পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や?8 প্রিবাসনাধী YS99āు হইতে ছোট ডাকিয়া বলিতেছে, “দিদিমণি, একঠে। চিঠি আছে ।” চিঠি ? এমন সময়ে কাহার চিঠি আসিল ? ইহা ত ডাকের সময় নয়। বামিনী ধড়মড় করিয়া উঠিয়া দরজার কাছে ছুটিয়া গেল। চিঠি তাহার নয়, তাহার বাবার নামে, কিন্তু হস্তাক্ষর দেখিয়াই তাহার বক্ষ দ্রুততালে স্পদিত হইতে লাগিল। মিহিরের খাতায় দেখিয়া দেখিয়৷ এই হাতের লেখা যে তাহার অতি পরিচিত হইয়া উঠিয়াছে। বাবার নামে বটে, কিন্তু খাম খোলা । যামিনী চিঠিটা টানিয়া বাহির করিয়া পড়িতে লাগিল । প্রতাপের জর হইয়াছে। কতদিন সে আসিতে পরিবে না, তাহার কিছুই ঠিকঠকানা নাই । চিঠি পড়া শেষ করিয়া যামিনী জিজ্ঞাসা করিল, কে চিঠি নিয়ে এসেছে ?” ছোট্ট বাহির হইতে উত্তর দিল, "একঠো বাবু।” যামিনী আবার জিজ্ঞাস করিল, “তিনি কি দাড়িয়ে আছেন ?” ছোট বলিল না, তিনি চিঠি দিয়াই চলিয়া গিয়াছেন। ; যামিনী ফিরিয়া গিয়া চেয়ারে বসিল । দেহমন দুইই তাহার অত্যন্ত অবসন্ন বোধ হইতেছিল। প্রতাপের চিঠিখান দেরাজ খুলিয়া ভিতরে রাখিয়া নিজে তাহাকে যে চিঠি লিখিয়াছিল তাহ টানিয়া বাহির করিল। ছোট চিঠিখান কুচি কুচি করিয়া ছিড়িয়া ফেলিল, আবার লিখিতে বসিল । তাহার অসুখের জন্য দুঃখ প্রকাশ করিয়া, নানা শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করিয়া, কোনোমতে তাহার সাহায্য করিবার যদি কোনো উপায় থাকে, তাহা যামিনীকে করিতে দিতে অনুরোধ করিয়া সে চিঠি শেষ করিল। বার-বার করিয়া পড়িয়া দেখিল তাহাতে অতিরিক্ত হৃদয়োচ্ছাস তাহার নিজের অজ্ঞাতেই কিছু প্রকাশ হইয় পড়িয়াছে কি-না। প্রতাপ কি ভাবিবে, কে জানে ? প্রতাপের চিঠিখানায় তাহার বাড়ির ঠিকানা লেখা ছিল। যামিনী নূতন একখানা খাম বাহির করিয়া নাম ঠিকানা লিথিয়া টিকিট মারিয়৷ একেবারে ডাকে ফেলিতে পাঠাইয়া দিল । সমস্ত 歡V ব্যাপারখানা একেবারে চুকাইয়া না ফেলা পৰ্য্যন্ত তাহার যেন আর স্বস্তি রহিল না । মিহির খাইয়া উপরে আসিতেই যামিনী তাহাকে ডাকিয়া খবর দিল, “ওরে খোকা, তোর মাষ্টারমশায় আজ আসবেন না, তার জর হয়েছে।” মিহির বলিল, “তুমি কি ক’রে জানলে ?” যামিনী বলিল, “তিনি চিঠি লিখে পাঠিয়েছেন।” মিহির কৌতুহল প্রকাশ করিয়া বলিল, “কই দেখি ?” যামিনী টেবিলের উপরের কাগজপত্রগুলা বৃথা একবার ঘাটাঘাটি করিয়া বলিল, “কি জানি, কোথায় যে ফেললাম, তার ঠিক নেই।” মিহির আর কিছু না বলিয়া নামিয়া চলিয়া গেল । মাষ্টার না আসাতে তাহার বিন্দুমাত্র দুঃখের চিহ্ন না দেখিয়া ভাইয়ের সম্বন্ধে যামিনীর ধারণ আরও লীন হইয়া গেল । প্রতাপের অসুখ। ন জানি কি অসুখ, কতখানি অসুখ । পরের বাড়ি একলা রোগশয্যায় পড়িয়া হয়ত কত কষ্ট হইতেছে । জ্ঞানদার অমুখের সময় প্রতাপ তাহাদের জন্য কি না করিয়াছে, কিন্তু প্রতাপের অস্থখের সময় কেহ তাহার জন্য কিছু করিবে না। যামিনীর কোনো উপায় নাই, সে যে বাংলা দেশের মেয়ে । মা তাহকে যতই সাহেবী শিক্ষা দিন, আসল ক্ষেত্রে নিতাস্ত অশিক্ষিত জ্ঞানহীনা গ্রাম্যনারীর অপেক্ষ। তাহার বিন্দুমাত্রও স্বাধীনতা বেশী নাই। সামাজিক শাসনের নাগপাশ তাহাকেও সমানেই বাধিয়া রাখিয়াছে। ঘণ্ট। দুই পরে প্রাণ ভরিয়া আডড দিয়া মিহির যখন ফিরিয়া আসিল, তখন যামিনী জিজ্ঞাসা করিল, "প্রতাপবাবুকে একবার দেখতে যাবি না ? মায়ের অস্থথে তিনি অত করলেন ?” মিহির ঠোট উল্টাইয়া বলিল, “যাব কি ক’রে ? আমি কি তার বাড়ি চিনি ?” যামিনী একবার ভাবিল ঠিকানাটা বলিয়াই দেয়, কিন্তু মিহির হয়ত অবাক হইয়া যাইবে যে, দিদি এত খবর জানিল কোথা হইতে । নান। কথা ভাবিয়। সে শেষ পৰ্য্যন্ত চুপ করিয়াই গেল। ক্রমশঃ