পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভাত্র বিবিধ প্রসঙ্গ—টেরারিজম দমনের আইন Գֆ Ֆ অর্ডিন্যান্স এবং আইনের ভয়ও আছে। এই জন্য কৌন্সিলে ঠিক কি হয় বুঝা যায় না। অথচ বেঠিক বা অযথেষ্ট রিপোর্টের উপর নির্ভর করিয়া কিছু লিখিলে তাহাতেও বিপদ ঘটিতে পারে। তাহ। সত্ত্বেও, কাগজে যাহা বাহির হয়, তাহার উপর কিছু লেখা উচিত। দৈনিক কাগজে দেখিলাম, কৌন্সিলে স্তর প্রভাসচন্দ্র মিত্র বলিয়াছেন, যে, ১৪৭ জন তৃতীয় শ্রেণীর মহিলা রাজবন্দী আছেন, তাহারা সকলে ভদ্রঘরের মেয়ে ; কিন্তু আবার এ কথাও বলিয়াছেন, ধে, তাহাদের সামাজিক অবস্থা জানা নাই বলিয়াই জেলের পোষাক সম্বন্ধে কোনও স্থব্যবস্থা করা হয় নাই । এরূপ উত্তর তিনি দিয়া থাকিলে তাহা অদ্ভুত বটে। ভদ্রমহিলাদের পরিচ্ছদের জন্ত, শাড়ী শেমিজ ও কোন রকম একটা জামার জন্য, নানা রকম দামের কাপড় ব্যবহৃত হইতে পারে, জামার ফ্যাশানটারও প্রভেদ হইতে পারে, কিন্তু এই জিনিষগুলা সাধারণতঃ ধনী নিধর্ম সকলেরই চাই। বিধবা বুদ্ধার কেহ কেহ হয়ত কেবল রঙীন পাড়বিহীন শাড়ীই পরেন, কিন্তু তাহাও লম্বায়ু চোঁড়ায় ভব্যতা রক্ষার পক্ষে যথেষ্ট হওয়া দরকার। কাহারও সামাজিক অবস্থা না জানিলেও এই সব জিনিষ দেওয়া যায়, এবং যে গবর্ণমেণ্ট রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও বোমা প্রভৃতি আবিষ্কার করিতে সমর্থ, তাহার পক্ষে ১৪৭টি মহিলার সামাজিক অবস্থা জানা খুবই সহজ—অন্ততঃ বাঙালী স্তর প্রভাসচন্দ্র মিত্রের পক্ষে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত সহজ হইত এবং তাহা কর। তাহার কৰ্ত্তব্যও ছিল । দমদমার ‘বিশেষ” জেল ডক্টর নরেশচন্দ্র সেন গুপ্তের উত্থাপিত দমদমায় “বিশেষ” জেলের ব্যবস্থার নিন্দাসূচক প্রস্তাব উপলক্ষ্যে কোন্সিলে স্তর প্রভাসচন্দ্র মিত্র অস্বীকার করেন নাই, যে, ঐ জেলে বন্দীর সংখ্যা অনুযায়ী যথেষ্ট স্থান নাই, যথেষ্ট খাদ্য তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই, হাসপাতাল ও চিকিৎসার বন্দোবস্ত যথেষ্ট ছিল না, পায়খানা যথেষ্টসংখ্যক —ভদ্রতারক্ষার জন্যও যথেষ্টসংখ্যক—ছিল না। কিন্তু তাহার মতে এর চেয়ে কিছু ভাল বন্দোবস্ত করিতে গেলে খরচ বাড়িয়া যাইত! মানুষকে পশুর অধম ব্যবস্থায় রাখা অধৰ্ম্ম ; মানুষের মত ব্যবস্থা যদি জেল-বিভাগ করিতে না পারে, তাহ হইলে ঐ বিভাগের সৰ্ব্বোচ্চ ও উচ্চ পদের কৰ্ম্মচারীদের বেতন প্রয়োজনমত কমাইয়। স্বব্যবস্থা করা উচিত। ভারতবর্ষে উচ্চপদগুলির বেতন অত্যন্ত বেশী। সকল কয়েদীই-জঘন্য দুর্নীতির কাজ করিয়া যাহারা জেলে গিয়াছে তাহারাও—যথেষ্ট খাদ্য পাইভে অধিকারী এবং স্বাস্থ্যরক্ষা ও মনুষোচিত লজ্জারক্ষার অনুকূল ব্যবস্থায় বাস করিতে অধিকারী। স্বতরাং রাজনৈতিক যে সব "অপরাধ” দুর্নীতিমূলক নহে, কেবল শাসনকার্য্যের সুবিধার জন্য যেগুলি "অপরাধ” বলিয় গণিত হইয়াছে, তাহার জন্য যাহারা দণ্ডিত হইয়াছেন, তাহাদিগকে যথেষ্ট খাদ্য না-দেওয়া এবং স্বাস্থ্যহানিকর ও লজ্জাকর অবস্থায় রাখা কখনও স্বশাসনের এবং শাস্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার অমুকুল হইতে পারে না। টেরারিজ দমনের আইন টেরারিজম দমন ও নিমূল করিবার জন্য একটি আইনের পাণ্ডুলিপি বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভায় পেশ করা হইয়াছে। উহা নিশ্চয়ই শীঘ্র আইনেও পরিণত হইয়া যাইবে। নিদোষ লোকদের উপর অত্যাচার ন হইয়। যদি ঐ আইন দ্বার সরকারী ও বেসরকারী উভয়বিধ টেরাব্লিষ্টদের দমন উহা দ্বারা হয় তাহা হইলে আমরা সন্তুষ্ট হইব । সেরূপ দমন যে আইন দ্বার অনেকটা বা কতকটা ন হইতে পারে, এমন নয়। কিন্তু টেরারিজমের উচ্ছেদ কেবল কোন প্রকার শাস্তিবিধায়ক আইন দ্বারা কোথাও হয় নাই, বঙ্গেও হইবে না। উচ্ছেদের জন্য মূল রাষ্ট্রবিধির স্বপরিবত্তন, নৈতিক সংশিক্ষা, আর্থিক উন্নতি এবং বেকার সমস্তার সমাধান আবশ্বক। এবং আমুর আগে আগে বলিয়াছি, ও বর্তমান সংখ্যার বিবিধ প্রসঙ্গের গোড়াকার নিবন্ধিকাতে৭ লিখিয়াছি, যে, মামুষের সমষ্টিগত যুদ্ধাভিমুখত সংযত ও নিয়ন্ত্রিত না-হইলে, ব্যক্তিগত যে-যুদ্ধাভিমুখতাকে টেরারিজম বলা হয়, তাহাও অস্তৰ্হিত হইবে না।