পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র সহিত শিকারে গিয়াছিলেন, গুপ্তচরদের মুখে খবর পাইয়া শিশোদিয়া সামন্তগণ মহারাণাকে বলিলেন এমন স্থযোগ ছাড়া হইবে না ; শক্রকে বধ করা চাই। কিন্তু ঝালাসর্দার বীদার ( মানসিংহ ) মতাচুসারে মহারাণ র্তাহাদিগকে এ কার্য্য হইতে নিরস্ত করিয়া বলিলেন, ছল দাগাবাজী দ্বারা শক্রকে বধ করা প্রকৃত ক্ষত্রিয়ের কাজ নহে * এই গল্পটিতে কোন ঐতিহাসিক সত্য আছে কি-না সন্দেহ । মোল্লা বদায়ুনী কোন শিকারের উল্লেখ করেন নাই। বিশেষতঃ মহারাণ। ছল-কৌশলে (guerilla warfare) coiois-Rioja of s so করিয়াই অবশেষে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছিলেন ; হুলদীঘাটের যুদ্ধ ছাড়া খোলা ময়দানে তিনি মোগলদের সহিত আর কখনও লড়াই করেন নাই। সত্যই যদি মানসিংহকে হাতে পাইয়ু মহারাণ ছাড়িয়া দিয়া থাকেন সেটার জন্য ক্ষত্রিয় ধৰ্ম্মের দোহাই দেওয়া অনর্থক । ইহাতে বুঝা যায় মানসিংহের উপর মহারাণার কোন ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল না। ১৫৭৬ খৃষ্টাব্দের ১৮ই জুন প্রাতঃকাল হইতে দ্বিপ্রহর পর্য্যস্ত খমনোরের নিকট মেবার ও মোগল সৈন্তের ঘোরতর সংগ্রাম হয়, কুমার মানসিংহের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৫,০০০ অশ্বারোহী এবং কয়েকটা জঙ্গী হাতী। মোগল-বৃহের মাঝখানে হস্তিপৃষ্ঠে স্বয়ং মানসিংহ ও কয়েক জন মুসলমান মনসবদার, দক্ষিণ ভাগে সৈয়দ আহমদ খাঁর অধীনে রণকুশল ও সাহসী বাবৃহী সৈয়দগণ, বাম ভাগে কাজী থার (গাজী খাঁ ?) নেতৃত্বে মুসলমান পল্টন, এবং রায় লুনকরণের অধীনে একদল রাজপুত, কুমার মানসিংহের সম্মুখে এবং হরাবলের পিছনে কিঞ্চিৎ ব্যবধানে তাহার বড় ভাই মাধোসিংহের অধীনে এক পণ্টন রাজপুত সৈন্য । সামরিক পরিভাষায় সৈন্তের এই বিভাগকে “আলতামশ” বলা হইত। কেন্দ্রস্থ সৈন্যদলের পিছনে পৃষ্ঠরক্ষী সেনাদলের অধিনায়ক ছিলেন যেহুতর খ, বাদশাহী ফৌজের হরাবলে রাজপুত পণ্টনের অধ্যক্ষ ছিলেন জগন্নাথ কচ্ছবাহ, এবং মুসলমানদের সেনাপতি ছিলেন আলফ খ। ঐতিহাসিক মোল্লা আবদুল কাদের

  • রাজপুতানেকে ইতিহাসে উদ্ধৃত (৩র ভাগ, পৃ. ৭৪৪) ।

হলদীঘাটের যুদ্ধ ও মহারাণ। প্রভাপের শেষজীবন ७११ বদায়ুনী হরাবলের মাঝখানে আসফ খার পাশেই সওয়ার ছিলেন। হরাবলের এক অংশের নাম ছিল হরাবলের "মোরগবাচ্চা”। ইহার হাবল হইতে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়৷ সৰ্ব্বপ্রথমেই শক্রর সহিত যুদ্ধ করিত। “মোরগবাচ্চারা” সংখ্যায় আশি-নব্বই জন, সৈয়দ হালিম বাবৃহার নেতৃত্বে যুদ্ধার্থ প্রস্তুত রহিল। অপর পক্ষে মহারাণ র্তাহার ৩,০০০ অশ্বারোহীকে যথারীতি বিভাগ করিয়া আক্রমণের জন্য যাত্রা করিলেন । মহারাণার সৈন্যসংখ্যা অল্প হইলেও পাহাড়ের আড়ালে থাকায় সমতলভূমির মোগল-সৈন্তের যে-কোন ভাগ আক্রমণ করিবার স্থবিধাটুকু তাহার ছিল। মেবারসৈন্তের পাঠান বাহিনী হাকিমী খাঁ সুরের নেতৃত্বে মোগলসৈন্তের সম্মুখস্থ পশ্চিম দিকের পাহাড় হইতে বাহির হইয়া বরাবর ‘মোরগবাচ্চাদের উপর চড়াও করিল। উচু নীচু জমি, টিল, টঙ্কর ও কাট জঙ্গলের মধ্যে মোগলের বেকায়দায় পড়িল। পাঠানের মোরগবাচ্চাদের তাড়াইয়া হরাবলের মধ্যে ঢুকাইয়া দিল । ( Haraisal u jauja-i-Harawal cke shad ) । তাহাদের নেতা হাসিম বার্হ ঘোড়া হইতে পড়িয়া গিয়াছিলেন , সৈয়দ রাজু তাহাকে উঠাইয়া আনিল। ঠিক এই সময়ে রাজপুত সেনা ঘাটি হইতে বাহির হইয়া মোগল-সৈন্তের বামপাশ্ব আক্রমণ করিল। মেবার-বাহিনীর হরাবলের অধিনায়ক ছিলেন বীর জয়মলের পুত্র রামদাস রাঠোর, মধ্যভাগে স্বয়ং মহারাণা, দক্ষিণ দিকে রাজ রামশা ( গোয়ালিয়র ), বামদিকে ঝালাবীদা (মানসিংহ ), ঘাটি হইতে বাহির হওয়ার সময় মহারাণার দক্ষিণ পক্ষই সৈন্যদলের অগ্রেঞ্চ ছিল । তাহারা ঘাটির

  • বায়ুনী লিখিয়াছেন Ram Sah Gawalaori --- ke pesh pesh-í-Ièama me-amad অর্থাৎ রাম শী যিনি রাণার অাগে আগে আসিতেছিলেন। কিন্তু লো সাহেব ইহার অনুবাদ sfănt sa Ram Shah..... who always kept in front. ইহাতে মূলের অর্ধ বিকৃত হইয়াছে। বায়ুনীর বর্ণনায় দেখা যায় রামশার আক্রমণে মোগল হরাবলের বাম দিক হইতে (a chap-iHarawal) মানসিংহের রাজপুতেরা (যাহাদের সর্দার ছিলেন লুন করণ) ভেড়ার না পলাইছিল। হতরাং মনে হয় রামশা প্রথমে ঘাটি হইতে বাহির হইয়া মোগলদের বাম পক্ষ আক্রমণ করিয়াছিল।