পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন নিবেদিতার স্মৃতি ৭৬৩ দেশদ্রোহী হইয়া বাচিয়৷ থাকার মত শাজনক বিষয় আর কিছুই নাই।” নিবেদিত যখন এই বর্ণনা করিতেন তখন দেশদ্রোহী হইয়া বাচিয়া থাকা যে কত দূর ঘৃণার বিষয় ছোট মেয়েরাও তাহা অমুভব করিত। একটি ছোট মেয়ে বলিয়াছিল, “বেচারা জয়চাঁদ, আহা, কেউ তাকে বুঝিয়ে দিলে না কেন যে ওরকম ক’রে না।” আর জহরত্রতের সময় ব্রতধারিণী রাজপুত রমণীগণ রাণী পদ্মিনীকে অগ্রবর্তিনী করিয়া স্তবগান করিতে করিতে অগ্নিকুণ্ডের দিকে প্রফুল্ল মুখে অগ্রসর হইতেছেন, এই দৃশ্যের বর্ণনা তিনি বহুবার করিয়াছেন, বর্ণনা করিতে করিতে একেবারে তন্ময় হইয়। যখন মুদ্রিত নেত্রে স্তব্ধ হইয়াছেন, তখন শ্রোত্ৰীগণের মনের সম্মুখে ছবির মত সেই দৃশু ভাসিয়া উঠিয়াছে, তাহারাও যেন তন্ময় হইয়া গিয়াছে। কি করিয়া যে আবার সেই দেশাত্মবোধ ভারতের কন্যাগণের অস্তরে জাগ্রত হইবে সেজন্য তিনি যেন ব্যাকুল হইয়া উঠিতেন। দেশের সম্বন্ধে কোন ছাত্রীকে কোন প্রশ্ন করিলে সে যদি ঠিক উত্তর দিতে পারিত তবে তাহার আনন্দের সীমা থাকিত না। কিন্তু অজ্ঞতা দেখিলে মৰ্ম্মান্তিক দুঃখিত হইয়া বলিতেন, “নিজের দেশকে তোমরা ভুলিয়া গেলে ।” খৃষ্টান ধৰ্ম্ম-) প্রচারকদের সম্বন্ধে তিনি বলিয়াছিলেন, “তাহারা এ দেশের জন্য অনেক কিছু করিয়াছে, হাসপাতাল ও স্কুল ; করিয়াছে। অনেক কষ্ট করিয়াছে ও লোকের সাহায্য } করিয়াছে, কিন্তু অনিষ্ট তাহ অপেক্ষ অনেক বেশী করিয়াছে। কেন-ন, ভারতবাসীকে তাহার নিজ জাতির জাতীয়তার মর্য্যাদা ভুলাইয়া দিতে চাহিয়াছে।” কলিকাতার এক প্রান্তে এক জনবিরল পল্লী, তাহাতে একটি অতি পুরাতন বাড়ি, সেই বাড়িটি ভগিনী নিবেদিতার সাধনের আশ্রম ছিল। নিবেদিতার সহিত প্রথম দেখা হইবার পর সেই বাড়িটিতে র্তাহার সহিত দ্বিতীয়বার দেখা হয়, এবং তাহার পর প্রতিদিনই প্রায় তাহার সহিত দেখা হইত। ‘ভারতের কন্যাগণ জাতীয়ভাবে জাগ্রত হউক’ এই তপস্যায় তাপসিনী নিবেদিতা যেন তথায় মগ্ন হইয়াছিলেন । তিনি বলিতেন, “এই ভারত ত্রহ্মোপলব্ধির মহাতীর্থ, কিন্তু ভারতবাসী যদি ভারতকে না চিনিতে পারে তবে ব্রহ্ম তাহা হইতে দূরে চলিয়া যাইবেন । তোমাদের ধৰ্ম্ম বীরের ধৰ্ম্ম, পুণ্যক্ষেত্র এই ভারতবর্ষ বীরগণেরই বাসভূমি। তোমাদের ধৰ্ম্ম তোমাদের শিক্ষা দিয়াছে সকলকে ভালবাসিবে, সকলের উপর সদয় হইবে, কিন্তু ক্লৈব্য ত্যাগ করিবে । অৰ্জুনের পুত্র নিজের দেশের সম্মানরক্ষার জন্য নিজের পিতার সহিত যুদ্ধ করিয়াছিলেন, এবং অর্জুনও কর্তব্যপালনের জন্য পুত্রের সহিত যুদ্ধ করিতে দ্বিধা করেন নাই ।” একদিন কতকগুলি পুস্তকে পোকা হইয়াছিল, সেগুলি নামাইয়া দেখা গেল পোকায় পুস্তকের অনেক পাতা কাটিয়াছে। বই ঝাড়িবার সময় পোকাগুলি মাটিতে পড়িয়া এদিক-ওদিক পলাইতে লাগিল। নিবেদিত। অতি দ্রুত সেগুলিকে মারিয়া ফেলিলেন । তাহার পর বলিলেন, “ভারতবাসী অতি দয়াশীল জাতি। সিন্ধুনদীর তীরে গ্রীকরাজা আলেকজাণ্ডার যখন দেশ আক্রমণ করিতে আসিলেন, তখন আতিথ্যপরায়ণ ভারতীয় রাজগণ র্তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়া লইলেন, কেবল পুরু নামে এক রাজা তাহাকে বাধা দিতে দণ্ডায়মান হইয়াছিলেন। মহাবীর অর্জনও শক্রগণের প্রতি সদয় হইয়। কুরুক্ষেত্রে প্রথমে যুদ্ধ করিতে চাহেন নাই, কিন্তু ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ র্ত্যহাকে বলিলেন, "ক্লৈব্য ত্যাগ কর এবং যুদ্ধ কর । ইহাই তোমাদের শাস্ত্রের শিক্ষা । কৰ্ত্তব্যপালনে কখনও মমতায় আবদ্ধ হইবে না এবং অশুভকারী যাহা তাহাকে সবল চিত্তে পদতলে দলিত করিবে ।” দক্ষিণ-ভারতের ভাস্কর্য্য শিল্পসমূহ, অজস্তার গিরিগাত্রের চিত্ররাজি, অশোকের অনুশাসনক্ষোদিত প্রস্তর বা স্তম্ভের শিলা এই সকলের সহিতই ভারতবর্ষের অধ্যাত্মিকতা যেন বিজড়িত রহিয়াছে, নিবেদিতার কথার ভাবে এইরূপ মনে হইত। নিবেদিত বলিতেন, —মানুষ সংগীত দিয়া পূজা করিল এবং তৃলিকা দিয়া পূজা করিল। অনেক কথা যাহা বুঝাইতে পারে নাই সেই গভীর মনের ভাব দুই ছত্রে শ্লোকে ব্যক্ত হুইল । কত