পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৃঙ্খল ২৭৩ লইয়া খোড়াইতে খোড়াইতে অতি সন্তপণে খিদিরপুরের দিকে প্রস্থান করিল। * নদীতীরে খোলা আকাশের নীচে বিচিত্রবর্ণের তরঞ্চের উপর শাদী ধবধবে চাদর বিছাইয়া উত্তেজন|ক্লান্ত দেহমনকে বিশ্রাম দিবার আয়োজন করিতেছে, এমন সময় অদূরবর্তিনী সেই সুন্দরী অপরিচিত অষ্টাদশী প্রথম অজয়ের দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করিল। মাঝখানে মাত্র কয়েক-হাত জমি এবং কতকগুলি স্তুপাকার জিনিষপত্রের প্রাচীরের ব্যবধান । অজয়ের দুর্বল অপরিণত দেহে সে সাধ্য ছিল না যে, গুরুভার ট্রাঙ্ক-মুটকেস ইত্যাদি টানাটানি করিয়া সেখান হইতে সরিয়া যাইতে পারে। অত রাত্রিতে সেই ক্ষুদ্র ষ্টেশনটিতে মুটের সাহায্যও মিলিত না । অগত্যা খালাসীরা যেখানে তাহার স্থান-নির্দেশ করিয়া রাখিয়া গিয়াছে অদৃষ্ট্রের নিকট আত্মসমর্পণ করিয়া সেইখানেই সে রহিয়া গেল। জিনিষপত্র সেখানেই ফেলিয় রাখিয়৷ বিছানাটা লইয়া সরিয়া যাওয়া যাইত, কিন্তু কি-কারণে সে-কথা তখন তাহার মনে হয় নাই। ঘুমাইবার চেষ্টা সে সত্যসত্যই করিয়াছিল ; কিন্তু অপরিচিত স্থানে অনভ্যস্ত আবেষ্টনের মধ্যে সহজে চোখে ঘুম আসে না। তাহার শিয়রের দিকে কয়েক গজ দূরে অপরিচিতার সহযাত্রী স্থূলদেহ সেই প্রৌঢ় নিশ্চিন্ত আরামে নাসিকাধনি করিতে করিতে নিদ্রা যাইতেছিলেন। সেদিক্কার বহুক্রোশব্যাপী সমতলতার মধ্যে তাহার শরীরের স্তুপটি যেন একটি বিশিষ্ট বিপুলতা অর্জন করিয়াছিল। কেন যে অনেকক্ষণ সেদিক হইতে সে দৃষ্টি ফিরাইতে পারিল না, জানে না।—অপরদিকে তরুণীর সহযাত্ৰিণী গায়ে মাথায় কাপড় চাপা দিয়া তরুণীর পাশেই জড়সড় হইয়া পড়িয়া ছিলেন। আশেপাশে অঙ্ক যাত্রীরা দলে দলে নিদ্রা যাইতেছিল, তাহদের মধ্যে নারীও অনেক ছিলেন। কেবল সেই তরুণী একাকী দুই জামুর মাঝখানে মাথা গুজিয়া নিম্পদ হইয়া জাগিয়া বসিয়া, ছিল। সেদিকে চাহির্তে অজয়ের সঙ্কোচের অবধি ছিল না, কিন্তু ভাল করিয়া না চাহিয়াও, সে বেশ যুৰিতে পারিতেছিল, অধারিত আকাশের নীচে অপরিচিত-সমাবেশের মধ্যে নিদ্রার অতি-অন্তরঙ্গতার আরাধন করিতে তরুণীর লজ্জায় বাধিতেছে। এমন অবস্থায় পড়িলে বাংলার বহু সন্ত্রান্ত পরিবারের নারীরাই পুঞ্জ পুঞ্জ বস্ত্রের আশ্রয়ে সম্ভ্রমরক্ষ। করিয়া অকাতরে নিদ্রা গিয়া থাকেন, তাই অপরিচিতার আজিকার এই বিশিষ্ট আচরণ তাহার প্রতি অজয়ের মনে অনেকখানি শ্রদ্ধর উদ্রেক করিয়া দিল । তরুণী সমস্ত রাত্রি জাগিয়া বসিয়া থাকিবে আর সে পাশে পড়িয়া ঘুমাইবে ইহা তাহার কেমন যেন সম্ভব মনে হইল না । সে ন-ঘুমাইলে তরুণীর নিশাজাগরণের ক্লেশের কিছুমাত্র লাঘব হইবে না জানিয়াও সে সমস্ত রাত জাগিয়াই কাটাইবে স্থির করিল। পাছে অনবধানতায় নিদ্রাকর্ষণ হয় এই ভয়ে একবার বালিশের ভর ছাড়িয়া বিছানার উপর সোজ৷ হইয়া উঠিয়া বসিয়াছিল, কিন্তু তরুণী অকস্মাৎ মুখ তুলিয়া চাহিয়৷ সেই অবস্থায় তাহাকে দেখিতে পাইলে ন-জানি কি মনে করিবে ইহা ভাবিয়া তৎক্ষণাৎ তাহাকে আবার শয্যার আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। তন্ত্রাঘন নিশান্ধকারে কি জাদু আছে, তাহার স্পর্শ দুঃসাহসের গায় আসিয়া লাগে, তারপর তাহাকে আর দুঃসাহস বলিয়া চেনা যায় না। অন্ধকার রাত্রির আশ্রয়ে অজয়েরও ক্রমে সাহস বাড়িয়া চলিল। বালিশে মাথা রাখিয়া তরুণীকে সে দেখিতেছে । একটি চোখের অপলক দৃষ্টি ভরিয়া দেখিতেছে। - তারকাখচিত অসীম আকাশের গায়ে অন্ধকারের রঙে আঁকা একখানি কবরী। তরুণীর দুইখানি ক্ষীণ হস্তের সযত্ন কেশ-রচনা। আকাশ যেন অপরিসীম আদরে ইহাকে আজ বক্ষে ধারণ করিয়া রহিয়াছে। এই কবরটিরই শোভাবৰ্দ্ধনের জন্ত সে যেন আজ ইহাকে নক্ষত্রের মণি গাথিয়া খিরিয়াছে। একটি শুভ্ৰ পেলব হস্তের একগাছি ফক্ষণের উপর পড়িয়া অফুট একটু তারার আলো পরম কৃতাৰ্থতার গৌরবে হাসির উঠতেছিল ; অজয়ের মনে হইতেছিল, তাহাক জানা’ ও ‘জৱান” পৃথিবীতে এ মাধুর্ঘ্যের কোথাও নেজার তুলনা ধাই। - বের একাধারে স্বনিমহং জ্যোতি এবংখঙ্কার। জঙ্গনৱ”