পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سياسي واد\ “ই ই, আমরাও তাই বলি—” খুড়ে খুশী হইয়া চলিয়া যায়। - দিন চলে। কিন্তু যশোদার বিবাহের দিকে যদুর তাগিদ দেখা যায় না। ব্যবসায় আর তাহার মনও নাই । খরিদদারও কমিয়া গিয়াছে। অবস্থাও খারাপ হইয়। পড়িল । না বাহির হইলে খরিদদার থাকে না । চক্ৰবৰ্ত্তী-বাবুদের কাছে কিছু টাকা বাকী পড়িয়াছিল। একদিন তাগাদায় গিয়া যদু নিজের আর্থিক অবস্থার কথা পাড়িয়া বসিল । ছোটবাবু স্পষ্টবক্তা লোক । তাহার ধারণা মানুষের কেবল মস্তিষ্কই আছে। কহিলেন, “লোককে ঠকালে কি খরিদদার থাকে ?” তিনিও ঠকিয়াছেন, এই ধারণায় যদুর প্রাপ্য অৰ্দ্ধেক কাটিয়া লইলেন । ইহার উপর হাত নাই। বাকী অৰ্দ্ধেক লইয়াই যদু মুথে হাসি ফুটাইয় তোলে । তখন বর্ষাকাল । গ্রামের পুষ্করিণী ও ডোবাগুলি জলে কানায় কানায় ভরিয়া গিয়াছে । তাহার ধার হইতে অবিশ্রান্ত ভেকের ডাক ও সজল হাওয়ায় সিক্ত তরুপত্রের মৰ্ম্মরোচ্ছাস ভাসিয়া আসিতেছে । অন্ধকার করিয়া কয়দিন হইতে ঝুপঝাপ বৃষ্টি । যশোদা ভিজিয়া ভিজিয়। ঘর-সংসারের কাজ-কৰ্ম্ম করিয়া বেড়াইয়াছে। একবারও গা-মাথার জল শুকাইতে পায় নাই । সেদিন যদু শহরে বাহির হইয়া যাইবার পর হইতেই তাহার প্রবল জর আসিল । ঘরে ফিরিয়া তাহার মুখের দিকে তাকাইয়া যদুর বুকের ভিতরটা কঁাপিয়া উঠিল । যশোদার নিমীলিত দুই চোখের কোণ বহিয়া জল গড়াইয়। পড়িতেছে। সে চারটিকেও যে এমনি বর্ষায় ভাসাইয়া দিয়াছে ! এ বর্ষ। কি যশোদাকে লইয়া যাইবে ? যদু কপালে করাঘাত করে আর বিধাতাকে ডাকে । একবিন্দু ঔষধ পড়ে ন, একটি বৈদ্যও আসে না। যশোদার হুস নাই । ডাকিলে সাড়া দেয় না ; তাহার দিকে একবার চোখ মেলিয়া তাকায়ও না । দুই দিন দুইরাত্রি এই ভাবে কাটিয়া যায়। গাভীগুলির যদু বা রাখালের হাতে খাইয়। পেট ভরে না । এদিক-ওদিক তাকাইয়। সারাদিন “মা”— “মা” রবে ডাকাডাকি করে, যশোদাকেই । যন্ত্ররও পেটে & প্তপ্রবচনা • S99ఉు অন্ন নাই ; মুখেও কিছু রুচিতেছে না । অন্নজলদাত্রী যে শয্যায়। কয়দিন আগেকার ভাজা মুড়িতেই সে ক্ষুণ্ণিবৃত্ত্বি করিতেছে। বাচুক, তাহার যশোদা বাচিয়া উঠক । কপালগুণে তৃতীয় দিন হইতে জ্বর কমিতে আরম্ভ করিল। আশা-আনন্দে যদুর বুকখানা ভরিয়া গেল । সংবাদ পাইয়৷ মহেশ-খুড়ে আসিল । কহিল, “ঘরে একটা মেয়েছেলে থাকুলে আজ কত সাহায্য হ’ত ।” যদু মাথা নাড়িয়া কহিল, "যথার্থ কথ। । আমার যশোদার যত্ন-আত্তি হ’ত । আমি কি সব পারি ? আর কট। দিন সবুর কর—” খুড়ে আশ্বস্ত হয় । ক্রমে যশোদা সুস্থ হইয়া উঠিল । যদু তাহাকে কোন কাজে হাত দিতে দেয় না ; নিজেই সব করে । অপটু হাত ; কোন কিছু গুছাইয়া করিতে পারে না । যশোদ সস্নেহ হাস্তে বলে, “তুমি রাখ বাব । আমি সব পারব। এখন ত ভাল হ’য়ে গেছি—" “হু ! তোর শরীরের আর আছে কি ? মুখথান একেবারে শুকিয়ে গেছে । ডব ডবে চোখ-দুটোর সে চাউনি আর নেই—” “বাবার যেমন কথা । “আচ্ছা-আচ্ছা” ছুটে । শরীরে কি হয়েছে আমার ?” বলিয়া যদু গোয়ালের দিকে দেখিতে দেখিতে অগ্রহায়ণ আসিয়া পড়িল । পাকা ধানে মাঠগুলি ভরিয়া গিয়াছে। খুড়োর মুখে যদু শোনে, দেরি দেখিয়া নিতাই ঘোষের ছোটছেলের অন্য জায়গায় সম্বন্ধ হইতেছে । মেয়েপক্ষ দান দিধে অনেক, —মেয়েটি তেমন ভাল নয়। যদুর চমক ভাঙিল। সে ছুটিয়া গেল সেই পুরোন-কুষ্টে ছেলের বাড়ি । তাহার কিছু নাই সত্য, কিন্তু এমন লক্ষ্মীপ্রতিমা মেয়ে কয়জনের ঘর আলো করিয়া আছে ? সে কেমন করিয়া বুঝাইবে, যশোদাকে দান কর। আর তাহার হৃদপিণ্ড ছিড়িয়া ফেলা সমান। অনেক বলা-কওয়ায় ছেলে-পক্ষ রাজী হইল । কহিল, “দান চাই-পঞ্চাশ টাকা নগদও দিতে হবে ।” টাকা ? টাকা সে কোথায় পাইবে দান দিবে ঐ