ভাত্র মন্দির কাদিবার উপক্রম করিতেছিল, স্বভদ্র ছুটিয়া আসিয়া তাহাকে কোলে করিল। এই দুইজনে বহুকালের বন্ধুত্ব, কানে কানে তাহাদের কি কথা হইতে লাগিল কেহ জানিল না। সুলতা তাহার কারত্বটিকে আয়ার হাতে সমর্পণ করিয়া দিয়া একটু আগে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন, বীণার কানে কানে কহিলেন, “ওর বিশেষ দোষ নেই, তা যাই বল। সুরেশ সত্যিই খুব বেশী অজয়বাবুর মত দেখতে ছিল। অমনি রোগ ছিপছিপে চেহারা, একমাথা চুল, তবে তার রঙ আর-একটু ফর্সা ছিল বটে।" বীণ। চকিতে একবার অজয়ের দিকে চাহিয়া লইয়া মৃদুস্বরেই কহিল, "সুলতাদির যে কথা ! ওঁকে কি ওর একটুও মনে আছে নাকি ?" সুলতা কহিলেন, "ছবি-টবি ত সারাক্ষণই দেখছে। অবিহি তোমারই ত মেয়ে, পাকামিও আছে প্রচুর।" অজয়কে নমস্কার করিয় “চললাম” বলিয়া বীণ৷ দরজার দিকে চলিল। ক্লাবস্থদ্ধ ছেলেরা সকলেই প্রায় তাহাকে বিদায় দিতে উঠিয়া আসিল। সুভদ্রের কোলে চড়িয়া সিড়ি নামিতে নামিতে মন্দির অজয়ের দিকে ফিরিয়া বলিল, "তুমি আসবে না আমাদের বাড়ী ? চল-না? গাড়ী রয়েছে যে ! এম-না..এস.এস ।" অজয় রেলিঙে কুকিয় দাড়াইয়৷ কি উত্তর দিবে ভাবিয়া পাইল না, তারপর মন্দির কিছুতেই নামিতে চাহিতেছে না এবং সুভদ্রকেও নামিতে দিতে নারাজ দেখিয়া নিরুপায় হইয়া কহিল, “আচ্ছ, আজ থাকৃ, শৃঙ্খল Wool আর একদিন তোমাদের বাড়ী যাওয়া যাবে, তাহলেই হবে ত?" মন্দির। রাজি হইয় গেল। বীণ কলকণ্ঠের হাসিতে সিড়ি মুখরিত করিয়া বলিল, “ও যত দুষ্টই হোক, বেশ কাজের মেয়ে। ওরই কল্যাণে আপনার কাছ থেকে এতবড় একটা কথা আদায় হয়ে গেল। প্রতিজ্ঞাট মনে থাকবে ত?” অজয় কহিল, "থাকবে।" তারপর সেও হাসিতে লাগিল । বিমান তাহার ঠিক পশ্চাতেই আসিয়া দাড়াইয়াছিল, কহিল, “আমি ওকে ধ’রে নিয়ে যাব-এখন।" বীণা সিড়ি নামিতে নামিতে কহিল, "কেন, অজয়বাবুর কি কলকাতার পথঘাট জানা নেই, ঠিকানা নিয়ে বাড়ী চিনে যেতে পারবেন না ?” বিমান একথার উত্তরে মুখ টিপিয়া হাসিয়া কহিল, “যেতে খুবই পারবেন, কিন্তু ফিরতে ঠিক ততটা সহজে পারবেন কিনা ভেবে কথাটা বলেছিলাম।” বীণা তাহার সেকথা ইচ্ছা করিয়াই শুনিল না দেখিয় সিড়ির ল্যাণ্ডিঙে দাড়াইয়া হাতের ছড়িটাকে সে ঘুরাইতে লাগিল। গাড়ীতে বসিয়া নিজের শালটা দিয়া মন্দিরাকে বেশ করিয়া জড়াইয়া বীণা কহিল, “চল একবার বাড়ী, তোমার দুঃমি আমি ভাল করে বের করব।" তারপর সারাপথ দুজনেই গম্ভীর হইয়া রহিল। ( ক্রমশ: ) っ巻"蒸ミ>