পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

48 ولا S99āు কি ঘটিয়াছিল তাহারও কিছু কিছু মনে আছে ; এই সমস্ত জ্ঞানই অনুভবসিদ্ধ। অমুভবের মূলে বাস্তব ঘটনা আছে । পুনর্জন্ম যদি এইরূপ বাস্তব ঘটনা হয় তবে তাহাও অনুভবসিদ্ধ হইবে । এই অনুভবসিদ্ধ জ্ঞান ব্যতীত আর এক প্রকার জ্ঞান আছে তাহ অনুমানসিদ্ধ। সূর্য্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘুরিতেছে এই যে জ্ঞান তাহ অনুমানসিদ্ধ ; অতুভব এই অমুমানের বিপরীত সাক্ষ্যই দেয়, কারণ আমরা স্পষ্টই দেখিতে পাই যে সূৰ্য্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরিতেছে। তথাপি এক্ষেত্রে অনুমানকে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য মনে করিবার কারণ এই যে সূৰ্য্য স্থির আছে মানিলে জ্যোতির্ষিক অনেক ঘটনার সহজ ও সরল ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। পৃখিবী ঘুরিতেছে এই কল্পনা উহ (theory) হিসাবেই গ্রাহ । যদি কোন দিন অপর কোন গ্ৰহ হইতে কেহ বাস্তবিকই পৃথিবীকে হুর্য্যের চারিদিকে ঘুরিতে দেখে তবে তখন এই ধারণাকে আর উল্লাহ বলা চলিবে না ; ইহ। তখন অমুভবসিদ্ধ জ্ঞানেই পরিণত হইবে । বৈজ্ঞানিকদিগকে সৰ্ব্বদাই এইরূপ নান প্রকারের উহ স্বীকার করিয়া লইতে হয় । যদি পৃথিবীতে বিভিন্ন ব্যক্তির বিভিন্ন প্রকারের সুখ দুঃখ ভোগ বা বিভিন্ন মনুষ্যচরিত্র পুনর্জন্মবাদ দ্বার সহজে ও সন্তোষজনক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায় ও যদি তাহার অপর কোন সঙ্গত কারণ না পাওয়া যায় তবে বিজ্ঞানবিদও পুনর্জন্মবাদ অবশ্ব স্বীকার করিবেন। এই জন্ত পূৰ্ব্বে বলিয়াছি পুনজৰ্ম্মবাদের বিচার দুই দিক দিয়া হইতে পারে । প্রথমে ঘটনা হিসাবে পুনর্জন্মবাদের বিচার করিব । পুনর্জন্ম এমনই একটা ব্যাপার যে তাহার প্রত্যক্ষসিদ্ধ জ্ঞান দ্রষ্টার কোন কালেই হওয়া সম্ভব নহে, তবে জাতিস্মরতা অর্থাৎ পূৰ্ব্বজন্মের স্মৃতি প্রমাণিত হইলে পুনর্জন্মকে অনুভবসিদ্ধ বলিতে হইবে। যদি কোন ব্যক্তি বলে ষে তাহার পূৰ্ব্বজন্মের কথা মনে আছে ও যদি এরূপ ব্যক্তির কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় বা তাহার কথার উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে পুনর্জন্ম স্বীকার করিতেই হইবে। জাতিস্মরত নিঃসংশয় প্রমাণিত হওয়া অত্যন্ত দুরূহ। আমরা প্রত্যেকেই চিরকাল বাচিয়া থাকিতে ইচ্ছা করি, কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু হইতে কাহারও নিষ্কৃতি নাই ; কাজেই মৃত্যুই আমাদের শেষ নয়, মৃত্যুর পরেও আমরা থাকিব ও পুনরায় সংসার ভোগ করিব এরূপ ধারণা আমাদের ইচ্ছার অনুকুল বলিয়া বিনা প্রমাণেই তাহ মানিয়া লই । বিশেষতঃ যে এ জন্মে কষ্টভোগ করিতেছে তাহার পক্ষে সুখময় পরজন্মের কল্পনা পরম শাস্তিপ্রদ। আমি যদি পূৰ্ব্বজন্মে কি ছিলাম সাধারণকে তাহ হৃদয়গ্রাহী করিয়া বলিতে পারি তবে বিনা বিচারেই আমার কথ। অনেকে বিশ্বাস করিবে । এই ভাবে লোককে প্রতারিত করিবার প্রবৃত্তি অনেক সময় সাধু ব্যক্তিদের মধ্যেও দেখা যায় । কখনও এই প্রতারণা অজ্ঞানেই অন্তষ্ঠিত হয়, কখনও ব৷ মানসিক ব্যাধির বশে এই ইচ্ছা মনে জাগে তখন রোগী নিজেও স্বকল্পিত কথাকে সত্য বলিয়া বিশ্বাস করে । পরাস্মার ( paramnesia) নামে এক প্রকার স্মৃতিবিকার আছে যাহার বশে রোগীর মনে কোন নূতন দৃশ্বকে পূৰ্ব্বজন্মদষ্ট বলিয়া সংস্কার জন্মে। এরূপ স্মৃতিবিকারগ্রস্ত রোগী নিজকে সম্পূর্ণ স্বস্থ ব্যক্তি বলিয়া মনে করিতে পারে এবং সাধারণেও তাহার মানসিক বিকার সম্বন্ধে কিছুই বুঝিতে পারে না। অতিশয় সম্মানিত এক সাধুকে আমি এই রোগাক্রাস্ত দেখিয়াছি । আমার অনেক বার ‘জাতিস্মরতা অনুসন্ধানের সুযোগ ঘটিয়াছে, কিন্তু কোন বারেই যথার্থ জাতিস্মরত দেখি নাই। জাতিস্মরতীর যে-সমস্ত লিখিত বিবরণ বা প্রমাণ আলোচনা করিয়াছি তাহাতে আমি বলিতে বাধ্য যে জাতিস্মরত নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় নাই । অপর পক্ষে ইহাও বিবেচ্য যে হিন্দুশাস্ত্রে অনেক স্থলে জাতিস্মর ব্যক্তির উল্লেখ আছে। শাস্ত্রকারের কেবল কল্পনার উপর নির্ভর করিয়৷ এই সকল বর্ণনা করিয়াছেন এরূপ কথা বলা দুঃসাহসিকতার কাৰ্য্য ! কি প্রমাণ বিচার করিয়া শাস্ত্রকারের জাতিস্মরত স্বীকার করিয়াছিলেন আমি সে-সম্বন্ধে অজ্ঞ। আধুনিক যুক্তিবাদী বিন-বিচারে শাস্ত্রপ্রমাণ না মানিলে তাহাকে দোষ দেওয়া যায় না । এখন উহ (theory ) হিসাবে পুনর্জন্মবাদ বিচার করিব । বিশেষ বিশেষ ঘটনাবলীর কারণ সন্তোষজনকভাবে ব্যাখ্যা করিবার জন্তই উহের কল্পনা । পৃথিবীতে