পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬১৬ স্থানে তুষারধবল পাহাড় দেখব কল্পনা করেছিলাম, তা ন! আবার সেই কাফে । সামনে একটু এগিয়েই দেখি একটা গেট, সেখানে টিকিট বিক্রী হচ্ছে । টিকিট নিয়ে গেট পেরিয়েই সামনে যে কি অপূৰ্ব্ব দৃশু চোখে পড়ল সে ভুলতে পারব না কখনও। শুধু বরফের পাহাড়, তাতে মাটি নেই, পাথর নেই, গাছপালা নেই, একটি কালো দাগ পর্য্যন্ত নেই। আমরা বরফের পাহাড় বোঝাতে হলে সাদা বলি, দুর থেকে যে বরফের পাহাড় দেখতে পাওয়া যায় সূর্ঘ্যের আলো পড়ে তা সাদাই দেখায়। কিন্তু বরফের পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে দেখলাম তার রং ঠিক সমুদ্রের জলের মত নীল। সমুদ্রের ঢেউ যেন জমে বরফ হয়ে গেছে । তার উপর রৌদ্র পড়েছে—সেই নীল শৈলশিখরের উপর কি অপূর্ব বর্ণসমুদ্র-স্তরে স্তরে সেই চূড়ার পর চূড়া কত রকম আভা জড়িয়ে কত দূর অবধি চলে গেছে, চোখ আর ফেরানে। যায় না। আমাদের মহাদেবকে যে পৰ্ব্বতরুপে কল্পনা করা হয় তার একটা মানে বুঝেছি এবার। প্রকৃতির এই অপূৰ্ব্ব বিরাট সৌন্দৰ্য্য দেখে শুধু উপভোগ করা যায় না, একে প্রণাম করতে হয়। একটু এগিয়ে আমরা বরফের উপর দিয়ে চলে একেবারে পাহাড়ের গায়ে গিয়ে দাড়ালাম । সে সময়ে বেশী দূরে যাওয়া মান । তথন জুলাই মাস, বরফ একটু একটু গলছে, ঐ রকম গলা বরফের উপর পা দিয়ে কত লোক একেবারে বরফ ভেঙে তার সঙ্গে সোজা হাজার হাজার ফিট নীচে যেখান দিয়ে রোন নদী বয়ে যাচ্ছে সেইখানে গিয়ে পড়েছে, তাদের আর কিছুমাত্র চিহ্ন পাওয়া যায় নি। শীতকালে বরফ গলে না, সে সময়ে দড়ির জুতো প’রে অনেকটা ওঠা যায় শুনলাম । বরফের পাহাড়ের গায়ে সুড়ঙ্গ কেটে তার মধ্যে আবার রাস্ত করে পয়স রোজগারের একটা উপায় করা হয়েছে—টিকিট কিনে তবে সে সুড়ঙ্গের মধ্যে যাওয়া যায়। আমরাও ঢুকলাম। একজন চলবার মত চওড়া স্থড্রঙ্গ—সাধারণ মানুষ বেশ সোজা হয়ে চলতে পারে—খুব লম্বা লোকের পক্ষে হয়ত একটু মুলি হয়। প্রথমে-চুকেই দেখি নীল অৱক্ষ ড়েদ করে একটা নীল রঙের স্বর্ঘ্যের আভা স্কুড়ঙ্গের ভিতর এসে পড়ছে। মাথার উপরের বরফের ছাদ দিয়ে 彎 SOOāు করে জল পড়ছে। হিমশীতল বরফের দেওয়াল চার দিকে— ঠাণ্ডায় যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। যত ভিতরে যাই ক্রমেই অন্ধকার হয়ে আসতে লাগল ! কতট আরও যেতে পারা যেত জানি না, আমার কিন্তু মনে হ’তে লাগল যদি পাহাড় ধ’সে এখন মাথার উপর পড়ে ত একেবারে সমাধি । যত সে কথা ভাবি তত প্রাণ হাপায় আর মনে হয় যে এখন ত বরফ একটু একটু ক’রে গলছেই, এ সময়ে পাহাড় ধ’সে পড়া কিছুমাত্র আশ্চৰ্য্য নয় । আমার মেয়ে আবার কিছুতে আমাকে ফিরতে দেবে না, হাত ধরে টেনে এগিয়ে নিয়ে চলল। আরও খানিকটা কষ্টেস্তষ্টে এগিয়ে শেষট আর পোষাল না—তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে আলোর মুখ দেখে, স্বর্ঘ্যের তাপ পেয়ে বাচি । সেই অন্ধকার তুষার-গুহা থেকে বেরিয়ে আবার যখন চোখে পড়ল সেই অপরূপ নীল পাহাড়, তার কত—কত নীচে দিয়ে সরু রেখার মত নীল জলের নদী বয়ে গেছে, তখন নূতন ক’রে আবার মনে হ’ল কি অপূৰ্ব্ব ! উপরে নীল উজ্জল আকাশ আর নীচেই সেই জম। সমুদ্রের তরঙ্গের মত বরফের স্তপ ! উৰ্দ্ধমুখে দাড়িয়ে যেন ধ্যানমগ্ন শিবের স্থির গম্ভীর বিরাট দেহ । মনে হ’তে লাগল আমরা ত চলে যাব- তারপর অপরাহ্লে যখন সূৰ্য্যাস্তের আকাশের শত শত রঙ এর উপর প্রতিফলিত হবে সে কেমন না জানি দেখাবে। তারও পরে রাত্রি নেমে আসবে, ঘন নীল আকাশের অসংখ্য তারার মৃদু আভায় কে জানে কেমন দেখাবে এই অপরূপ দৃশ্ব ? দিনের আলোয় যাকে অপরূপ দেখে এসেছি, রাত্রির আবরণের মধ্যে তাকে কেমন দেখায় আজও এক এক সময় ভাবি । তাড়া পড়ল, বুঝলাম আর সময় নেই। কিছুতেই ইচ্ছা করছিল না সেই বরফের পাহাড়ের কোল থেকে চলে আসি। কিন্তু আসতেই হ’ল । সেখান থেকে মোটর আমাদের নিয়ে হু হু ক’রে নীচে নামতে লাগল। প্রায় তিন কোয়াটার ধ’রে নেমে আমরা সেই গ্নেশিয়ারের পায়ের তলায় নদীটির ধারে গিয়ে পৌঁছলাম। উপর থেকে একেই একটি রেখার মত »r দেখাচ্ছিল | ਜੋੜ দুই পাশে অনেকটা ক’রে সমতল ভূমি, সেখানে ছোট ছোট সব ঘর-বাড়ি । তা ছাড়া কাফে ত আছেই। ছোট ছোট বাড়িগুলি থেকে কত