পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শোক-সংবাদ ঐবিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় > দেশবিশ্রত ব্যবহারজীবী স্তর এস্ এন্‌ গুপ্টা মৃত্যুশয্যায় ; সারা দেশে একটা উৎকণ্ঠা পড়িয়া গিয়াছে। এই বয়সে ডবল নিউমোনিয়া—আশা ত একেবারেই নাই । ডাক্তারদের এখন আর বিশেষ কাজ নাই ; আর কতক্ষণ, শুধু এই লইয়াই তাহদের মধ্যে বচন৷ চলিতেছে। স্তর শচীনের ক্রেরপতি মক্কেল দৌলতরাম গিরিধারী, মারোয়াড়ি মহলের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার রায় সাহেব গৌরহরি বসাককে অষ্ট প্রহরের জন্য মোতায়েন করিয়া দিয়াছেন। রায় সাহেব বলিয়াছেন—ভোর পাচটার পরে যদি রোগী বাচিয়া থাকে ত বুঝিবেন তাহার চল্লিশ বৎসরের চিকিৎসাই বৃথা গিয়াছে. সত্যপ্রকাশ’-এর সম্পাদক হলধরবাবু নিজের আপিসের চেয়ারটিতে বসিয়া এক-একবার উদ্বিগ্নভাবে ঘড়ির পানে চাহিতেছেন এবং এক-একবার টেলিফোনের মাউথপিসে মুখ লাগাইয়া প্রশ্ন করিতেছেন—“কি খবর সিন্ধুবাবু ? আর কতক্ষণ মশাই ?” ব্যাপারটা এই । মৃত্যুর খবরটা সৰ্ব্বপ্রথমে বাজারে বাহির করিয়া সত্যপ্রকাশ’ কিছু করিয়া লইবার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। অতিরিক্ত লোক নিযুক্ত করিয়া সমস্ত রাত ধরিয়া স্তর শচীন্দ্রের সুদীর্ঘ জীবনী এবং ততোধিক দীর্ঘ মৃত্যুবিবরণী কম্পোজ করা হইয়াছে— মায় ব্লক সমেত। কাগজের অন্যান্য পত্র ছাপা হইয়৷ গিয়াছে, এখন মৃত্যুসংবাদটি পাইলেই এ-সেটটাও প্রেসে চড়াইয় দেওয়া হয়। হকারদের খুব সকাল সকাল আসিতে বলিয়া দেওয়া হইয়াছে। ঘুম হইতে জাগিয়৷ উঠিবা মাত্রই ইংরেজী বাংলা আর সব কাগজের পূৰ্ব্বেই যেন ‘সত্যপ্রকাশ’-এর মারফৎ কলিকাতা এই জমকাল মৃত্যু-সংবাদটি পায়। ফুধবাৰু সবাইকে সাবধান করিয়া দিয়াছেন—“রায় বাহাদুর গিরীশচন্দ্র চক্ৰবৰ্ত্তীর মরার সুবিধাটা আমরা শুধু গড়িমসি করিয়া হেলায় নষ্ট করেছি,–এবারে সে লোকসানটুকু পর্যন্ত তুলে নিতে হবে।--অমন জাদরেল লোক ত আর দেশে এবেল-ওবেলা ম’রচে না—একট। সুযোগ গেল ত আবার ই ক'রে বসে থাক...” তাই নিজেও সমস্ত রাত জাগিয়া উদ্যোগী রহিয়াছেন। গুপ্ট সাহেবের বাড়ির পাশেই একটি ডিসপেনসারির টেলিফোনযন্ত্রটি ‘সত্যপ্রকাশ’ আজ সমস্ত রাতের জন্য ভাড়া করিয়া লইয়াছে। যন্ত্রটির সামনে ষ্টাফের একজন-নাএকজন কোন লোক বসিয়াই আছে। ঘটনাটি ঘটা কি খবরটি আপিসে পৌছাইয়া দেওয়া—সঙ্গে সঙ্গে ছাপা মুরু এবং হলধরবাবুর ভাষায় বলিতে গেলে—“কাককোকিল টের পাওয়ার আগেই সত্যপ্রকাশ’-এর হৈ হৈ রৈ রৈ ক'রে বাজার ছেয়ে ফেলা...দেখি কে এগোয় আমাদের সামনে এবারে---’ মোট কাল বর্ডার দেওয়া এক ইঞ্চি পরিমাণ টাইপের বিজ্ঞাপনপত্রী ছাপা হইয়া গিয়াছে— “বিনামেঘে বজ্ৰাঘাত-দেশব্যাপী হাহাকার-দেশবিখ্যাত মহাকৰ্ম্মী গুর এস এন গুপ্টা, বার-এটুল-র বৈকুণ্ঠযাত্রা-উাহায় দুর্তে্যুরহস্তজনক উইল—সতাপ্রকাশের তিনপূষ্ঠাব্যাপী শোকাগুলি—কাউন— পড়,ন-জাতীয় শোকে অশ্রুর তর্পণ করুন!” রাত্রি একটা থেকে সহকারী সম্পাদক সিদ্ধেশ্বরবাবুই ওদিকার টেলিফোনে বসিয়া আছেন ; এখন সাড়ে তিনট কি চারটা হইবে। সমস্ত দিন আর রাত প্রায় এগারটা পৰ্যন্ত গুস্ট সাহেবের জীবনী ও "মরণী" লেখ, প্রস্থ দেখা এই সবে কাটিয়াছে; দুই ঘণ্টার মধ্যে আহারাদি ও নিদ্রা সারিয়া বসিয়াছেন। চায়ের চাড়া দিয়া ঘুম আটকাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিতেছেন–কিন্তু লেকি মানে? আমেজে চুলিতে চুলিতে প্রায় বন্ধটির উপর মাটি লাগ লাগ হইয়াছে এমন সময় কিরু-কি-ক্রি-কিং ক্ষরি चeग्नांछ ट्झेल । :ன்.