পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিবেদিতার স্মৃতি ঐসরলাবালা সরকার সে-দিনটির কথা আজও মনে পড়ে যে-দিন প্রথম শুনিলাম ভগিনী নিবেদিতা আমাদের অতি নিকটে বাগবাজারে বোসপাড়ার গলিতে আসিয়া বাস করিতেছেন । নিবেদিতাকে দেখিবার জন্য মনে সেদিন কি প্রবল আগ্রহ উপস্থিত হইয়াছিল তাহা বুঝানো অসম্ভব। এখনকার দিন অপেক্ষ তখন মেয়েদের স্বাধীনতা অনেক কম ছিল, গঙ্গাস্বানে যাইবার জন্যই গুরুজনের অনুমতি পাওয়া কঠিন হইত। কি করিয়া যে নিবেদিতার সহিত সাক্ষাৎ হইবে এই চিন্তায় মন ব্যাকুল হইয়া উঠিল। যাহা হউক ভগবানের দয়ায় অতি শীঘ্রই নিবেদিতার দর্শন লাভ হইল । ‘অমৃত বাজার পত্রিকা' আপিসে প্রথমে নিবেদিতার সহিত দেথা হয়। নিবেদিত। সেখানে পূজ্যপাদ স্বৰ্গীয় শিশিরকুমার ঘোষ মহাশয়ের আমন্ত্রণে আসিয়াছিলেন। ভগিনীর আসিবার জন্য পূৰ্ব্ব হইতেই বাড়ির মেয়ের অপেক্ষা করিতেছিলেন । নিবেদিত আসিলেন, তাহার সঙ্গে ভগিনী ক্রিশ্চিয়ানাও ছিলেন। পূজ্যপাদ শিশিরকুমার ঘোষ মহাশয় এইভাবে তাহার সহিত আমাদের পরিচয় করাইয়া দিলেন, “ইনি নিবেদিতা, এর যা-কিছু সবই ভগবানের পাদপদ্মে নিবেদিত হয়ে গিয়েছে, আর ইনি ‘কৃষ্ণপ্রিয়া’ শ্রীকৃষ্ণের ইনি নৰ্ম্মসখী, তোমাদের পরম ভাগ্য যে এদের দুল্লভ সঙ্গের অধিকারী হইলে । আর ভগিনি, এরাই বাংলার মেয়ে,—ভারত রমণী, যাদের জন্য আপনি সৰ্ব্বত্যাগিনী হয়ে বহু দূর দেশ থেকে এসেছেন।” ভগিনী একটি গৈরিক বর্ণের কটি বেষ্টনী দ্বারা আবদ্ধ পরিধেয় পরিয়াছিলেন, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মুখে প্রসন্ন হাস্য। তাহাকে দেখিয়া কিছুক্ষণ যেন মুগ্ধ হইয়া রহিলাম। মনে হইল, এ মূৰ্ত্তি যেন রক্তমাংস দিয়া গঠিত দেহ নয়, এ যেন আত্মার আনন্দীপ্ত প্রসন্ন রূপের স্বয়ংপ্রকাশস্বরূপ । আরও মনে হইল, যেন তিনি কত, సెye8 দিনের পরিচিত, যেন তিনি চিরআত্মীয়। আমার মনের এই ভাব কি তাহার মনও স্পর্শ করিয়াছিল ? কেন জানি না, পরিচয়ের পর মুহূর্তেই তিনি আমার হাতের উপর হাত রাখিয়া একটু বিস্ময় ও আনন্দের সঙ্গে বলিলেন, “আপনাকে যেন চিনি বলিয়। মনে হয়, আগে কি আমাদের কোথায়ুও দেখা হইয়াছিল ?” ভগিনী ক্রিশ্চিয়ানা একখানি ফুলতোলা ঢাকাই শাড়ী অনেক পিন দিয়া আঁটিয়া অতিকষ্টে পরিয়াছেন। সরলা বালিকার মত সৰ্ব্বদাই আনন্দিত । শাড়ী পরিয়া তাহার আনন্দের সীমা নাই। যাহা দেখিতেছেন তাহাতেই যেন তাহার আনন্দ উছলিয়া উঠিতেছে ; আমাদের সহিত পরিচয়ে তিনি যে খুব সুখী হইয়াছেন তাহা বেশ বুঝা যাইতেছে । ঘরের প্রত্যেকটি জিনিষ আনন্দ, অন্তসন্ধিৎসা ও কৌতুহলের সহিত লক্ষ্য করিয়া দেখিতেছেন ও সে-সম্বন্ধে দু-একটি প্রশ্নও করিতেছেন। ঘরের কোণে পিতলের পিলস্কজে মাটির প্রদীপ জলিতেছিল। তখন ইলেকটিক লাইট ঘরে ঘরে হয় নাই এবং হারিকেনও প্রদীপকে একেবারে লুপ্ত করে নাই । সুমার্জিত পিতলের দীপাধার ও মাটির প্রদীপ দেখিয়া দুই ভগিনী একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেলেন, আনন্দোজ্জল দৃষ্টিতে অতি আগ্রহের সহিত সেটি নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন, পরে ‘আরতি এই শব্দ উচ্চারণ করিয়া যুগ্মকরে প্রণাম করিলেন । এই সামান্ত মাটির প্রদীপটিই যে কত পবিত্র ভাবের প্রতীক তাহা আমরা জন্মাবধি দেখিয়াও কখনও অনুভব করি নাই, কিন্তু সেদিন নিবেদিতার দৃষ্টির সংস্পর্শের প্রভাবে বুঝি তাহার কিছু অনুভব করিতে পারিলাম। যতক্ষণ নিবেদিতা রহিলেন, সময়টি যেন একটি মুখস্বপ্নের মত কাটিয়া গেল। নিবেদিতা চলিয়া গেলেন, কিন্তু তাহার স্থতিতে মন ভরপুর হইয়া রহিল। সমস্ত 彎