পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৯২ SOOáు প্রতাপ বলিল, “গাড়ী করে যাব, ছেলেটাকে একটু কিছু লিখতে-টিখতে দিয়েই চলে আসব। বেশীক্ষণ থাকব না ।” পিসিম বলিলেন, “যা তোমার খুশী কর বাপু । আমার কাছে যখন রয়েছ, না বলেও আমি পারি না । গায়ে একটা গরম কাপড় দে ।” কাপড়-চোপড় পরিয়া আর এক ডোজ ওষুধ খাইয়া প্রতাপ বাহির হইয় পড়িল । গলিট পার হইয়া গিয়াই সে গাড়ী ডাকিয়া উঠিয়া বসিল । সারাটা পথ কত কি যে ভাবিতে ভাবিতে চলিল, তাহার ঠিকানা নাই। যামিনীর সঙ্গে দেখা হইবে ত ? দেখা হইলেই বা সে কি বলিবে ? যাহ-কিছু বলিতে চায়, সবই কি বলিবে, না কেবল যামিনীর মনের ভাব বুঝিবার চেষ্টা করিয়াই নিরস্ত হইবে ? আর দেরি করা কি উচিত ? জ্ঞানদা কবে ফিরিয়া আসেন, তাহার কিছু ঠিকানা নাই । তিনি আসিয়া পড়িলে, নির্জনে যামিনীর সঙ্গে দেখা করিবার আর কোনো সুযোগই হইবে না। সুতরাং তিনি দূরে থাকিতেই যামিনী ও তাহার ভিতর সব কথা পরিষ্কার হইয় যাওয়া উচিত। হাজার সঙ্কোচ এবং ভয় থাকুক, প্রতাপকে তাহা কাটাইয়া উঠিতে হইবে । গাড়ী আসিয় নৃপেন্দ্রবাবুর বাড়ির সম্মুখে দাড়াইল । প্রতাপ নামিয়া পড়িয়া, ভাড়া চুকাইয়া গাড়ীটাকে বিদায় করিয়া দিল । বাড়িটা বড় বেশী চুপচাপ, কেহই কি বাড়ি নাই নাকি ? প্রতাপ আপিস ঘরে একবার উকি মারিয়া আবার বাহির হইয়া আসিয়া, কোনো চাকরবাকরের সন্ধানে ইতস্ততঃ দৃষ্টি সঞ্চালন করিতে লাগিল । খাবার ঘরে বাসনকোষন নাড়ার একটা শব্দ শোনা গেল । প্রতাপ সেইদিকে গিয় ডাক দিল, “ছোট্ট !” ছোট্ট বাহির হইয়া আসিল । প্রতাপ জিজ্ঞাসা করিল, “দাদাবাবু কোথায়? স্কুল থেকে বাড়ি এসেছেন マ " ছোট্ট বলিল, “হঁ৷ এসেছে, চা ভি খাইয়েসে। আচ্ছ, আমি খবর করছি,” বলিয়া উপরে চলিয়া গেল। শবীর তখনও অসুস্থ, ঘোরাঘুরি করিতে তাহার ভাল লাগিতেছিল না। আপিস-ঘরে ঢুকিয় সে চেয়ার টানিয় লইয়া বসিয়া পড়িল । " ছোট নামিয়া আসিয়া খবর দিল, "দাদাবাবু ত বাহের চল গেল। দিদিমণি আসছেন।” প্রতাপ তাড়াতাড়ি চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয় দাড়াইল । সিঁড়িতে মথমলের চর্টির শব্ব করিতে করিতে যামিনী নামিয়া আসিল । তাহার মুখের দিকে চাহিয়াই প্রতাপ বুঝিতে পারিল যে, সে অত্যন্ত উত্তেজিত অবস্থায় আসিয়াছে। তাহার মুখ আরক্তিম, চোখ উজ্জল হইয়৷ উঠিয়াছে, নিঃশ্বাসও যেন একটু দ্রুততালে বহিতেছে। যামিনীকে নমস্কার করিয়। প্রতাপ জিজ্ঞাসা করিল, “মিহির বাড়ি নেই বুঝি ? বেরিয়ে গেছে ?” যামিনী একটু যেন কম্পিত কণ্ঠে বলিল, “আপনি যে আজ আসতে পারবেন, তা মনে করিনি। খোকা বললে যে, তার এক বন্ধুর বাড়ি যাবে, আমি আর বারণ করলাম না। আপনার জর সেরে গেছে ?” প্রতাপ একটু হাসিয়া বলিল, “একেবারে সেরে যায়নি অবশু, তবে আসতে ত পারলাম। গাড়ী ক’রেই এসেছি ।” যামিনী বলিল, “আচ্ছা, আমি থোকাকে ডাকতে পাঠাচ্ছি। তার বন্ধুর বাড়ি খুব বেশী দূরে নয়। আপনি চলুন, ও-ঘরে বসবেন ।” প্রতাপ ঘামিনীর সঙ্গে গিয় ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করিল। ঘরটি এমন স্বন্দর, এমন রঙীন সাজে সজ্জিত, এমন সুগন্ধপ্লাবিত, যে, কয়েক মুহূৰ্ত্ত ইহার ভিতরে থাকিলেই মনট কেমন একটা মধুর আবেশে ভরিয়া উঠে। প্রতাপের মন পূৰ্ব্ব হইতেই ভাববিহবল হইয়াছিল, এখানে আসিয়। তাহার অবস্থাট। আরও সঙ্গীন হইয়া উঠিল । যামিনী একটা সোফায় বসিয়া পড়িয়া, প্রতাপকে বলিল, “আপনি দাড়িয়ে রইলেন কেন, বস্থান ।” প্রতাপ বসিল । আর শুধু শুধু সময় নষ্ট করা উচিত নয়, হয়ত এখনই মিহির আসিয়া জুটিবে। আর কিছু না ভাবিয়া বলিয়া বসিল, “আজ সকালে আপনার চিঠি পেলাম।” যামিনী মৃদুকণ্ঠে বলিল, “হঁ্য, কাল যখন আপনার