পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাদ্র জলধার-সব এক অলৌকিক আলোকে ঝিলিমিল করতে লাগল ; সে আলো মুগ্ধ করে না, বুকের রক্তে দোলা দেয়। থাড়িখানা মৃতের মত শুষ্ক, সাড়াহীন। অনেক ডাকাডাকির পর এক পশ্চিমে চাকর বার হয়ে এল, তার জল জলে রাঙা চোখ, লম্বা কালো দাড়ি, মাথায় মোট ঝুটি, সন্ধ্যার রঙীন আলে। তার ওপর পড়ে তাকে ত পার্থিব করে তুলেছে । চাকরটি জানালে যে, সাহেব মেমসাহেব কেউ বাড়িতে নেই, তবে এক ঘণ্টার মধ্যে মেমসাহেব আসবেন আশা করা যায়। বেডিং স্কটকেশ নামাতে বলে টাঙার ভাড় চুকিয়ে বাড়িতে ন ঢুকে বাগানের দিকে গেলাম। ড্রয়িং-রুমের সামনে ফুলের বাগান নদীর তীরে ; ওদিকে নদীতে প্রায়ই চড় পড়ে থাকত, বালির ওপর বহুদূরে জল ঝিকিমিকি করত । ফুলের বাগানটি ছিল আমাদের অতি প্রিয় ; কি শরতে কি শীতে যখনই গেছি, দেখেছি, বাগানে ফুলের ঐশ্বধ্য উপচে পড়ছে,—গোলাপ, ক্রিসেনথিমাম, ডালিয়, য়্যষ্টির, প্যান্সি, কারনেশন, লিলি, আমরনথাস্—রঙের ফুলঝুরি ; সকাল বিকাল বেতের চেয়ারে বসে ওখানে আমাদের চায়ের আড়ী ও গানের সভা হ’ত । কিন্তু বাগানে ঢুকে চোখে জল এল ; কি উদাস করা তার রূপ । সারাদিন রোদে ঘুরে জলে ভিজে না খেয়ে মা-হারা দস্তি ছেলে যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে তার যেমন উস্কপুস্ক করুণ মূৰ্ত্তি হয়, এ তেমনি মলিন বেদনায়। কেতকীর ঝাড় ভেঙে পড়েছে, গোলাপের ডাল সব মাটিতে লোটাচ্ছে, করবীর ঝোপ লণ্ডভণ্ড ; যদি কোন ফুল না ফুট্‌ত, সমস্তটা যদি জঙ্গল হরে যেত, তাহলে অত খারাপ লাগত না ; কিন্তু সেই অযত্ন-রক্ষিত বাগানে মাঝে মাঝে ফুল ফোটার প্রয়াস বড় করুণ। মনটা খারাপ হয়ে গেল, আর কনকনে শীতের বাতাসে বেশীক্ষণ বাইরে থাকতে ইচ্ছাও করল না, ব্রারান্দ পার হয়ে ড্রয়িং-ক্লমে ঢুকলাম। * : ::::് প্রশস্ত ঘর, মুন্দর সাজান। ঘরের মাঝে রাশিচক্র ঙ্গাঙ্ক কারুকার্য্যময় পেতলের গোল টেবিলের ওপর এক মোরাদাবাদী ফুলদানিতে মাসেল নীল ভর, তার হলায় - हेब्रां রং পেতলের রঙের সঙ্গে মিশে গেছে ; টেবিলের ডিন। দিক জুড়ে লক্ষ্মেী ছিট দিয়ে ডবল প্লিঙের গদি-মোড়া সোফা, সেত্তি, চেয়ার সাজান ; চারকোণে পেতলের বড় গামলাতে পাম গাছ। স্কাই-লাইটগুলি দিয়ে ঝর সন্ধ্যার মলিন আলোতে সব অস্পষ্ট আবছায় দেখাচ্ছিল ; বলাকার দল আঁকা জমিরঙের পর্দাট। সরিয়ে একটা ফ্রেঞ্চ-জানালা খুলে দিলুম ; বাহিরে আকাশ আরও রাঙা হয়ে উঠেছে, ভয়ঙ্কর কালে মেঘপুঞ্জের ফাক দিয়ে ঝরা সে আলো, যেন কোন তীরবিদ্ধ কালে পার্থীর বুক থেকে রক্ত ঝরে পড়ছে। সে অপূৰ্ব্ব রঙীন আলোয় ঘরটা অবাস্তব হয়ে উঠল। চোখে পড়ল, ফায়ার প্লেসের ম্যান্টেলপিসের ওপর নটরাজের ব্ৰঞ্জের মূৰ্ত্তি, নীল দেওয়ালে যেন কালে কালীতে অঁাক, এই মূৰ্ত্তিটির সঙ্গে বাড়ির পাশে দিগস্তবিস্তৃত বক্রণীর্ণ শাখাময় গাছটির সাদৃশ্য অনুভব ক’রে চমকে উঠলাম, সে গাছটিও যেন এই মূৰ্ত্তিটির মত কোন তাণ্ডবনৃত্যে যোগ দিতে চায় ! মূর্তিটির ওপর দেওয়ালে এক বড় ছবি—ভান গকের “স্বৰ্যমুখীফুল”—মেহগনির ফ্রেমে বাধান, এ ছবিটা আমি পাঠিয়েছিলাম মুনসেন থেকে ইরার বিবাহের উপহার রূপে । রঙীন আলোছায়ার স্বর্ণপীতবর্ণের ফুলগুলি আগুনের ফুলকির মত জলজল করে উঠল। ঘরটি আগেকার মতনই সাজান, তবু সব জিনিষ কেমন অজানা, ঘরে-বাইরে অলৌকিক আলো ; বড় আসোয়াস্তি অনুভব করলাম । ফায়ার প্লেসের ডানদিকে দরজা, পাশের ঘরে যাবার ; বঁদিকে রিভলভিং বুক কেস। বুক কেসের ওপর ম্যাগাজিনের গাদা ঘাটতে গিয়ে এক ছবির ম্যালবাম হাতে ঠেকূল, সেইটা নিয়ে একখান চেয়ার টেনে বস্লাম ফ্রেঞ্চ-জানলার কাছে স্বাই-লাইটগুলি নিম্প্রভ হ’য়ে এল, যেন ঘুম-পাওয়া ছেলের ক্লাস্ত চাউনি ; সিলিংর পর খানিকট দেওয়াল হলদে রঙের তারপর হাঙ্গা নীল, যেন একটা হলদে পাড়ের নীলশাড়ি বৃদ্ধদিনের ব্যবহারে মুলিন, সন্ধ্যার আলো-ছায়ায় টেবিলছোঞ্জ স্থানী পিয়ানো সৰ ঘর কঙ্কণ কাতরতা ভরা। ক্ষম প্রফুল্প করতে স্বালবামটা খুললাম, ইরার ফটোর ηε