পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ জ্যৈষ্ঠ ! শেষের খেয়। $ \రి(t প্রথম কথা তিনটি শুনিতে পাওয়া যায় না, শেষের কথাটিই সে এক বিচিত্র স্বরে নদের এপার-ওপার প্রতিধ্বনিত করিয়া তোলে । তাহার বুক টিপ, টিপ করিতে লাগিল।—হে মা কালী, হে বাবা রাজরাজেশ্বর, বাবা যেন তাহার ভালয় ভালয় গ্রামে আসিয়া পৌছান। १ অবশেষে তাহার বাবা আসিয়া পৌছিলেন । এ-আগমন কিন্তু শৈলবালার চঞ্চল মধুজীবনের চারিপাশে আর আনন্দ পুঞ্জীকৃত করিতে পারিল না, সে কেমন-যেন এক অনহভূতপূৰ্ব্ব লজ্জী-সঙ্কোচের গুরুভারাবনত শৈশব ও যৌবনের সন্ধিস্থলে আসিয়৷ শৈলবালার মধুশৈশবের শেষের দিকে বড় বেদনার ছেদ টানিয়া দিল । যে-তুচ্ছ ঘটনাকয়টিকে অবলম্বন করিয়া বালিকাটির মপুজীবনে এত বড় একটি বিয়োগ নামিয়া আসিল তাহার বর্ণনাটিই বক্ষ্যমান আখ্যায়িকার পরিশেষ কথা । কতই ন সামান্য তাহা । কিন্তু অর্থ তাহার যেমনই গভীর তেমনি বৈচিত্র্যময়। রাত্রির প্রথম প্রহর তখন উত্তীর্ণপ্রায় । গ্রামের নালা, ডোবা, পুষ্করিণী প্রভৃতিতে তখন বন্যার জল আসিয়া ঢুকিতেছে ; রাত্রির ঝিল্লীরবমুখরিত গাঢ় অন্ধকারের চারিদিকে তখন কলকল ছলছল শব্দ । সেই শব্দকেও ছাপাইয়া যথাসময়ে ও-ঘরের দাওয়ায় তাহার বাবার কণ্ঠস্বর জাগিয়া উঠিল, “কই গো ।” জলভরা গাডুর উপর একখানি পাট-করা ভিজা গামছা, একজোড়া হারিকেন এবং তাঁহারই আলোয় সম্মুখের আসনের উপর আসীন তাহার বাবার সেই চিরপরিচিত শাস্ত, সৌম্য মূৰ্ত্তি। সে স্পদিতবক্ষে ধীরে ধীরে নিকটে গিয়া মুখ নীচু করিয়া দাড়াইল। আগের মত পরিপূর্ণ স্বচ্ছন্দ মন লইয়া ছুটিয়া গিয়া আর বাবার কণ্ঠলয়া হইতে পারিল না—কোথা হইতে কারণহীন লজ্জা আসিয়া তাহার সকল চিত্ত অধিকার করিয়া বলে। সে নিকটে গিয়া দাড়াইতে তাহার বাবাও মুখ তুলিয়৷ চাহেন । কিন্তু কি আশ্চৰ্য্য, সে যেন কেমন এক বিস্ময়ভর অপরিচয়ের দৃষ্টি ! সে-দৃষ্টির সম্মুখে শৈলবালা আরও কেমন যেন জড়সড় হইয়া পড়ে—কোনও মতে বাবার পায়ে মাথা ঠেকাইয়া সে উঠিয়া দাড়ায়। আগের সে-সকল দিনের মত তাহার বাবা অার তাহাকে বুকে টানিয়া লইলেন না, মুখচুম্বন করিয়া মাথায় হাত দিয়া আগের দিনের মত আর প্রসন্ন আশীৰ্ব্বাদও বর্ষণ করিলেন না ; পরস্তু সে উঠিয়া যাইবার সময় ব্যথিতবিস্ময়ে অভিভূত হইয়া লক্ষ্য করিল—বাবা তাহার মাথায় আঙলের ডগা ঠেকাইয়া থাক্ থাকৃ’ বলিয়া তাহাকে বিরত করিলেন । তাহার যেন ঠোঁট ফুলিয়া কাম আসিল—সে ঘরে গিয়া বিছানার উপর গুইয়া পড়িল । রাত্রে সে স্বপ্ন দেখিল,—বন্যার জল যেন গ্রাম হইতে বাহির হইয়া গেছে। তৃণাচ্ছাদিত সবুজ ভূমির উপর গেরুয়া পলিমাটির স্তর, গাছে পাতায় সৰ্ব্বত্রই যেন গেরুয়া কাদার ছোপ, যষ্টিতলায় সজিনাগাছের ডালে দুইটা জলমেটুলী সাপ পরস্পরকে জড়াইয়া যেন কেবল দোল থাইতেছে. সে ভয়ে অস্ফুট আৰ্ত্তনাদ করিয়া উঠিল, ঠাকুমা নিদ্রাজড়িত কণ্ঠে শ্ৰীহরি দুর্গা, শ্ৰীহরি দুর্গ, বলিয়া তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া দিলেন । সকাল বেলায় বাবা কোথায় বাহির হইয়া গেলেন, দ্বিপ্রহরে বাড়ি ফিরিয়াই স্নানাহার করিতে ব্যস্ত হইয়। উঠিলেন। এখনই খেয়া ধরিতে না পারিলে ওপারে আবার মশাগ্রাম ষ্ট্রেশন যাইবার বাস ধরিতে পারিবেন না ! বিদায়-বেলায় শৈলবালা পুনরায় আসিয়া ডাহার বাবার পদতলে মাথা রাখিল,কিন্তু আর যেন তাহ উঠাইতে পারিল না। বুক-ভরা কত কথা তার কিছুই বাবাকে বলা হইল না, বীৰ তাহাকে আর আগের দিনগুলির মত বুৰে তুলিয়া লইলেন না, তাহার কেবলই ক্ষেন-ফেন মনে হইতে লাগিল—কি যেন তাহার এক শ্ৰেষ্ঠ সম্পদ ।