পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Wyo\9 S99áు তাহা হইলেও কতক নিশ্চিন্ত হইতে পারিতেন, কিন্তু ইহার নাছোড়বান্দ, কোনমতেই তাহাকে নিশ্চিন্ত হইতে দিত না । আর এমন করিয়া টাকাই বা কত কাল জোগাইবেন ? সময়-অসময় নাই, যখন-তখন তাহারা আসিয়া উপস্থিত হইত, আর শুধু হাতে কখনও ফিরিয়া যাইত না । যে টাকা তাহদের দিতে হইতেছিল তাহা ত্রিলোচনের হাতে থাকিলে তাহার মূলধন বাড়িত, সময়ে-অসময়ে কাজে আসিত । তাহারা যদি এরূপ আসা-যাওয়া করে তাহা হইলে অপর লোকের মনে একটা কিছু সন্দেহ হইতে কতক্ষণ ? যদি শৈলবালার কন্যার সঙ্গে কাৰ্ত্তিকের বিবাহ হইয়া যায় তাহা হইলে একটা দুর্ভাবনা দূর হয়, বিষয়-সম্পত্তি দেখিবার আর কোন ব্যবস্থা করিয়া ত্রিলোচন আর কিছু দিনের জন্য আর কোথাও চলিয়া যাইতে পারেন। অন্যত্র এরূপ আশঙ্কার কারণ হইবে না। আবার আর এক রকম অভিসন্ধি ত্রিলোচনের মনে উদয় হইত । ইহাদের মুখ বন্ধ করিতে পারিলেই ত সব গোল চুকিয়া যায়। এক কৰ্ম্মে যেমন ইহাদিগকে উত্তেজিত করিয়াছিলেন সেইরূপ কোন বিশ্বস্ত লোক দিয়া ইহাদেরও ত সরাইতে পারেন । কাটা দিয়াই ত কাটা তুলিতে হয়। ত্রিলোচনের মনে হইত না যে পাপের ইহাই নিয়ম । যে পাপ করে সে মনে করে যে, যেমন জল দিয়া রক্তচিহ্ন ধুইয়া ফেলা যায় সেইরূপ একটা দুষ্কৰ্ম্ম দিয়া আর একটা ক্ষালন করা যায়। ফলে মুছিয়া কিছুই যায় না, পাপের চিহ্ন আরও স্পষ্ট হয় এবং সংখ্যায় বাড়িয়া যায়। এই রকম করিয়া পাপের ভরা ভারী হয় ও সেই ভারে পাপপঙ্কে নিমগ্ন হইতে হয় । অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ রেলপথে হরিনাথ স্বাগতাকে পত্র লিখিয়াছিল গঙ্গাধর তাহা জানিত না । এরূপ পত্র-ব্যবহার তাহার অঙ্গুমোদিত নহে । তাহারা যে উদ্দেশ্যে বাহির হইয়াছিল তাহা গোপন না রাখিলে সফল হইবার কোন সম্ভাবনা নাই। তাহার নিজেদের নাম গোপন করিয়াছিল, গঙ্গাধর alo •, o' * : ... হরিনাথের নাম রাখিয়াছিল কিশোরীমোহন আর নিজের নাম রাখিয়াছিল ক্ষেত্রনাথ । সকল ভার গঙ্গাধর গ্রহণ করিয়াছিল, হরিনাথের বুদ্ধিতে কিছুই হয় নাই । তাহারা যে বাড়ির কোন সংবাদ পাইত না তাহাও নয়। গঙ্গাধর তাহার এক বন্ধুর সঙ্গে পরামর্শ করিয়া তাহার উপায় করিয়াছিল। সচরাচর যেমন চিঠিপত্র, লেখা হয় সেরূপ কোন সংবাদ আসিত না। কৌশল করিয়া গঙ্গাধর এক রকম সাঙ্কেতিক ভাষা উদ্ভাবিত করিয়াছিল । হয়ত কোন স্থানে ক্ষেত্রনাথ মল্লিকের নামে একখান টেলিগ্রাম আসিল, পাটের দর কি রকম ? অপর লোকে পড়িয়া মনে করিত ক্ষেত্রনাথ পাট খরিদ করিয়া বেড়াইতেছে। গঙ্গাধর ও হরিনাথ বুঝিত বাড়ির খবর ভাল । উত্তর যাইত, দর সেই রকম। যে টেলিগ্রাম পাইত সে বুঝিত দুই বন্ধু ভাল আছে। কোথাও একথান খোল চিঠি আসিল, চাউল আর কিনিতে হইবে না । তাহার অর্থ হইল, চিন্তার কোন কারণ নাই । এ রকম চিঠি বা টেলিগ্রাম কাহারও হাতে পড়িলে আশঙ্কার কোন কারণ ছিল না । কিন্তু হরিনাথ স্বাগতাকে যে পত্র লিখিয়াছিল তাহ যদি গ্রামের পোষ্ট আপিসে কেহ খুলিয়া পড়িত তাহা হইলে কয়েকটা কথা প্রকাশ হইয়া পড়িত। প্রথমতঃ হরিনাথ যে নাম ভাড়াইয়া কিশোরীমোহন বলিয়া পরিচয় দেয় তাহা জানা যাইত, আর কলিকাতায় তাহার বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ হইয়া পড়িত। ইহাতে তাহার প্রতি নানাপ্রকার সন্দেহ হওয়া সম্ভব । নাম ভাড়ায় কে ? যে কোন অপরাধ করে, আত্মরক্ষার জন্য গা ঢাকা দিয়া বেড়ায়, সে-ই নিজের নাম গোপন করিয়া একটা মিথ্যা নামে পরিচয় দেয়। হরিনাথ সে কথা ভাবিয়া দেখে নাই। সে গঙ্গাধরের সঙ্গে আসিয়াছিল স্বাগতার পূর্ব পরিচয় খুজিয়া বাহির করিবার জন্ত, কিন্তু সে নিজে কিছুই করিতে পারিত না, স্বাগতার রূপের মোহ তাহাকে মোহাচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছিল। এইমাত্র তাহার কৰ্ত্তব্যজ্ঞান অবশিষ্ট ছিল যে, গঙ্গাধরকে পরিত্যাগ করা