পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓ68 প্রেরকের নাম ক্ষেত্রনাথ, যাহাকে পাঠানো হইয়াছে তাহার নাম ও ঠিকান স্মরণ রাখিবার জন্য ভাল করিয়া দেখিয়া লইল । পোষ্টমাষ্টারকে বলিল,—না, ঠিক আছে। যা হোক আমার মনের খট্কা মিটে গেল । ফিরিবার পথে বনবিহারী দেখিল জীর্ণবস্ত্র ও জীর্ণ পাদুকা পরিহিত গুম্ফশাশ্রীধারী এক ব্যক্তি মস্তক অবনত করিয়া ধীরে ধীরে চলিয়াছে। তাহার দিকে একবার মাত্র কটাক্ষ করিয়া বনবিহারী চলিয় গেল । সে ব্যক্তি ধীরে ধীরে পোষ্ট আপিসে আসিয়া উপস্থিত । পোষ্টমাষ্টারকে জিজ্ঞাসা করিল,—একটু আগে এক জন লোক একখানা চিঠি ফেলতে এসেছিল ? আজ টেলিগ্রাম আর চিঠির এত খোজ কেন ? আগেকার লোকট। তবু একট। টাকা দিয়া গিয়াছিল, কিন্তু এই ছিন্ন বস্ত্রধারী কি দিতে পারিবে ? পোষ্টমাষ্টার রুক্ষ স্বরে কহিল,—কত লোক চিঠি ফেলতে আসে আমি কি তার হিসেব রাখি ? —আমি তা-তা-ত বলচিনে। এ আমাদের লোক, ক-ক-কথায় কথায় বুঝলে কি না বলে । পোষ্টমাষ্টার মনে মনে বলিল, দুজন জুটেচে ভাল। এক জন কেবল বলে বুঝলে কি-না আর এক জন তোতল । প্রকাশ্বে বলিল,-আমাদের কি আর কাজকন্ম নেই যে কে কি রকম কথা কয় তাই মনে ক’রে রাখব ? —ম-ম-মশায়ের একটু কষ্ট হবে। চিঠি তা-তাতাড়াতাড়ি লেখা, একবার শুধু ঠিকানা ঠিক আছে কিনা দে-দে-দেথতে চাই । লোকটার বেশ ত ঐ, ছেড়া জামার পকেট হাতড়াইয়া একথান পাচ টাকার নোট বাহির করিল । পোষ্টমাষ্টার বাবু সেখান উন্টাইয়া-পাটাইয়া সন্দিগ্ধভাবে কহিলেন,—জাল নয় ত ? —বেশ, রোক দিচ্চি। এবার আর কথা আটকাইল না। সে ব্যক্তি পাচটা টাকা বাহির করিয়া বানাং করিয়া পোষ্টমাষ্টারের সম্মুখে রাখিল। টকা তুলিয়া পোষ্টমাষ্টার নোটখানাও চাপিয়া ধরিল, কহিল,—এখানাও থাক মা ? S99తు গঙ্গাধর হাসিল, তোতলামি হঠাৎ সারিয়া গেল। বলিল,—ত থাক। চিঠি দেখি । বাক্স খুলিয়া পোষ্টমাষ্টার বাহির করিল তিন চায় খানি চিঠি। গঙ্গাধর বনবিহারীকে দিয়া তাহার ঠিকান লিখাইয়া লইয়াছিল তাহার হস্তাক্ষর চিনিবার জন্য । বনবিহারীর হাতে লেখা ঠিকান পড়িল— দেওয়ান ত্রিলোচন মজুমদার পোষ্ট সুবর্ণপুর পোষ্টমাষ্টারের সাক্ষাতেই গঙ্গাধর ঠিকান লিখিয়: লইল। সে চলিয়া গেলে পর পোষ্টমাষ্টার ভাবিল, আঞ্জ কার মুখ দেখে উঠেছিলাম ! দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ স্মৃতিরিক্ত মামুষের মনে স্মৃতিশক্তিই সৰ্ব্বাপেক্ষা বলবতী । ভবিষ্যতের চিন্ত ক্ষণস্থায়ী, অনেকে ভবিষ্যতের কথা ভাবিতেই পারে না। ধাহা হইবার তাহা হইবে এই মাত্র মনে করিয়া অনেকে নিশ্চিন্ত থাকে । ভবিষ্যতে কি হইবে জানিবার ইচ্ছা হয়, কিন্তু জানা অসম্ভব বিবেচনা করিয়া মানুষ নিরস্ত হয়। বৰ্ত্তমান মুহূৰ্ত্ত মাত্র, এই আছে এই নাই। এখন যাহা বৰ্ত্তমান অপর মুহূর্তে তাহা অতীত হইয়া যায়। অতীতের জল্পনাই স্মৃতির একমাত্র কৰ্ম্ম। একটু ভাবিয়া দেখিলেই আমরা বুঝিতে পারি যে, জাগরণের অবস্থায় আমাদের অধিকাংশ সময় অতীতের চিন্তাতেই অতিবাহিত হয় । একা থাকিলে, অবসর থাকিলে অতীতের কথাই সৰ্ব্বদাই স্মরণ হয়। ইহাই স্মৃতি । জীবনপথে আমরা যেমন অগ্রসর হই, মনের দৃষ্টি ততই পশ্চাৎমুখী হইতে থাকে। ভবিষ্যতে কি হইবে, ভবিষ্যতে কি করিব, এরূপ চিন্ত৷ ক্ষণমাত্র মনে স্থান পায়, কিন্তু অতীত মনকে সম্পূর্ণ অধিকার করে। কোথাও আলোক, কোথাও ছায়া, আনন্দবিষাদে স্থতির পথ সমাকীর্ণ হইয়া আছে। যদি জীবনের কাল ভাগ করা যায় তাহা হইলে তিন ভাগ স্মৃতি, এক ভাগ আর সব । ীেবন বাল্যস্মৃতি, বাৰ্দ্ধক্যে যৌবনস্মৃতি । খুবক