পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জ্যৈষ্ঠ শৃঙ্খল $ዓፃ গুইতেই পলাইতেছে এমনই ভাবে দ্রুত সেস্থান পরিত্যাগ করিল। অপর একব্যক্তি খোড়াইতে খোড়াইতে আসিতেছিলেন, তিনি সম্ভবত: একাধারে গ্রামের পোষ্টমাষ্টার এবং পিওন, হাতে একতাড়া চিঠি এবং কয়েকটা বাংলা-ইংরেজী খবরের কাগজের মোড়ক, জিজ্ঞাসা করিলেন, “মশায়ের নিবাস ?” অজয়ের মাথায় গতকল্যকার সেই মহা-উত্তেজনার মুহূৰ্ত্ত-কয়টি ভিড় করিয়া আসিল । দুর্গে দুৰ্গতিনাশিনি... দুৰ্গে দুৰ্গতিনাশিনি...শিশুদের চীৎকার, মেয়েদের কোলাহল ।.থপ থপ করিয়া পা ফেলিয়া এক স্থূলদেহ ভয়াপ্ত প্রৌঢ় ইষ্টনাম জপ করিতে করিতে তাহার মস্তিষ্কের মধ্যে ছুটয় বেড়াইতেছে ; কি দারুণ অস্বস্তিভর তাহার গতি ৷...কোনও উত্তর না দিয়া হন হন করিয়া অজয় পথ চলিল। হোচট না খাইয় গ্রামের মধ্যের পথটুকু উত্তীর্ণ হইতে পারিলে সে বঁাচে। গ্রামের শেষ প্রান্তে ছোট একটি নদীর ধারে বাজার, ঘাটে সারি সারি নৌকা বাধা রহিয়াছে। নৌকার গায়ের আলকাতরা ধুইয়া জল তৈলাক্ত হইয়া বহিতেছে, ঘোলাটে জলের গায়ে অস্ফুট সবুজ ও লাল রঙের নানা বিচিত্র নক্সা আঁকা হইতেছে, মিলাইয়া যাইতেছে। এক সঙ্গে শুকনা লঙ্কা, তামাক এবং গুড়ের গন্ধের বীজ অজয়ের নাকে আসিয়া লাগিল । বিষে বিষক্ষয় হইল। সেই গন্ধভারাক্রান্ত বাতাসে টানিয়া টানিয়া নিঃশ্বাস লইয়া তাহার মাথাটা আবার অনেকটা পরিষ্কার হইয়া গেল । শৈশবের বহু রহস্যময় অভিযানের অস্পষ্ট স্মৃতি জড়ানো এই গন্ধটি অজয়ের ভালও লাগিত । তখন ধুনা জালাইয়া দোকানপাট সবে খোলা হইতেছে, বাজার বসে নাই। ভোরের হাওয়ায় অনেকখানি বেড়াইয়া ক্ষুধাবোধ হইতেছিল। ষ্টেশনে বিছানার পাশে খাবারের চাঙারিতে বাড়ী-হুইতে-আনা লুচি মাংস প্রভৃতি আছে, কিন্তু সেই অপরিচিত অষ্টাদশীর সম্মুখে বসিয়া সে সেইগুলি গিলিতেছে মনে করিতেই তাহার সমস্ত অস্তর বিদ্রোহী হুইয়া উঠিল। খাবারের দোকান একটা রহিয়াছে দেখিয়া সে তাহার মধ্যে চুকিয়ু পড়িল । - একথান কাসার রেকারীতে খান-কয়েক বাসি কচুরী এবং গোটা-দুই সন্দেশ লইয়া সে সবে আহারে প্রবৃত্ত হইবে এমন সময় বাহির হইতে হঠাৎ কে প্রায় চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, “খাবেন না, খাবেন না, ফেলে দিন, ফেলে দিন!” এ আবার কি অভিনব স্পৰ্দ্ধিত অভব্যতা ভাবিয়া অজয় বিরক্তিতে ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া ফিরিয়া তাকাইল । যাহাকে দেখিতে পাইল সে যে পল্পী-সমাজের কেহ এমন মনে হইল না । গৌরবর্ণ দীর্ঘায়ত দেহ, মার্জিতন্ত্র উজ্জ্বলকাস্তি যুব, তাহার বেশ সাধারণ কিন্তু পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি, তাহার মুখভাবে চোখের দৃষ্টিতে বিংশ শতাব্দীর বুদ্ধিগৰ্ব্বিত সভ্যতাদীপ্ত আভিজাত্যের চিহ্ন সুপরিস্ফুট। করজোড়ে অভিবাদন করিয়া সে সহাস্তে কহিল, “ক্ষমা করবেন, আপনাকে বিরক্ত করলাম। কিন্তু এ অঞ্চলে কিছুদিন থেকে একটুআধটু ওলাউঠ হচ্ছে, বাজারের খাবার কিছুতেই খাওয়৷ চলতে পারে না।” অজয় খাবার ফেলিয়া উঠিয়া পড়িল । আগস্তুককে প্রত্যভিবাদন করিল, তারপর ভয় লুকাইয়া মুখে হাসি আনিয়া বলিল, “ভাগ্যে আপনি এসে পড়েছিলেন, তা না হ’লে খুবই বিপদ হতে পাবৃত।” যুবক বলিল, “আমি ওপারের চেরিটেবল ডিসপেনসারী থেকে কয়েকটা দরকারী ওষুদ্র নিয়ে এইদিক দিয়ে ফিরছিলাম, আপনাকে খাবারের দোকানে ঢুকতে দেখে প্রায় ছুটতে ছুটতে এসে পড়েছি ।” দোকানীর খাবারের দাম চুকাইয়া দিয়া দুজনে বাহির হইয়া আসিল । অজয় কহিল, “ধন্যবাদ।" যুবক কহিল, “ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। আপনি খেতে বসেছিলেন, বাধা দিলাম, এবারে সে অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে দিন।” “বাধা দেওয়াটা কি আপনার বিবেচনায় অপরাধ হয়েছে ?” “এই অবস্থাতেই যদি আপনাকে ছেড়ে দিই তাহলে অপরাধ হবে। আমার বাড়ী এই কাছেই। মাখন