পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদেশের কথা শ্রীপারুল দেবী ভ্রমণকাহিনী পড়তে আমার নিজের বড় ভাল লাগে । মাসিক পত্রিকায় যখন কেউ দেশবিদেশ থেকে সে দেশের বর্ণনা ক’রে চিঠি পাঠান তখন সেগুলি পড়ে ঘরে বসেই আমি দূর দেশ বেড়াবার আনন্দ উপভোগ করি। খুবই বুঝি এ দেশের পাহাড়ের চেয়ে অন্য কোনো দেশের পাহাড়ের আকৃতিগত কিছু কিছু প্রভেদ লক্ষিত হলেও মোটের উপর পাহাড় পাহাড়ই, নদী নদী ছাড়া আর কিছুই নয় । কিন্তু তবু দূরের দেশের গাছ বন নদী পাহাড় যেন মায়ায় ঘেরা— কেবলই তার দিকে মন টানে। আমাদের বাঙালী মেয়েদের ইউরোপ-ভ্রমণের সুবিধা সহজে হয়ে ওঠে না । বছর বিশ-পচিশ আগে ত বিলাতফেরৎ বাঙালীর মেয়ে একটা দেখবার বস্তৃবিশেষ ব’লে গণ্য হতেন। আমাদেরই দু-এক জন বিলাত-প্রত্যাগত আত্মীয়াদের আমরা ছেলেবেলায় দূর থেকে ভয়ে ভয়ে দেখেছি ; কাছে ঘেষতে সাহস পাইনি। কার্য্যোপলক্ষে বা শিক্ষার জন্য বাঙালী পুরুষেরা অনেকে বিলাত যেতেন বটে, কিন্তু স্ত্রীদের সহগামিনী হওয়া তথনকার দিনে প্রচলিত ছিল না। আজ আর সেদিন নেই, স্ত্রীস্বাধীনতার প্রাবল্যে স্বামীরা এখন এক কোথাও যাবার কথা স্ত্রীদের সম্মুখে উত্থাপন করতে ভয় পান ; তা ছাড়া মেয়েরাও নিজেদের শিক্ষার জন্য এবং অন্য কারণে নিজেরাই এখন ইউরোপের নানা স্থানে যেতে শিখে গেছেন ; কাজেই এখন তাদেরও বিলাত যাওয়া অভাবনীয় ব্যাপার নয় । আমি এবার ইউরোপের কয়েকটি জায়গা দেখে এসেছি। তার মধ্যে লুসাণ থেকে যে রোন গ্নেশিয়ার ( Rhone glacier ) দেখতে গিয়েছিলাম, তার কথাই আজ একটু লিখবার ইচ্ছা আছে। লেখা আমার তেমন অভ্যাস নাই, লেখার অভ্যাস থাকলেও যা দেখেছি সে এতই অপরূপ কুন্দর যে, সে-সৌন্দৰ্য্য কাগজে কলমে ফুটিয়ে অপরকে দেখাবার মত ক’রে তোলা আমার এ হাতে সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। তবু লিখছি—যার অনেক দেশ বেড়িয়ে অনেক নূতন নূতন দুগু দেখে নূতনত্বের মায়াজাল কাটিয়ে উঠেছেন তাদের জন্য নয়। লিখছি আমাদের বাংলার নিভৃত পল্লীগ্রামে যে পুরনারীরা আহারাদির পর বিশ্রামের সময়টিতে একখানি মাসিকপত্র টেনে নিয়ে তার থেকে রসাস্বাদ করতে ভালবাসেন শুধু তাদেরই মনে ক’রে। অবসর কম, সংসারের সব কাজ সেরে কোলের ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে তার কাছে শুয়ে সে যতটুকু সময় ঘুমোয় অবসর সেইটুকুই। সামান্য একটুখানির জন্য সংসারের অত্যাবশ্বক চিন্তার ধারা থেকে মন ছুটি পায়—সে একটা কম লাভ নয়, সেই সামান্য একটুক্ষণের জন্য কোনো একটি গৃহকৰ্ম্মশ্রান্ত মনকে ছুটির আনন্দ যদি দিতে পারি সেই আমার পরম লাভ ব’লে মনে করব । লুসার্ণে গিয়ে শুনলাম সেখান থেকে দুটি বরফের নদী অর্থাৎ গ্নেশিয়ারে যাওয়া যায়। একটা হ’ল ইয়ুংফ্রাউ ( Jungfrau ) আর একটা হ’ল রোন গ্নেশিয়ার। রোন গ্নেশিয়ার থেকেই যে ওখানকার রোন নদীর উৎপত্তি তা ত নাম থেকেই বোঝা যায়, কিন্তু ইয়ুংফ্রাউ নামটি কেন হ’ল সে কথা বোঝা যায় না। লুসার্ণের অধিবাসীদের নিকট দুটি গ্নেশিয়ার সম্বন্ধেই নানারূপ কথা শুনতে লাগলাম—কেউ বলে রোন গ্নেশিয়ার যে না দেখেছে তার এদেশে আসাই বৃথা, আবার কেউ বলে গ্নেশিয়ারই যদি দেখতে হয় ত ইয়ুংফ্রাউই দেখা উচিত। কোনটাতে যাই, দু-দিন ধরে ত কিছুই ঠিক করতে পারলাম না। তারপর নানা মুনির নানা মত শোনবার অভিজ্ঞতা থেকে নিজেরা পরামর্শ করে বুঝলাম যে, ইয়ুংঙ্কাউ হ’ল রোন গ্নেশিয়ারের চেয়ে অনেক উচ, তাই খেলীয় ভাগ লোকে উচুতে চড়বার আনন্দে সেইখানেই