পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন শশাঙ্কের কলঙ্ক—রাজ্যবৰ্দ্ধন-হত্য Գ8Գ দ্বিতীয় কথা-সুহ্মভাবে ইতিহাসের প্রমাণের পরীক্ষণ critical method of sifting evidence ) ii-sive; -বদা। স্বতরাং এ বিষয়ে পাশ্চাত পণ্ডিতগণের ভূয়োদর্শন উপেক্ষিত হইতে পারে না। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা বিচার করিয়া দেখিয়াছেন, ইতিহাসের আকর হিসাবে ঘটনার কর্তৃগণের আত্মচরিতও সকল সময় নির্ভরযোগ্য নহে, জনশ্রুতি এবং জনরব ত দুরের কথা । তাহাদের মতে ইতিহাসের প্রমাণ হিসাবে সৰ্ব্বাপেক্ষ নির্ভরযোগ্য কাৰ্য্যকালে কৰ্য্যোপলক্ষে লিখিত কাগজপত্র। কিন্তু এই শ্রণীর প্রমাণও বিনা-বিচারে গৃহীত হইতে পারে না। এই শ্রেণীর প্রমাণ লইয়া ইতিহাস বা পুরাকাহিনী সঙ্কলনের পূৰ্ব্বে পরীক্ষা করিয়া দেখিতে হয়, প্রত্যেকখানি কাগজপত্রের লেখকের বর্ণিত বিষয়টি সকল দিক দিয়া দেপিবার স্বয়োগ এবং যোগ্যতা ছিল কি-না, এবং তাহার পক্ষে কোন কথা রাখিয়া-ঢাকিয়া লিখিবার কারণ ছিল কি-না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রাচীন হিন্দু রাজাদিগের ইতিহাস সম্বন্ধে এইরূপ কাগজপত্র আমাদের হস্তগত হয় নাই, এবং কখনও যে হইবে তাহার আশা নাই । সুতরাং শশাঙ্কের বা হর্ষের মত রাজা কখন যে কি করিয়াছিলেন তাহার প্রকৃত কাহিনী উদ্ধারের কোন সম্ভাবনা নাই । প্রশস্তিকারগণ আকারে-ইঙ্গিতে যেটুকু বলিয়া গিয়াছেন তহি। অবলম্বন করিয়া ঘটনাধারা সম্বন্ধে কল্পনা-জল্পনা চলিতে পারে, কিন্তু উহার প্রকৃত বিবরণ উদ্ধার করা যাইতে পারে না । এই প্রকার প্রমাণ যদি আবার একতরফা হয় তবে তাহার বলে কোন পক্ষকে একেবারে দোষী বা নিৰ্দ্দোষী সাব্যস্ত করা কৰ্ত্তব্য নহে । সংশয়ের স্থলে কোন পক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করিবার পূৰ্ব্বে সে যে কি দরের এবং কি ধরণের লোক তাহাও হিসাব করা কৰ্ত্তব্য। রাজ্যবৰ্দ্ধনের হত্যা সম্বন্ধে দুইটি প্রশ্ন হইতে পারে—শশাঙ্ক রাজ্যবৰ্দ্ধনকে অকারণ হত্যা করিয়া বা করাইয়া ছিলেন কি-না, এবং এই হত্যাকার্য্যের জন্য তিনি বিশ্বাসঘাতকতার আশ্রয় লইয়াছিলেন কি-না ? আমরা এতক্ষণ দেখাইতে চেষ্টা করিয়াছি, এই প্রকার প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিবার উপযোগী প্রমাণ আমাদের কাছে নাই । এথন জিজ্ঞাস্য, শশাঙ্কের চরিত্র সম্বন্ধে অন্ত উপায়ে যাহা জানা যায় তাহা হইতে র্তাহাকে নিরর্থক নরহত্যাকারী এবং স্বভাবতঃ বিশ্বাসঘাতক মনে করা যাইতে পারে কি-না। শশাঙ্ক প্রথম গৌড়াধিপ ; শশাঙ্কের প্রধান কীৰ্ত্তি—গুপ্ত-সাম্রাজ্যের কয়েকটি ভগ্নাংশ, বৰ্ত্তমানকালের বাঙ্গল-বিহার-উড়িষ্য লইয়া, গৌড়রাজ্যের সৃষ্টি । কি উপায়ে শশাঙ্ক এই স্মৃষ্টিকার্য্য সম্পাদন করিয়ছিলেন তাহা আমরা জানি না। কিন্তু তাহার গড়ন যে খুব মজবুত হইয়াছিল তাহার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। গঞ্জামে প্রাপ্ত একখানি তাম্রশাসনে দেখা যায় হর্ষের রাজ্যলাভের বার-তের বৎসর পরে ( ৬১৯ খৃষ্টাব্দে ) ও শশাঙ্কের আধিপত্য বা অধিরাজ্য কঙ্গোদ ( বর্তমান গঞ্জাম জেলা ) পৰ্য্যস্ত বিস্তৃত ছিল । * শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে র্তাহার রাজ্য হর্যের সাম্রাজ্যভুক্ত হইয়াছিল এবং কামরূপরাজের ভাগে পড়িয়াছিল।ণ খৃষ্টীয় অষ্টম শতাদের আরম্ভে আবার স্বতন্ত্র গৌড়রাজ্যের অভু্যখান দেখা যায়। বাকৃপতির “গউড় বহে৷” ( গৌড়বধ ) নামক প্রাকৃত ভাষায়: রচিত কাব্যে কান্তকুজরাজ যশোবর্ম কর্তৃক গৌড়রাজ্য" জয় এবং গৌড়াধিপ বধ বর্ণিত হইয়াছে। বাকৃপতি যশোবন্মার সভাপণ্ডিত ছিলেন । সুতরাং বাকৃপতির । বিবরণকে ঐতিহাসিক ভিত্তিহীন মনে করা যাইতে পারে - ন। বাকৃপতি গৌড়াধিপকে মগধাধিপও বলিয়াছেন, অর্থাৎ মগধ তখন গৌড়রাজ্যের অন্তভূতি ছিল। এই গৌড়বধের পরে গৌড়রাজ্য যে দীর্ঘকাল কান্তকুজরাজের পদানত ছিল তাহা মনে হয় না। তারপর গৌড়মণ্ডলে মাৎসন্যায় বা অরাজকতা উপস্থিত হইয়াছিল। এই অরাজকতা নিবারণের জন্য গোপালদেব গৌড়াধিপ নিৰ্ব্বাচিত হইয়াছিলেন । ধৰ্ম্মপালের তাম্রশাসনে প্রকৃতিপুঞ্জকে গোপালদেবের নির্বাচনকারী বলা হইয়াছে ( প্রকৃতিভি লক্ষ্ম্যাঃ করং গ্রাহিতঃ) । এখানে সামস্তরাজগণ প্রকৃতিপুঞ্জের অন্তর্গত, কারণ র্তাহারা তখন জনসাধারণের প্রতিনিধি ছিলেন। যে-দেশের অধিবাসিগণের মধ্যে রাষ্ট্রয়ব্যাপারে একতা আছে সেই দেশের সামস্তরাজগণের পক্ষেই

  • Epigraphia Indica, Vol. Vl, p. 140. + art, Pitళ, 98),ు?-st : 1