পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ দাড়ান। ভাঙা ঘাটের সোপান বহিয়৷ বিড়াল আচড়ার গভীর কাটাবন দুইহাতে ফাক করিয়া সাবধানে লঘুচরণ ফেলিয়া তিনি ক্রমশঃ আগাইতে থাকেন। তবু বনের একটানা ঝিকির আওয়াজের সঙ্গে পায়ের নূপুর ঝুন-ঝুন করিয়া বাজিয় ওঠে.কুঙ্কমে-মাজ মুখ.গায়ে শ্বেতচন্দন আঁকা-সিথায় সেই চার শতাব্দী আগেকার সি দুর লাগানো.পায়ে রক্তবরণ আলতা, অঙ্গের চিত্র-বিচিত্র কাচলী ও মেঘডম্বর সাড়ী হইতে জল ঝরিয়া ঝরিয়া বনভূমি সিক্ত করে-বনের প্রাস্তে আমের গুড়ি ঠেস দিয়া দক্ষিণের মাঠে তিনি তাকাইয়া থাকেন. আবার বর্ষায় যখন ঐ গড়খাই কানায় কানায় একেবারে ভরিয়া যায়, ঘোড়। তখন জল পার হইয়া বনের সামনে পৌছিতে পারে না, মালতীমাল সেই কয়েকটা মাস আগাইয়া ফাকা মাঠের মধ্যে আসিয়া দাড়ান । দুধ-সর ধানের সুগন্ধি ক্ষেতের পাশে পাশে ভিজা অালের উপর হিম-রত্রির শিশিরে পায়ের আলতার অস্পষ্ট ছোপ লাগে, চাষার সকাল বেলা দেখিতে পায় কিন্তু রোদ উঠিতে না উঠিতে সমস্তই নিশ্চিহ্ন হইয়া মিলাইয়া যায় ... চুরুটের অবশিষ্টটুকু ফেলিয়া দিয়া শঙ্কর উঠিয়৷ দাড়াইল । মাঠের ওদিকে মুচিপাড়ায় পোয়ালগাদ, খোড়োঘর, নূতন-বাধা গোলাগুলি কেমন বেশ শাস্ত হইয়া ঘুমাইতেছে। চৈত্রমাসের স্বশুভ্র জ্যোৎস্নায় দূরের আবছা আবছা বনের দিকে চাহিতে চাহিতে চারিদিককার সুপ্তিরাজ্যের মাঝখানে বিকালের দেখা সেই সাধারণ বন হঠাৎ অপূৰ্ব্ব রহস্যময় বলিয়া ঠেকিল। ঐ খানে এমনি সময়ে বিস্তুত যুগের বধূ তাকাইয়া আছে, নায়ক তীরবেগে ঘোড়া ছটাইয়া সেই দিকে যাইতেছে, কিছুই অসম্ভব বলিয়া বোধ হয় না। মনে হয় সন্ধ্যাকালে ওখানে সে যে অচঞ্চল নিক্রিয় ভাব দেখিয়া আসিয়াছে, এতক্ষণ জঙ্গলের সে রূপ বদলাইয়া গিয়াছে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি আজও যাহা আবিষ্কার করিতে পারে নাই তাহারই কোন একটা অপূৰ্ব্ব ছন্দ-সঙ্গীতময় গুপ্তরহস্য এতক্ষণ ওখানে বাহির হইয়া পড়িয়াছে। সঙ্গে সঙ্গে তার সুধারাণীর কথা মনে পড়িলঃ ੇ অরণ্য-কাণ্ড عC (بيلا বলিত, যেমন করিয়া হাসিত, রাগ করিত, ব্যথা দিত, প্রতিদিনকার তুচ্ছাতিতুচ্ছ সেই সব কথা। ভাবিতে ভাবিতে শঙ্করের চোথে জল আসিয়া পড়িল । জাগরণের মধ্যে স্পষ্ট প্রত্যক্ষ হইয়া কোনদিন সে আর আসিবে না ! “কমশঃ তাহার মনে কারণ-যুক্তিহীন একটা অদ্ভুত ধারণা চাপিয়া বসিতে লাগিল। ভাবিল—সে দিনের সেই স্বধারাণী, তার হাসি চাহনী, তার ক্ষুদ্রহৃদয়ের প্রত্যেকটি স্পন্ন পয্যন্ত এই জগৎ হইতে হারায় নাই—কোনখানে সজীব হইয়া বৰ্ত্তমান রহিয়াছে, মাচুষে তার খোজ পায় না। ঐ সব জনহীন বনে জঙ্গলে এইরূপ গভীর রাত্রে একবার খোজ করিয়া দেখিলে হয়। শঙ্কর ভাবিতে লাগিল, কেবল মালতীমাল সুধারাণী নয়, স্মৃষ্টির আদিকাল হইতে ঘত মানুষ অতীত হইয়াছে, যত হাসিকান্নার ঢেউ বহিয়াছে, যত ফুল ঝরিয়াছে, যত মাধবী রাত্রি পোহাইয়া গিয়াছে, সমস্তই যুগের আলো হইতে এমনি কোথাও পলাইয়া রহিয়াছে। তদগত হইয়া যেই মানুষ পুরাতনের স্মৃতি ভাবিতে বসে অমনি গোপন আবাস হইতে তারা টিপি টিপি বাহির হইয়া মনের মধ্যে ঢুকিয়া পড়ে। স্বপ্লঘোরে স্বধারাণী এমনি কোনখান হইতে বাহির হইয়া আসিয়া কত রাতে তার পাশে আসিয়া বসিয়াছে, আদর করিয়াছে, ঘুম ভাঙিলে আবার বাতাসে মিলাইয়া পলাইয়া গিয়াছে।. বটতলায় বটের ঝুরির সঙ্গে ঘোড়া বাধা ছিল, ঐখানে আপতত: আস্তাবলের কাজ চলিতেছে, পৃথক ঘর আর বাধা হয় নাই। নিজে নিজেই জিন কষিয়া স্বপ্নাচ্ছন্নের মত শঙ্কর ঘোড়ার পিঠে চড়িয়া বসিল । ঘোড়া ছুটিল। স্বপ্ত গ্রামের দিকে চাহিয়া অমুকম্প হইতে লাগিল—মুখ তোমরা, জঙ্গলের বড় বড় কাঠাল গাছগুলাই তোমাদের কেবল নজরে পড়িল এবং গাছ মারিয়া তক্তা কাটাইয়া দু’পয়সা পাইবার লোভে এত মোকৰ্দমা-মামলা করিয়া মরিতেছ, গভীর নিঝুম রাত্রে ছায়াময় সেই আমকাঠাল-পিত্তিরাজের বন, সমস্ত ঝোপ ঝাড় জঙ্গল, পন্থীঘির এপার-ওপার ধাদের রূপের আলোয় আলো হইয়া যায়, এতকাল পাশাপাশি বাল করিলে একটণ্ডন খবর লইতে পারিলে না , , ........ ..."