পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8Ն SOOāు কবিবংশ বর্ণনা আছে তাহাতে এই কাহিনীর কোন আভাস দেওয়া হয় নাই। বাণ লৌকিক চরিতকথার সহিত আলৌকিক কাহিনী মিলাইতে যেমন কুষ্ঠিত ছিলেন না, স্বাভাবিক ঘটনার ভিতরে অস্বাভাবিক প্রসঙ্গ প্রক্ষিপ্ত করিতেও তেমন কুষ্ঠিত ছিলেন না। দৃষ্টাস্তস্বরূপ মুম্মু প্রভাকরবদ্ধনের শেষবাক্যের উল্লেখ করা যাইতে পারে । “হর্ষচরিতে’র পঞ্চম উচ্ছ্বাসে উক্ত হইয়াছে, মাতার অগ্নিপ্রবেশের পরে হর্ষ পিতার পাশ্বে গিয়া-- “অপশ্বচ্চ স্বল্পাবশেষ প্রাণবৃত্তিং পরিবর্তমানতারকং তারকারাজমিবাস্তমভিলমন্তং জনয়িতারং (? “দেখিতে পাইলেন, ( তাহার ) পিতার স্বল্পমাত্র প্রাণ অবশিষ্ট আছে, চক্ষুর তারা ঘুরিতেছে, এবং তারকরাঞ্জ ( চন্দ্রের ) স্যায় অস্ত যাইতেছেন।” হর্ষ নিকটে আসিবামাত্র তfহার রোদনধ্বনি শুনিয়া মুমুযু প্রভাকরবর্দ্ধন একেবারে যেন নবজীবন লাভ করিলেন, এবং তাহার ( হর্যের ) পক্ষে শোকে কাতর হওয়া সঙ্গত নহে এই সাত্বন বাক্য বলিয় তাহার তোযামুদি আরম্ভ করিলেন । এই তেষামুদিপূর্ণ বক্তৃতার প্রথম কথা, “কুলপ্রদীপোহসি ইতি দিবসকর সদৃশস্তে লঘুকরণমিতি’, ‘কুলপ্রদীপ বলিলে দিবাকরের ন্যায় দীপ্যমান তোমাকে খাট করা হয় ; এবং শেষ কথা, “নিরবশেষতাং শত্রবে। নেয়াঃ ইতি সহঞ্জস্য তেজস এবেয়ং চিন্তা”, শত্ৰুকুল নিৰ্ম্মল করা কর্তব্য, ( তোমার মত ) স্বভাবতঃ তেজস্বী ব্যক্তির ইহাই চিন্তার বিবয় ” (সুতরাং আমি আর তোমাকে কি উপদেশ দিব ) । এই কথা বলিতে বলিতে “অপুনরুত্মীলনায় নিমিমীল রাজসিংহে। লোচনে”, “রাজসিংহ চিরতরে চক্ষু নিমীলিত করিলেন ।” চিরতরে চক্ষু নিমীলিত করিবার পূৰ্ব্বে কাহারও পক্ষেই এই প্রকার বাক্যমালা রচনা করা সম্ভব নহে । “হর্ষচরিতে” আত্মচরিতে বাণ নিজের দোষের উল্লেখ করিতে সঙ্কোচবোধ করেন নাই, কিন্তু হর্ষের এবং তাহার পূৰ্ব্বপুরুষগণের চরিতকথায় তিনি কেবল র্তাহাদের গুণই কীৰ্ত্তন করিয়াছেন । রাজাদের সম্বন্ধে বাণ প্রকৃতপ্রস্তাবে চরিতকার নহেন, প্রশস্তিকার । প্রশস্তিকারের পক্ষে প্রশংসার পাত্রের গুণ অতিরঞ্জিত করা অনিবাৰ্য। কিন্তু প্রভুর গুণের অতিরঞ্জন ব্যাপারে