পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२० আঙিনার মাঝে দাড়াইয়। এই দৃতে লক্ষ্মী স্মিতযুখে কহিল, "তুমি এমনি মাথাপাগলা!” "মাথাপাগল নয়, লক্ষি। আমার মাণিক থাকলে আঞ্জ এত বড়টাই হ’ত।" বলিয়ু একটি নিশ্বাস ফেলিল । - "তা, ঘর থেকে আমার আলোয়ানখাম| এনে গায়ে দাওঁ—” “আর আমার শীত করছে না," বলিয়৷ কানাই পুষ্করিণীর পথে চলিয় গেল। সন্ধ্যার পর কানাইয়ের গাড়ী । দ্বি প্রহরে না বাঠির হইলে তিন ক্রোশ পথ ঠাটিয়া ধরা যায় না। কানাই সকালে পাড়াট। একবার ঘুরিয়া আসিয়া ধনার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করিল,—রেলগাড়ী, উড়োজাহাজ, হাওয়াগাড়ী ও সাহেবমেমের । তারপর পাকশালায় লক্ষ্মীর কাছে কিছুক্ষণ বসিয়া রহিল । পরিশেষে আহারাদি সারিয়৷ বিশ্রামান্তে দ্বিপ্রহরে যাত্র করিল। হাতে কাপড়চোপড়ের ছোট একটি পোলা ও "ঠেঙা” গাছটি । আঙিনায়ু নামিতেই লক্ষ্মী তাহার পায়ের ধূলা লইল ; তারপর ধন। কানাই লক্ষ্মীর মুখের পনে সতৃষ্ণনয়নে একবার তাকাইল । কছিল, “সাবধানে থেক লক্ষি । সামনের পূজোতেই আবার আসব।" লক্ষ্মী কহিল, “তুমি শরীরকে কষ্ট দিও না। এ দুঃখ ঠাকুর কবে যে ঘুচাবেন।” তাহার স্বর র্কাপিয়৷ ऐंठेिल ! কানাই চারিদিকে তাকষ্টিতে তাকাইতে ধীরে অগ্রসর হইল। পিছনে লক্ষ্মা, তাহার পার্থে ধনা। চলিতে S)90) চলিতে গোয়ালের পানে তাকাইয়া কানাই কহিল, "স্রৈভাঁটার সঙ্গে দেখা হ'ল না।” বহিরাঙ্গন ও গ্রামের পথটা যেখানে মিশিয়াছে লক্ষ্মী ধনাকে লইয়। সেখানে স্থির হইয়া দাড়াইল । তাহার চোথ দুটি অশ্রুসিক্ত। কানাই চলিতে চলিতে ফিরিয়া দেখে, হারা দুটিতে পাশাপাশি দাড়াইয় তাহারই পানে তাকাইয়া আছে। সে পুষ্করিণীর তীরে পৌছিতেই পূম! সহসা পিছন ফিরিয়া ঘরের দিকে ছু দিল। তারপর বেড়ার গ৷ হইতে শঙ্খমাছের চাবুকখানি খুলিয়ু লইয় ছুটিতে ছুটিতে কানাইয়ের পার্থে গিয়া কহিল, "মেসে, এটা ফেলে যাচ্ছ ” কানাই ধনার হাতে চাবুকথান দেখিয় চমকাইয় マ。 উঠিল। । মনে হইল, সহসা তাহার পুষ্ঠে কে যেন ঐ চাবুক দিয়া নিৰ্ম্মমভাবে আঘাত করিল। অস্তরের ঠিক মধ্যখানে সে আঘাতের গভীর একটা দাগ পড়িয়া গিয়াছে। কি দুৰ্ব্বিষহ তাহার জাল । সে পোল ও “ঠেঙা” গাছটি পথের উপর ফেলিয়। ধন্যর হাত হইতে চাবুকখানঃ ছিনাইয়ু লইয়৷ পুষ্করিণীর জলে ছুড়িয়া ফেলিল। তারপর ধনাকে বুকে তুলিয়া পৃষ্ঠে হাত বুলাইতে বুলাইতে কহিল, “সেদিন বড় লেগেছিল, না রে ধন্ত ?” বলিতে বলিতে তাহার স্বরটা গাঢ় হইয়া চোখ দুটি অশ্র সমাচ্ছন্ন হইয়ঃ উঠিল । ধনাও তাহার স্বন্ধে মুখ লুকাইয়া সহস ফুলিয়। ফুলিয়া কাদিতে লাগিল । ব্যথিত কণ্ঠে কানাই কহিল, “চুপ কর, চুপ করু, মাণিক। তোর মাসকে ছেড়ে আর কোথাও যানে—” তারপর তাহাকে বুক হইতে ধীরে নামাইয়া চোথ মুছিতে মুছিতে আবার চলিতে লাগিল সেই দূরের পথে।