পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२b”

| ఏ99శు ভাবিতে ভাবিতে দৃষ্টি তাহার বহির্জগৎ ছাড়িয়া মনোজগতে আসিয়া প্রবিষ্ট হয় । তাহার বাবার জন্য তাহার বড়ই মন কেমন করে । সেই কবে ও-বছর দুর্গাপূজার সময় একবার তিনি বাড়ি আসিয়াছিলেন, তাহার পর আজ দুই বৎসর ঘুরিতে চলিল আসিবার আর নামই করেন না। অথচ আসিবার জন্য সে র্তাহাকে কতবারই-না তবু পত্র লিখিয়াছে । লিখিয়াছে— আপনি পত্রপাঠ চলিয়া আসিবেন । নিশ্চয়ই আসিবেন। আপনি না আসিলে আমার বড় মন কেমন করে। বড় কান্না পায় ।---আরও কত-কি । সে পত্ৰ দিয়াছে আর প্রতিবারেই ভাবিয়াছে--এইবার তাহার বাবা নিশ্চয়ই আসিবেন । কিন্তু তিনি আসেন নাই । একবার লিখিয়াছিলেন—কাজের ভিড়, নিকট ছুটি পাওয়া যায় না. সাহেবকেও সে তাহার বাবার পত্রের ভিতর একবার পত্র লিখিয়াছিল । লিখিয়াছিল, যেন তিনি দয়া করিয়া তাহার বাবাকে অন্ততঃ দুই-তিন দিনের জন্যেও ছুটি দিয়া দেশে পাঠাইয়া দেন ; তাহার বাবার জন্য তাহার বডড মন কেমন করে।...এই সব। ইহা সত্বেও তাহার বাবা আসেন নাই । সাহেবের নিঝরিণীর মত চঞ্চল, স্বচ্ছন্দ-গতি ফুটফুটে মেয়েটি এই সকল কথা ভাবিতে ভাবিতেই হঠাৎ দেখিতে পায়, ঐ দামোদরের বুকে শেয়া নৌকাখানা ঝপ, বাপ শব্দ করিতে করিতে স্রোতের অমুকুলে অতি দ্রুতগতিতে ছুটিয়া আসিতেছে। এ খেয়া ডাকের খেয়া। ডাকআপিসের পিয়ন কালীচরণ একটা লাঠিতে বাধা থলিতে করিয়া জামালপুর হইতে এই সময়ে চিঠিপত্র লইয়া আসে। ঐ ত, সে হালটার কাছে বসিয়া বসিয়া বিড়ি টানিতেছে—বেশ চেনা যায়, স্পষ্ট ! একটু পরেই সে খলিট আনিয়া কপ করিয়া আপিস্ঘরের সন্মুখের মেঝেয় ফেলিবে । মাষ্টার মহাশয় তাহাদিগকে ছুটি দিয়া আপিস-ঘর খুলিবার পর কালীচরণ ঘরে ঢুকিয় । তাহার সম্মুখে হাটু গাড়িয় বসিয়া ছুরিতে ক গালা-মোহর ভাঙিয়া থলিট উপুড় করিয়া ধরিতেই ঝরঝর করয়া চারিদিকে চিঠিপত্র ছড়াইয়া পড়িবে। তাহার পর মাষ্টার মহাশয় বাক্স খুলিয়া খাতাপত্র বাহির করিয়া কি-সব লিখিতে থাকিবেন আর কালীচরণ কতকগুল চিঠি গুছাইয়৷ লইয়া ঝপাঝপ করিয়া মোহরের ছাপ দিতে থাকিবে। সে কতদিন কালীচরণের একান্ত সন্নিকটে দাড়াইয়৷ তাহাকে চিঠিপত্রে মোহরের ছাপ দিতে দেখিয়াছে। ૨ কালীচরণ আসিয়া ডাকের থলি নামাইয়াছে । মাষ্টার মহাশয় তাহাদিগকে ছুটি দিতেই মেয়েটি তাহার পুথিপত্র এবং পেন্সিল, স্বচ, স্বতা ইত্যাদি সম্বলিত সাবানের বাক্সটি একত্র করিয়া বাধিয়া নদের ধারে পিটুলী গাছটার তলায় আসিয়া চুপ করিয়া দাড়াইল । সে প্রতিদিন ছুটির পর এই স্থানটিতে আসিয়৷ দাড়াইয়া থাকে। ডাকঘর হইতে কালীচরণ চিঠির তাড়া লইয়া বাহির হইলেই তাহার নিকট গিয়া সে সসঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করে—‘চরণ-ক, চিঠি নেই ? কালীচরণ একবার মাত্র ঘাড় নাড়িয়া বলে—‘না’ । প্রতিদিন সে জিজ্ঞাসা করে আর প্রতিদিনই কালীচরণ 'না' বলে এবং এই না? শুনিবার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই তাহার কর্ণমূল কেমন যেন লজ্জায় রাঙা হইয়। ওঠে। তথাপি সে জিজ্ঞাসা করে এবং প্রতিকুল উত্তর সংগ্ৰহ করিয়া প্রতিদিনই মানমুখে সে বাড়ি ফিরিয়া যায়। চিঠি যে কোনোদিনই থাকে না তা নয়, কখনও-সখনও হয়ত কালীচরণ তাহার হাতে একটি পোষ্ট কার্ড কিংবা খাম বাহির করিয়া দেয়, সে উপরের আঁকাবাকা বাংলা লেখা দেখিয়াই বুঝিতে পারে যে, মেজদি লিখিয়াছেন পলাশম হইতে । পলাশমে তাহার দিদির বাড়ি। বেশ গা-টি ! তেঁতুল-তলায় উন্মুক্ত একটা গেড়ের পারেই তাহার, দিদিদের ‘টেশকেল’। গেড়ের পরপারেই বড় জুড়