :',