পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন মালয় গেলেন। রাজুও চায়ের সন্ধানে প্রস্থান করিল। প্রতাপের বড় লোভ হইতে লাগিল চিঠিখানা আর একদর বাহির করিয়া ভাল করিয়া পড়ে, তাড়াতাড়িতে আগের বার ভাল করিয়া পড়৷ নাই। কিন্তু রাজুর ভয়ে তাহা করিতে সাহস হইল না। চট্‌ করিয়া চিঠিখানা বলিশের তলা হইতে বাহির করিয়া, বাক্স খুলিয়া তাহার ভিতর ঢুকাইয়া দিল। বৌদিদি এখনই হয়ত বিছানা তুলিতে আসিয়া জুটিবেন। বৌদিদি আসিলেন বটে, তবে প্রতাপ তখনও শুইয়াই আছে দেখিয়া বলিলেন, “থাক তবে, এখন আর তোমায় টানাটানি করে কাজ নেই, রোদট। একটু ভাল করে উঠক, তখন একটু চেয়ারে বসে, আমি ঝেড়েকুড়ে ঠিক করে দেব এখন । জরটা আজও ত ছাড়ল না, এখন ক’দিন ভোগ আছে, কে জানে।” প্রতাপ বলিল, “ভোগ সঙ্গে সঙ্গে আপনারও কম হচ্ছে ল: । এত কাজ, তার উপর আবার রুগীর সেবা ।” বৌদিদি বলিলেন, “হ্যাঃ, সেবা ত কতই করছি । করা ত উচিতই, যখন আমাদের মধ্যে রয়েছ, কিন্তু সময় কোথায় ভাই ?” কাকু চীংকার করিয়া উঠায় বৌদিদি তাড়াতাড়ি বাহির হইয় গেলেন। রাজ চা খাইয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হে, আজ কোথাও চিঠিপত্র নিয়ে যেতেটেতে হবে ?” প্রতাপ বলিল, “ন, দু-তিন দিন যেতে পারব না ব’লে ত স্কুলে লিখেই দিয়েছি।” রাজু জিজ্ঞাসা করিল, “আর অন্যত্র ?” প্রতাপ মুখখানাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখিবার চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, “অন্যত্রও তাই লিখেছি।” চা খাইয়া মাথাটা একটু যেন হাল্কা বোধ হইতেছিল, স্থলে নাই যাইতে পারুক, অন্ততঃপক্ষে বিকালে তাহার বহির হইতে পারা উচিত। না-হয় একটা গাড়ী ভাড়া করিয়াই যাইবে । রাজু তখনও আপিস হইতে ফিরিবে না, সুতরাং ধরা পড়িবার সম্ভাবনা অল্প। এখন বিধি বাদ না সাধেন, তাহা হইলেই হয় । পিলিমার নির্দেশমত আদা-চ, যষ্টিমধুর পাচন, মাতৃ-ঋণ HS) সমস্তই সে নির্বিচারে গিলিতে লাগিল। পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটু আধটু হোমিওপ্যাথির চর্চা করিতেন তাহার নিকটেও চিঠি লিখিয়া ঔষধ চাহিয়া পাঠাইল । কোনোমতে বিকালবেল তাহাকে চাঙ্গা হইয়া উঠিতেই হইবে। যামিনীর চিঠির উত্তর সে কাগজেকলমে দিতে চায় না। যাহা লিখিলে তাহার হৃদয় তৃপ্ত হইবে, তাহা লিখিবার অধিকার তাহার এখনও অর্জন করা হয় নাই। মুখের কথাও সে যে বেশী-কিছু বলিতে ভরসা পাইবে তাহ নয় । কিন্তু তাহার কণ্ঠস্বর, তাহার চোখের দৃষ্টি, তাহার মুখের ভাব, এ-সকল কি ঘামিনীকে কিছুই জানাইতে পরিবে না ? যামিনী শুধু ভদ্রত করিয়াছে, না প্রতাপের সম্বন্ধে বিন্দুমাত্রও মমতা তাহার মনে জন্মিয়াছে তাহা কি যামিনীর ব্যবহারে কিছু বুঝা যাইবে না ? প্রতাপ আর নিশ্চেষ্ট বসিয়া থাকিতে চায় না, যাহা করিবার তাহ! এখনই তাহাকে করিতে হইবে। গজু রাজ খাইয়া-দাইয় আপিসে বাহির হইয়া গেল । বৌদিদির অন্তরোধসত্ত্বেও প্রতাপ কিছু ন! থাইয়াই পড়িয়া রহিল, যদিই আবার জর বাড়িয়া যায়। থাৰ্ম্মোমিটার চাহিয়া বালিশের তলাতেই রাপিয়৷ দিল, কতবার যে দেহের উত্তাপ পরীক্ষা করিল, তাহার ঠিকাঠকানা নাই । অদৃষ্ট সেদিন নিতান্ত বিরূপ ছিল না । বিকালের দিকে জর সত্যই এতটা কমিয়া গেল, যে, প্রতাপ এক রকম নিশ্চিন্তই হইল। সাড়ে-তিনটা বাজিয়া গেল, যাইতে হইলে আর আধ ঘণ্টার ভিতর ধাওয়া উচিত । বাক্স খুলিয়া ফরসা জামা কাপড় বাহির করিল। পিসিম দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ওকি রে, এই অসুখের মধ্যে কোথায় বেরচ্ছিস ?” প্রতাপ একটু অপ্রতিভভাবে বলিল, “নৃপেন্দ্রবাবুদের বাড়ি একবার যেতে হবে । এই মাসে মাইনে-টাইনে বাড়িয়ে দিলেন, এই মাসেই বসে বসে কামাই করাটা উচিত নয়।” পিসিমা বলিলেন, “তাই বলে জর হলেও যেতে হবে ? ঘোরাঘুরি করে জর বেড়ে গেলে তখন ?” হইয়