সেকালের প্রশস্তিকারগণের মধ্যে বাণের তুলনা নাই। অন্যান্ত প্রশস্তিকারের আপন আপন প্রভুকে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরাদি দেবতার এবং প্রাচীন রাজর্ষিগণের তুল্য বলিয়াই ক্ষাস্ত হইয়াছেন ; কিন্তু বাণ হর্ষকে দেবতাগণেরও উপরে তুলিয়া দিয়াছেন। হর্ষ সম্বন্ধে বাণ একস্থানে (২য় উচ্ছ্বাসে) লিখিয়াছেন,— “নাস্ত হয়েরিব বুধবিরোধীনি বালচরিতানি, ন পশুপতেলি দক্ষেগদ্বেগকারিণ্যৈশ্বৰ্য্যবিলসিতানি ।” “হরির (কৃষ্ণের ) মত হর্ষের বাল্যলীলা ধৰ্ম্মবিরোধী ছিল না, (তাহার) পশুপতির ( ঐশ্বৰ্য্যের । মত দক্ষের (হর্ষপক্ষে দক্ষ লোকের } উদ্বেগকর ছিল না” ইত্যাদি। এই প্রকার চরিতকারের কাব্যে ঐতিহাসিক ঘটনার অবিকল বিবরণ আশা করা যাইতে পারে না । শত্রুর শিবিরে রাজ্যবৰ্দ্ধনের মৃত্যু অবশুই রহস্যময় ঘটনা । রাজ্যবৰ্দ্ধনের অশ্বারোহী সেনাপতি ( বৃহদশ্ববার ) কুন্তল এই ঘটনা সম্বন্ধে ছত্রভঙ্গ রাজ্যবৰ্দ্ধনের সেনাদলে যে-জনরব রটিয়াছিল হর্যের নিকট তাহাই বহন করিয়াছিলেন । যদি স্বীকারও করা যায়, বাণ অকুপ্রাসের অল্পরোধে অথব: প্রভূর মনস্তুষ্টির জন্য এই জনরবকে বিকৃত করেন নাই, তথাপি বাণের স্বরে মুর মিলাইয়া শশাঙ্ককে “গৌড়াধম" "গৌড়াধিপাধমচণ্ডাল” বলিয়া নিগৃহীত করিবার পূৰ্ব্বে ঐতিহাসিকের দুইটি কথা স্মরণ করা কৰ্ত্তব্য । প্রথম কথা—রাজ্যবৰ্দ্ধনের রহস্যময় মৃত্যুঘটনা সম্বন্ধে আমরা মাত্র এক পক্ষের অভিমত জানি,কিন্তু গৌড়শিবিবে এ সম্বন্ধে কি জনরব উঠিয়াছিল, এবং গোঁ (নিপের পক্ষে এ সম্বন্ধে কি বলিবার ছিল, তাহার বিন্দুবিসর্গও জানি না । এই এক পক্ষের অভিমতও যেটুকু আমরা জানি তাহ তাম্রশাসনের রাজপ্রশস্তিকারের এবং “হর্ষচরিত’কারের মত পেশাদার স্তাবকের বিবরণ। যুয়ান চোয়াঙ ও হর্ষের একান্ত ভক্ত এবং বৌদ্ধনির্যাতনকারী বলিষ্ঠা শশাঙ্কের একান্ত বিদ্বেষী ছিলেন । এইরূপ অভিযোগকারীদিগের কথায় একতরফা বিচার করিয়া শশাঙ্ককে সম্পূর্ণ দোষী সাব্যস্ত করা সঙ্গত নহে। কিন্তু শশাঙ্ক যে নির্দোষী ইহা বলিবারও উপায় নাই । স্বতরাং গৌড়পক্ষের সাক্ষ্যের প্রতীক্ষায় আপাততঃ চূড়ান্থ নিষ্পত্তি মুলতুবী রাখাই কৰ্ত্তব্য।