পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাতৃঋণ ঐসীতা দেবী وبا لا প্রতাপের অাশা ছিল যে, সকালে হয়ত জরট ছাড়িয়া &ইবে । কিন্তু সকালেও মাথা ভার হইয়া রহিল, থাৰ্ম্মোমিটার দিয়া দেখিল, জর কমিয়াছে বটে, তবে চাড়ে নাই। হতাশ হইয়া আবার বিছানায় শুইয়া পড়িল । পিসিমা বলিলেন, “সদিজর কি আর একদিনে যায়ু রে ? এ কি ম্যালেরিয়া যে এবেল ওবেলা যাবে আসবে ? গায়ে আমাদের বর্ষাকালে ও-জর ত লেগেই থাকত। এই সকালে ভাত জল থেলাম, ওমা, বেলা গড়াতে-না-গড়াতে হি হি করে কেঁপে জর এসে পড়ল ।” রাজু বলিল, “ম্যালেরিয়া হয়নি ভেবে ত প্রতাপের কোনো সাল্গুন নেই? ও যে কাজে বেরতে না পেয়ে কেবারে হেদিয়ে গেল। ডাক্তার-টাক্তার ডাকব ন-কি ?” প্রতাপ মাথা নাড়িয়া জানাইল ডাক্তারে কোনো প্রয়োজন নাই। পিসিম বলিলেন, “তোমাদের উঠতেবনতে ডাক্তার, ডাক্তার কি যাদু জানে ? তা বলে মানুষের একটু সর্দিকাশিও হবে না ? ও সব মাঝে মাঝে হওয়া ভাল। উপোস্ দিলে আর আদা যষ্টিমধু সেদ্ধ করে খেলেই সেরে যাবে।” রাজু বলিল, “তবে তুমি সবরকমে উপোসের ব্যবস্থাই কর হে, আমি একটু ঘুরে আসি।” বলিয়৷ প্রতাপের দিকে চোখ মট্কাইয়া বাহির হইয়া গেল। ইস্কুলে আজ আর জানাইতে হইবে না, দুতিন দিন হয়ত যাইতে পারিবে না বলিয়া আগের দিনেই সে চিঠি লিখিয়া দিয়াছিল। নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়িও লিখিবার কোনো প্রয়োজন নাই, কিন্তু লিখিবার জন্য তাহার প্রাণটা ছটফট করিতে লাগিল। এমন কিছু লেখা যায় না, যাহাতে যামিনী একটু কিছু উত্তর দেয় ? লিখিবে সে অবশু নৃপেন্দ্রবাবুর নামেই, কিন্তু এমন সময় পাঠাইবে, যখন নৃপেন্দ্রবাবু কিছুতেই বাড়ি থাকিতে পারেন না। কি লেখা যায় ? তাহার মনটা আবার অত্যন্ত অস্থির হইয়া উঠিল। রাজুকে দিয়া অবশ্ব সে আর চিঠি পাঠাইবে না, হয় অন্য লোক জোগাড় করিতে হইবে, নয় ডাকেই পাঠাইবে । কিন্তু ডাকের চিঠি কি ঘামিনী খুলিবে ? পিতার জন্য রাখিয়া দিবে হয়ত। আর চিঠি কখন পৌছিবে, তাহারই বা ঠিকানা কি ? বৌদিদি আসিয়। চা দিয়া গেলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি খাবে ভাই ঠাকুরপো ? সাগু বালি কিছু করে দেব ?” প্রতাপ বলিল, “দেবেন একটু সাগুই করে, আর কি-ই বা খাব ?” বৌদিদি চলিয়া গেলে, প্রতাপ আবার চিন্তাসাগরে ডুব দিল। কি করিবে, কোন পথে যাইবে ? অদৃষ্টের হাতে সব ছাড়িয়া দিবে, না নিজে একবার পুরুষের মত সংগ্রাম করিয়া দেখিবে, ভাগ্যপরিবর্তন করিতে পারে কি-না ? বাহির হইতে কামু ডাকিয়া বলিল, “কাক, তোমার চিঠি এসেছে।” প্রতাপের বুকের ভিতরটা ধ্বক্ করিয়া উঠিল। চিঠি কাহার ? আজ ত বাড়ির চিঠি আসার কথা নয়, আর সে চিঠি ত কখনও সকালবেলা আসে না ? বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়া বলিল, “ভিতরে দিয়ে যাও ত কাতুবাবু।” কামু চৌকাঠ পার হইয়া চিঠিখান প্রতাপের গায়ের উপর ছুড়িয়া দিয়া পলায়ন করিল। জরের ছোয়াচ লাগিয়া পাছে জর হয়, তাই বৌদিদি বোধ হয় ছেলেকে সাবধান করিয়া দিয়া থাকিবেন, তাই কামু আজ এত সতর্ক। না-হইলে প্রতাপের ঘাড়ের উপর আসিয়৷ পড়িবার কোনো উপলক্ষ্যই সে অগ্রাহ করে না । চিঠিখন হাতে করিয়াই প্রতাপ যেন ইন্দ্রলোকে উড়িয়া চলিয়া গেল। কোথায় রহিল তাহার দীন