পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র মধ্যে রাজুকেই নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়ি পাঠাইতে বোধ হয় প্রস্তাপের সবচেয়ে আপত্তি ছিলু । কিন্তু নিরুপায় হইয়া তাহাই তাহাকে করিতে হইল। কাগজ-কলম লইয়। ফশ ফশ করিয়া কয়েক লাইন লিখিয়া কাগজখানা মুড়িয়া সে রাজুর হাতে দিল । বলিল, “তিনি ত কোনোদিনই এ সময় বাড়ি থাকেন না, মিহিরের হাতেই চিঠিখানা দিয়ে g್ಲಿ !? রাজু বলিল, “কেন তার দিদির হাতে দিলে কি ক্ষতি ? নৃপেনবাবু যতক্ষণ বাহিরে থাকেন, ততক্ষণ মিস সরকারই ত বাড়ির কত্রী।” প্রতাপ বিরক্তভাবে বলিল, “যা তোমার অভিরুচি। চিঠিখনো পৌছলেই হল,” বলিয়। পাশ ফিরিয়ু শুইল । রাজুর ঠোঁটের কোণে একটু হাসি দেখা দিল। চিঠিপান। পকেটে রাখিয় ধীরেসুস্তে সে কাপড় বদলাইয়া চল আঁচড়াইল, জুতাটাকেও একবার বুরুষ করিয়া লইল । তাহার পর বাহির হইয় গেল। সে চলিয়৷ যাইতেই প্রতাপ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া এই পাশ ফিরিয়া শুইল । মনট তাহার অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিল । আসলে ব্যাপারখানা কিছুমাত্র সাংঘাতিক হয় নাই । নৃপেনবাবুর প্রতিবেশী একটি যুবকের সহিত রাজুর আলাপ ছিল । তাহার সঙ্গে কোথায় বেড়াইতে যাইবার সময় পথে নৃপেন্দ্রবাবুর গাড়ীতে তাহারা যামিনীকে দেখিতে পায়। যামিনীকে দেখিলে তাহার সম্বন্ধে কোনো কৌতুহল প্রকাশ না করা সাধারণ যুবকের পক্ষে সম্ভব নয়। ব:জু যখন জানিল এই সুন্দরী তরুণীটিই প্রতাপের ছাত্রের ভগিনী, তখন প্রতাপকে একটু খোচাইবার ইচ্ছা তাহার প্রবল হইয়া উঠিল । প্রতাপের অতিরিক্ত ধাৰ্ম্মিকভাট। রাজুর একেবারে পছন্দসই জিনিষ ছিল না। যুবকসুলভ কোনো লঘু আলোচনায় সে কখনও যোগ দিত না বলিয়া সে যুবকসমাজে একটা উপহাসের পাত্র ছিল । রাজু মনে মনে কহিল, "দাড়াও বাছ, তোমার ডুবে ডুবে জল পাওয়া বার করছি।” প্রতাপ অসুস্থ হইয়া পড়িয়া অনেকখানি বাচিয়া গেল, যদিও নিজে সেটা বুঝিল না। প্রতাপের চিঠি লইয়া নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়ি যাওয়ার ভিতর রাজুর বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। যা-ত গল্প রচনা মাতৃ-ঋণ ts)وا\ করিয়া প্রতাপকে ক্ষেপানো যাইবে এই যা লাভ, আর ফাঁকতালে যদি একবার যামিনীর দর্শন মিলিয়া যায় তাহ ত উপরি পাওনা । প্রতাপের মনের গতি কিন্তু এই সামান্য ঘটনায় একেবারে পরিবর্তিত হইয়া গেল। সে বুঝিল ঘটনার স্রোতে গা ভাসাইয়া চলিলে তাহার কোনোই আশা নাই। এমন সৌভাগ্য লইয়া সে জন্মগ্রহণ করে নাই যে আকাশের চাদ আপন হইতেই তাহার হাতে খসিয়া পড়িবে। যাহা সে কামনা করে তাহা আপনার কৃতিত্বেই তাহাকে অর্জন করিতে হইবে । Ꮌ ☾ একে শীতকাল, তাহার উপর সকাল হইতে মেঘলা করিয়া আছে। এমন দিনে সাধারণতঃ মন কাহারও ভাল থাকে না, বিশেষত: যামিনীর মত ভাবপ্রবণ মানুষের ত একেবারেই থাকিবার কথা নয়। বিছানা ছাড়িয়া ওঠা অবধি তাহাব মনটা ভার হইয়া আছে। তাহার উপর জ্ঞানদার চিঠি আসিয়াছে যে পুরীতে র্তাহার শরীর ভাল হওয়ার পরিবৰ্ত্তে খারাপই হইতেছে। ডাক্তার পাঠানো সম্ভব হইলে তিনি স্বামীকে তাহাই করিতে বলিয়াছেন, নয়ত সপ্তাহখানিক আর দেখিয় তিনি ফিরিয়াই যাইবেন । মায়ের জন্য আশঙ্কায় যামিনী আরও মুষড়াইয়া পড়িয়াছে। মন খারাপ করিবার এমনিই তাহার যথেষ্ট কারণ ছিল। প্রতাপের সঙ্গে বাহিরে তাহার কোনোই বোঝাপড়া হয় নাই, অথচ মনে মনে ব্যাপারটা যথেষ্টই জটিল হইয় উঠিতেছিল। যামিনী ভাবিয়া পায় না, কি সে করিবে । নিজের আত্মীয়স্বজন কাহারও নিকটেই যে এই বিষয়ে সে বিন্দুমাত্রও সহানুভূতি পাইবে না, তাহা সে ভাল করিয়াই জনিত । প্রতাপও যদি স্পষ্ট করিয়া নিজের ভালবাসা তাহাকে জানায়, তাহ হইলে ঘামিনী খানিকট আশ্বাস পায়, কিন্তু তাহারও ত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না ? তাহাকে দিয়া মনোভাব স্বীকার করাইবার কোন পন্থা যামিনী খুজিয়া পায় না । নারী হইয়া নিজেই আগে ভালবাসার কথা