পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র মেয়েরা বাইরে এসে দাড়িয়ে আমাদের দেখতে লাগল। তাদের একরকমের পাহাড়ী পোষাক, হাসিমাথ উজ্জল সরল মুখ, গোলাপফুলের মত রং । আমরা প্রথমেই রেস্তোরাতে না ঢুকে, একটা ছোট পাহাড়ে উঠে নিজেদের আনা খাবার বের করে খেতে বসলাম । একটি ছোটবাড়ি থেকে দুটি মেয়ে এসে কত কি বললে । বুঝলাম না কিছুই, তবে মনে হ’ল ভিতরে গিয়ে বসতে বলছে । হাত-পা নেড়ে কোনো রকমে তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, ঘরের মধ্যের চেয়ে বাইরে বসে খেতেই আমাদের ভাল লাগে । তারপর খাওয়া হ’লে একবার তাদের ঘরে ঢুকলাম-কত আগ্রহে যে তারা নিজেদের বাড়িটি আমাদের দেখাতে লাগল তা বলতে পারি না । তারা বোধ হয় রোম্যান ক্যাথলিক—বাড়িতে একটি স্বতন্ত্র পূজার ঘর দেখলাম, সেখানে মেরীর মূৰ্ত্তি, দুই পাশে ফুল, মোমবাতি সাজান, দেওয়ালে যিশু ও মেরীর নানারূপ ছবি টাঙান। খানিক পরে বিদায় নিয়ে আমরা সেই রেস্তোরার দিকে অগ্রসর হলাম। যতক্ষণ ন৷ দৃষ্ট্রিপথের বাইরে গেলাম, বাড়ির সব মেয়ে-পুরুষেরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাদের দেখতে লাগল, আর হাত নাড়তে লাগল। রেস্তোরাতে ঢুকে আমরা আইস্ক্রীম খেলাম, তখনও প্রায় আধ ঘণ্টা সময় ছিল । বেল প্রায় আড়াইটায় আমরা আবার ছাড়লাম—আসবার বিদেশের কথা ৬১৭ পথটা ঢালু বলে খুব শীঘ্র ফেরা যায় ; সাড়ে তিন ঘণ্টা লেগেছিল পৌছতে, কিন্তু তিন ঘণ্টা লাগে ফিরে আসতে। সারা পথ সেই পাহাড়ের অপরূপ বিরাট নীল মূৰ্ত্তি চোখে ভাসতে লাগল। লুসার্ণের হোটেলে যখন রোন গ্লেশিয়ারের সুড়ঙ্গ ফিরে এলাম তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । মনে হ’তে লাগল পাহাড়ের সেই শুভ্র চূড়ায় এখন আর দীপ্তি নেই। এতক্ষণে সে নীলনয়ন স্বন্দরীর বিষাদভরা চোখের দৃষ্টির মত মান হয়ে এসেছে নিশ্চয়। সেখানে যারা ঘরবাড়ি ক’রে আছে, তারা কি সেই বিরাট রূপের নব নব সৌন্দর্য্য প্রতিদিন মন দিয়ে দেখে ? কে জানে ?