পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ጙዪmሙ S99శు তখনও থামিল না—ঘূর্ণিঝড় অন্তে সাগরের মত গম্ভীর নিনাদ চলিতে লাগিল । মালভূমির উপর কিছুক্ষণ কাহারও মুখে কথা সরিল না। সকলেই নিৰ্ব্বাক হইয়। নীচেকার শ্মশানপানে চাহিয়া রহিল—উৎক্ষিপ্ত শিলাখণ্ড ও অনাবৃত বিদীর্ণ শৈলচুড়, গভীর সমুদ্রতল হইতে চাচিয়া-তোলা শৈবাল, মানুষ ও দেবতার গৃহের স্থানে রাশি রাশি পাথর, কুড়ি ও কাকর। গ্রাম মুছিয়া গিয়াছে, শস্যক্ষেতের অধিকাংশ নিশ্চিহ্ন, পাহাড়ে সমতল স্থান আর নাই ; উপসাগরের কাছাকাছি যে-ঘরগুলো ছিল তার নিশানা পাওয়া যায় না—কেবল দেখা যাইতেছে গভীর সমুদ্রে দু-খানা খড়ের চাল আছাড়ি-পিছাড়ি করিতেছে। মৃত্যুকে মুখোমুখি দেখার আতঙ্ক সকলের মনে তখনও বর্তমান, সৰ্ব্বহার হইয়া মানুষ জড়ভরতে পরিণত, কেহ কিছুই বলে না। শেষে হামাগুচির আওয়াজ পাওয়া গেল, সে ধীরকণ্ঠে বলিতেছে—এই জন্যই ত ধানে আগুন দিয়েছিলাম ! সে ছিল তাদের মোড়ল—গ্রামের সেরা ধনী । আর এখন ? এখন সে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে যে গরীব, প্রায় তাহারই পর্যায়ে আসিয়া দাড়াইয়াছে। ঐশ্বৰ্য্য, ধনদৌলত সে স্বেচ্ছায় ধবংস করিয়াছে--অসামান্ত ত্যাগের দ্বার চারশ’ মানুষের প্রাণ সে রক্ষা করিয়াছে ! বালক তাদা ছুটিয়া আসিয়া দাদুর হাত চাপিয়া ধরিল--এই দাদুকেই সে পাগল ঠাওরাইয়াছিল ! ধীরে ধীরে অন্যান্য সকলেও কিসে তাদের প্রাণ বাচিয়াছে সেই কথা স্পষ্ট বুঝিতে পারিল—যে সরল নিশ্বাৰ্থ দূরদৃষ্টি তাহাদিগকে রক্ষা করিয়াছে, অবাকবিস্ময়ে সেই কথাই ভাবিতে লাগিল । দেখিতে দেখিতে মাতব্বরের হামাগুচির সম্মুখে ধূলার উপর সাষ্টাঙ্গে প্রণত হইল—ক্রমে ক্রমে বাকি সকলেও তাহাকে প্রণাম করিয়া ধন্য হইল । তখন বুড়া একটু কাদিল—কতকটা আননে, আর কতকটা অবসাদ ও শ্রান্তিভারে। বুড়া হাড়ে আর কত সয় । কথা যখন ফিরিয়া পাইল, হামাগুচি তখন বলিল, ভাবনা কি, আমার বাড়ি ত রয়েছে ! ওখানে অনেকেরই ঠাই হবে । পাহাড়ের ওপর মন্দিরও খাড়া আছে, বাঞ্জি লোক থাকবে সেখানে । তারপর সে বাড়ির দিকে পথ দেখাইয়া চলিল। জনতা পিছু পিছু হাটিতে লাগিল, স্থাটিতে হাটিতে কেঃ বা কাদিল আর কেহ বা জয়ধ্বনি করিল। দুঃখদুর্দশা দীর্ঘকাল চলিল, কারণ সে-যুগে জেলা হইতে জেলায় দ্রুত যাতায়াতের উপায় ছিল না এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য বহু দূর হইতে আসিয়াছিল। কিন্তু শেষে স্বসময় যখন আসিল তখন লোকেরা হামাগুচির পূঃ শোধ করিতে ভোলে নাই। অর্থ দান করিয়া নয়, কার; তাহা করা সম্ভব হইলেও হামাগুচি তাহ লইত ন৷ এবং তাহার প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা দানের দ্বারা প্রকাশ কৰু ত সম্ভব নয়—তাহাদের বিশ্বাস হামাগুচির দেহে দেবতার আবির্ভাব হইয়াছে ! তাই সকলে তাহাকে দেবতা বলি: ঘোষণা করিল—তাহাকে হামাগুচি দাইম্যোজি । আখ্যায় অভিহিত করিল। গ্রাম যখন আবার গড়িয়া উঠিল তখন হামাগুচি আত্মার উদ্দেশে এক মন্দির প্রতিষ্ঠিত হইল । সে মন্দিরেঃ ভোরণশীর্ষে দারব ফলকে হিরন্ময় চীনা হরফে খোদিত হইয় তাহারই নাম । ষোড়শ উপচারে সেখানে নরদেবতার পূঞ্জ সুরু হইল। তাহ দেখিয়া হামাগুচির কি মনে হইয়াছিল বলিতে পারি না ; আমি কেবল জানি, গিরিশীর্ষে সেই পুরানো চালাঘরে সন্তানসস্ততি লইয়া সে বাস করিতে লাগিল—নিত্যকার সাদাসিধা মামুষেরই মত সরল স্নেহময় নিরহস্কার । আজ শতাধিক বৎসর হামাগুচির মৃত্যু হইয়াছে কিন্তু শুনিতে পাই সেই মন্দির এখনও বৰ্ত্তমান । এখনও লোকের বিপদে আপদে সঙ্কটকালে মুস্কিল আসানের জন্ত সেই মহাপ্রাণ কৃষকের আত্মার আরাধনা করে। বলে— হে বিপদভঞ্জন সঙ্কটমোচন দেবতা, করুণার তোমার শেষ নাই, এ বিপদে তুমি আমাদের সহায় হও, তুমি আমাদের • মাইমো=বৃষাণী; জিন-দেবতা__ ! * সঙ্কলিত -