পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ψ Η ο রাখতে পারা অনেক সময়ই সম্ভবপর হয় না । কবির গানের মাধুর্য্য যে কোথায় তা বুঝতে হ’লে তার প্রথম জীবনের গান থেকে কুরু করতে হবে । তার গান চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং প্রত্যেকেই তার গান গাইছে একথা সত্য কিন্তু সুরের ভাব পবিত্র নেই, তা অনেক পঙ্কিল হয়ে পড়েছে। এর মূলে যে-সব কারণ আছে তার মধ্যে উপরোক্ত কারণটি প্রধান । কবির প্রথম জীবনের গানগুলিকে দু-ভাগে ভাগ কর। যায়। প্রথম—হিন্দী গানের ছাচে ঢালাই করা গীত আর উচ্চসঙ্গীতের আদর্শে নিজস্ব মুর । ‘বাল্মীকি-প্রতিভা ও ‘মায়ার খেলা’র প্রায় সব কয়টি গানেই উচ্চসঙ্গীতের ছাপ পাওয়া যায়। যদিও কয়েকটি গানে মিশ্র সুর করা হয়েছে তবুও চালটুকু উচ্চসঙ্গীতেরই বজায় আছে। আর কতকগুলি গানে তার নিজস্ব ধারার লক্ষণ ক্ষীণভাবে প্রকাশ পেয়েছে । কিন্তু এত ক্ষীণ ভাবে যে, বর্তমানে তার নিজস্ব সুরের ধারার সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে আমাদের পক্ষে ঐ সব ক্ষীণ আভাস ধরা সহজসাধ্য হয়ে পড়লেও সে সময়ে তা বুঝ। সহজসাধ্য ছিল না । পরবর্তীকালে স্বদেশী যুগে কবি স্বদেশী গান লিখতে মুরু করেন। স্বদেশী গানে কথারই প্রথম দরকার । কথার ভাবটুকু সাধারণের মনে ধ’রে দেওয়ার জন্যে স্বরের ও ছন্দের প্রয়োজন । এজন্য এ সব গানে সুরের ভাব খাট করা ছাড়া উপায় নেই। তাই এখানে কথার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ সব গানের পূর্বের গানে সুরের প্রাধান্য ছিল । স্বদেশী গান লিখবার সময় হ’তে আস্তে আস্তে র্তার গীতে কথার প্রাধান্ত আসতে থাকে । এই সময়েই ‘গীতাঞ্জলি’র গান লেখা হয় । তাতে কথার ভাবই মুখ ক’রে ধরা হয়। এ সময় থেকেই তার স্বরের গতি অন্য ভাবের হয়ে পড়ে এবং তার নিজস্ব স্থরহষ্টি আরম্ভ হ’তে থাকে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গীতাঞ্জলি’র গান তথন প্রত্যেকেই শিখবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছিল, এ জন্য দেখতে দেথতে তার স্বরের নিজস্ব ধারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে । কথার, স্বরের ও ছন্দের ভাব যে-সব গীতে গম্ভীর সে গানই ধ্রুপদ । ধ্রুপদে ভগবত আরাধনার ভাব স্বষ্টি ఏ90తు করে। শান্ত ও ভক্তিভাবের গানই ধ্রুপদ। চারটি চরণে গীত হয় । স্থায়ী, অন্তর, সঞ্চারী ও আভোগ – এই চারটি তুক উচ্চসঙ্গীতে এক ধ্রুপদেরই একচেটে জিনিষ। খেয়াল, টপ্পা, ঠুংরিতে সঞ্চারী ও আভোগ নেই। রবীন্দ্রনাথ সঞ্চারীর সৌন্দৰ্য্যটুকু তার প্রতি গানে ব্যবহার করেছেন । খেয়াল-টপ্প-ঠুংরিতে তান ও স্বর বিস্তার এত করতে হয় যে, কথা খুবই কম ব্যবহৃত হয় । এ জন্য ঐ শ্রেণীর গানে স্থায়ী ও অন্তরাই কেবল দরকার হয় । রবীন্দ্রনাথের গান ধ্রুপদের কাঠামোতে গড় এবং তার সঞ্চারী এক অপূৰ্ব্ব স্বষ্টি। ধ্রুপদে স্বরবিস্তার এবং তানব্যবহাররীতি নেই । ভাবের দিক থেকে যদিও বড়-খেয়াল অনেকটা স্বৰ্গীয় ভাবের হষ্টি করে কিন্তু টপ্পীঠুংরিতে ধ্রুপদের অনুরূপ ভাব আসে না। ধ্রুপদে স্বরবিস্তার করার প্রথা নেই বলেই তা খেয়াল টপ্পা-ঠংরিথেকে অনেক পৃথক। খেয়াল-টপ্পা ঠুংরিতে তান ও স্বর বিস্তার করা হয় ব’লে তাদের খুব কাছাকাছি সম্বন্ধ । কেবল চালভেদে তাদের পার্থক্য বুঝা যায়। ধ্রুপদের গতি ধীর, রবীন্দ্রনাথের গানের চালও ঐরূপ। ধীর গতি না হ’লে স্বগীয় ভাবের সমাবেশ করা সহজসাধ্য হয় না। গীত দ্রুত চালে চললে সাধারণত হালক। ভাবের উদয় হয়। অবশ্য তারও যে ব্যতিক্রম না-হয় তা নয় । রবীন্দ্রনাথের গানের চালটুকুও ধ্রুপদের । ধ্রুপদের কাঠামো ও চালে গানগুলি রচিত হলেও এতে কবির নিজস্ব শক্তির পরিচয় যথেষ্ট রয়েছে। সঞ্চারীর স্বর ও চালটুকু ধ্রুপদের কিন্তু কবির গানে সঞ্চারীর স্বর ও চাল ঐরুপ হলেও তার সঞ্চারীর মাধুৰ্য্য পৃথক ভাবের । ‘গীত-পঞ্চাশিকা’র গানগুলির সঞ্চারী অতি মনোরম কৃষ্টি । কবির-সুর-রচনায়ও ধ্রুপদের প্রাধান্য দেখা যায় । ধ্রুপদে দ্রুত গিটকিরীর ও তানের ব্যবহার নেই। কবির স্বরেও তা নেই। তার গানে ধ্রুপদের ন্যায় স্পর্শস্থর, মাড় ও গমকেরই আলোড়ন পাই। দ্রুত গিটকিরী ও তান খেয়াল-টপ্পা ঠুংরিতে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। ধ্ৰুপদে যেমন তান ও গিটকিরী ব্যবহার করলে গান শ্রীতিকটু হয়, কবির গানেও তান ব্যবহারে সেরূপই হয়ে থাকে।