পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀsՀ S99āు দায়ী করে । কিন্তু তাহদের জানা উচিত, বিভীষিকাবাদের প্রবলতম শক্র ও বিনাশকৰ্ত্তা কেবল তিনিই হইতে পারেন, যিনি চরম শাস্তিবাদী (pacificist) এবং বিভীষিকাবাদের বিরোধী যুদ্ধেরও বিরোধী। বিভীষিকাবাদের ও শান্তিবাদের বিরোধিতা একই মানুষ করিলে তাহার চিস্তাপ্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি দোষ আছে বুঝিতে হইবে। নিরস্ত্রীভবন কনফারেন্সে পুথিবীর স্বাধীন জাতিদের নিরস্ত্রীভবন বা নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব ও তাহার আলোচনা অনেক বৎসর হইতে চলিয়া আসিতেছে। কিন্তু প্রবল জাতির কেহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হইতে ত চাই-ই না, যুদ্ধসজ্জা কমাইতেও চায় ন। —সকলেরই ভয় পাছে আর কোন জাতির যুদ্ধসজ্জাট। বেশী রকম হইয়া ব থাকিয় যায়। এই জন্য নিরস্ত্রীকরণ বা নিরস্ত্রীভবনের প্রস্তাবটা আসিয়া দাড়াইয়াছে যুদ্ধের সাজসজ্জার লোপে নহে, তাহার হাসে । জলে স্থলে আকাশে তাহ কে কত কমাইবে, এখন তাহারই তর্ক-বিতর্ক চলিতেছে । জেনিভাতে এতদ্বিষয়ক কনফারেন্সের অনেক বৈঠকও হইয়৷ গিয়াছে। কিন্তু সকলের সাজসজ্জা কিছু কমিলেও কোন কোন জাতি কোন কোন জাতি অপেক্ষা প্রবল থাকিবে, যে-সব জাতি অন্য কোন জাতির দেশ দখল করিয়া আছে তাহদের তাহা দখল করিয়া থাকিবার ক্ষমতা লুপ্ত হইবে না, পরাধীন জাতির স্বাধীন হইতে পরিবে না, এবং বৈজ্ঞানিক যুদ্ধ ও যুদ্ধসজ্জা বিষয়ে অকুন্নত স্বাধীন জাতিদের স্বাধীনতা হরণ অপেক্ষাকৃত কম যুদ্ধসজ্জা লইয়াও অনেক জাতি করিতে পারিবে এবং সেইজন্য সেইরূপ দুষ্কৰ্ম্ম করিতে প্রলুব্ধ হইবে। অতএব কেবল হারাহারি সব স্বাধীন জাতির যুদ্ধসজ্জাহ্রাস দ্বারা পৃথিবী হইতে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ লুপ্ত করিতে ও শাস্তি স্থাপিত করিতে পারা যাইবে না। জগদ্ব্যাপী শাস্তি স্থাপন করিতে হইলে প্রত্যেক জাতিকে অন্যের সহিত যুদ্ধের সব সরঞ্জাম বর্জন করিতে হইবে । অবশ্য কেবল নিজের নিজের দেশে চোর ডাকাত গুণ্ড৷ প্রভৃতিকে নিয়মাধীন রাখিবার জন্য যেরূপ অস্ত্রশস্ত্র ও সিপাহী-শাস্ত্রীর প্রয়োজন, তাহ রাখিতে হইবে ; যেমন ডেন্মার্কে আছে । সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীভবনের প্রস্তাব জেনিভার কনফারেন্সে হইয়াছিল । খ্ৰীষ্টীয়ধৰ্ম্মাবলম্বী বলিয়া পরিচিত ইউরোপের অন্য সব দেশের লোক রুশিয়ার বলশেভিকদিগকে ধৰ্ম্মদ্রোহী ও নাস্তিক বলিয়া অবজ্ঞা করে, এবং আপনাদের ধৰ্ম্মের প্রবর্তৃক ধীশুখ্ৰীষ্টকে প্রিন্স অব পীস অর্থাৎ শান্তিরাজ বলিয়া অভিহিত করে । কিন্তু সকল জাতির নিরস্ত্রীভবনের এবং তদ্বারা সকলের যুদ্ধবল সমীকরণের প্রস্তাব খ্ৰীষ্টীয় বলিয়। অভিহিত কোন জাতির প্রতিনিধির দ্বার উপস্থাপিত হয় নাই—উপস্থাপিত হইয়াছিল ধৰ্ম্মদ্রোহী ও নাস্তিক বলিয়া অবজ্ঞাত সোভিয়েট রুশিয়ার প্রতিনিধি লিটভিনফের দ্বারা। তিনি প্রস্তাব করেন, যে, কন্‌ফারেন্সের কার্য্যের ভিত্তি সকল জাতির সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ নীতির উপর স্থাপিত হউক। তিনি তাহার প্রস্তাবের সপক্ষে যে যুক্তি দেখান তাহা এই, যে, যুদ্ধ হইতে নিরাপত্ত কেবল মাত্র অস্ত্রাদি যুদ্ধসজ্জা সম্পূর্ণ রহিত করিলে লব্ধ হইতে পারে, এবং সকল জাতি নিরাপদ হইতে পারে যদি সকলের নিরস্ত্র অবস্থার সাম্য জন্মে অর্থাৎ যদি সকলের যুদ্ধসঙ্গ কমাইয়া শূন্যে পরিণত করা হয়। লিটভিনফ বক্তৃত৷ শেষ করিয়া বসিবার পর সভাপতি সকল প্রতিনিধিপ মুখের দিকে তাকাইতে লাগিলেন–যেন কে অতঃপর কিছু বলিবেন তাহার প্রতীক্ষায়। তখন তুরস্কের ( কোনও খ্ৰীষ্টীয় জাতির নহে ) প্রতিনিধি টিউফিকু দাড়াইয়৷ বলিলেন, “আমি এই প্রস্তাবের পক্ষে, যদি ইহার মানে সাম্য হয় ।” তাহার পর পারস্তের প্রতিনিধি বলিলেন, “এই প্রস্তাব গৃহীত হইলে আমি সুখী হইব।" অতঃপর জামেনীর প্রতিনিধি বলিলেন, “আমার সহানুভূতি আছে।” গ্রীসের প্রতিনিধি “ঠাণ্ড জল ঢালিতে’ অর্থাৎ নিরুৎসাহ করিতে লাগিলেন, বলিলেন, “আগে পরম্পরে বিশ্বাস চাই। এই প্রস্তাব অস্ত্রসজ্জ-হ্রাসের ও নিরস্ত্রীকরণের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বাধা জন্মাইবে।” তদনন্তর স্পেনের প্রতিনিধি ইংরেজ সাইমন ও রুশ লিটভিনফের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্টা করিলেন, কিন্তু পারিলেন না। তার পর মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য