পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՏԳՎՆ S99ఉు গোশালা, ধানের মরাই, থানিকট পড়ে। জায়গা, তারপর আমজাম নারিকেল সুপারি বনে ঘেরা আবার একটি বাড়ী। শৃঙ্খলাহীন, কিন্তু পরিচ্ছন্ন পল্লী । হালের গরুগুলি রাত্রিশেষে ছাড়া পাইয়া বাহির হইতেছে। গাষ্ঠীদের মুক্তিলাভে এখনও বিলম্ব আছে, যদিও দুগ্ধ-দোহনের শব্দ কোথাও কোথাও শোনা যাইতেছে। একদল ষ্টাস কলরব করিতে করিতে হেলিতে দুলিতে চলিয়াছে। গ্রামের মধ্যেকার পথ কোথাও উচ, কোথাও নীচ, কোথাও পরিসর, কোথাও বা অতি সঙ্কীর্ণ। স্থানে স্থানে গোপাট ছাড়িয়া কাহারও বাড়ীর আঙ্গিনায় উঠিয়৷ পড়িতে হয়, কুকুরের দল ঘেউ ঘেউ করিয়া উঠে । কাজলজলের দীঘি। গ্রামের বধুরা তত সকালেই স্নান সারিয়া কলসীতে জল লইয়। ভিজা কাপড়ে ঘোমটা টানিয়া বাড়ি ফিরিতেছে, কেহ বা দীঘির ধারে বসিয়া উবু হইয়া বাসন মাজিতেছে, অপরের ঘোমটা মাথায় ডুব দিতেছে। অপেক্ষাকৃত নিজন একটা ধারে নামিয় গিয়া অজয় ক্লাস্ত পা-দুইটাকে ধুইয়া লইল । জল দেখিলেই কোন অজুহাতে তাহা স্পর্শ কর। তাহার স্বভাব ছিল। উঠিয়া আসিয়া রুমালে পা মুছিল, জুতার তলার আবর্জন ঘাসের উপর ঘসিয়া ছাড়াইল । ইচ্ছা করিতে লাগিল, এইখানে তৃণতটের উপর কিছুক্ষণ বসিয়া বিশ্রাম করিয়া যায়, কিন্তু স্নানাথিনীর লজ্জিত হইবে ভাবিয়া আবার সে পথ চলিতে লাগিল । ফুলের গন্ধ পাইতেছিল, কিন্তু ফুল কোথাও দেখিতে পাইল না। কাহারও বাড়ীর পশ্চাতে অযত্নবাৰ্দ্ধত বনের মধ্যে ফুটিয়া থাকিবে, ফুলের বাগান কোথাও চোখে পড়িল না । একটি ফুলকে শতটুকরা করিয়া শাস্ত্রমতে শতবার দেবতাকে অর্ঘ্য দেওয়া চলে, সুতরাং ফুলের এই অপ্রাচুর্ষ্যে সে বিস্মিত হইল না। উন্মুক্তদেহে জলপাত্র হস্তে গেীরকান্তি প্রৌঢ় এক ব্রাহ্মণ কৃষ্ণের শতনাম জপ করিতে করিতে আসিতেছিলেন, অজয় তাহার পাশ কাটাইয়া যাওয়ার পর ফিরিয়া দাড়াইয় তাহাকে আপাদ-মস্তক চোখ বুলাইয়। দেখিয়া লইলেন। অজয় যখন বেশ খানিকটা দূরে চলিয়া গিয়াছে তখন হঠাৎ প্রশ্ন করিলেন, “মশায়ের নিবাস ?” এতদূর হইতে কাহারও প্রশ্নের উত্তর দিতে অজয় অভ্যস্ত ছিল না, মনে মনে বিরক্ত হইয়া ব্রাহ্মণের কাছে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “বলরামপুর !" “কীখিলা-বলরামপুর না, উত্তর-বলরামপুর ?” “উত্তর-বলরামপুর ।” “মশায়ের নাম ?’ “শ্ৰীঅজয় রায় ।” “কি করা হয় ?” “আঞ্জে, ছাত্র, পড়ি ।” “কলেজে পড়েন ?” “আঞ্জে হ্যা ।” “কলকাতায় ?” “আজ্ঞে ইঁ্য ।” “আমার ছেলেটিও কলকাতায় পড়ে, এম-এ দিচ্ছে এবারে ” অজয়ের ঠোঁটের কোণে গভীর অবজ্ঞার অস্ফুট একটু হাসি থেলিয়া গেল । ব্রাহ্মণ বলিলেন, “নাম বললে আপনি চিনতে পারবেন বোধ হয়, সুভদ্ৰ—সুভদ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ?” অজয়ের এবারে ক্লাস্তি ধরিয়াছিল, অনাবশ্বক অনেকটা অতিশয়োক্তি করিয়া কহিল, "কলকাতায় সব মিলিয়ে দু-হাজার ছেলে এম-এ পড়ছে, সবাইকে চিনতে হ’লে আর-সব ফেলে তাই নিয়ে থাকতে হয় ।” অমনি হঠাৎ রাগিয়া ওঠা তাহার স্বভাব। কথাটা বলিয়াই কিন্তু তাহার অনুশোচনা বোধ হইল, মোলায়েম কিছু বলিয়া প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত কিনা ভাবিতেছে, এমন সময় ব্রাহ্মণ আবার প্রশ্ন করিলেন, “আপনার ?” মুহূর্তে আবার সব ঘোলাইয়া গেল, অজয় কহিল, “কায়স্থ । দক্ষিণ-রাঢ়ী, দক্ষিণ কর্ণ।” “আপনার পিতার নামটি কি জিজ্ঞেস করা হয়নি।” "শ্ৰীবিজয় রায়, পিতামহ দুর্জয় রায়, তার পিতা—” ব্রাহ্মণ এবার এমন বিস্মিত এবং ব্যথিত মুখ করিয়া তাহার দিকে তাকাইলেন, যে, অজয়কে কথার মাঝখানে থামিয়া যাইতে হইল। ঠিক অকুশোচনা করিবার মত । মান অবস্থা তখন আর তার লিনানে জয়শাল,