পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্বিন চিঠিটা এল, তখন বাবা বাড়ি ছিলেন না। আমি ভাবলাম, আপনার টাকা-ক'ট পাঠিয়ে দিই, হয়ত অসুখবিমুখের মধ্যে দরকার হবে।” প্রতাপ বলিল, “টাকার জন্যে তাড়াতাড়ি বেশী ছিল ন, যদিও গরিব মানুষের টাকার প্রয়োজন সৰ্ব্বদাই আছে। কিন্তু আপনার চিঠি পেয়ে আমি কতটা যে উপকৃত হয়েছি, তা ভাষায় বোঝাবার সাধ্য আমার নেই। ধন্যবাদ দিতে গেলেই জিনিষটাকে ছোট করা হবে।” যামিনীর মুখ গোলাপ ফুলের মত রাঙিয়া উঠিল । কিছু না বলিয়া সে চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু তাহার চোখের দৃষ্টি তাহার হইয়া যেন প্রতাপের কথার উত্তর দিতে লাগিল । বাহিরে কাহার যেন পদশক শোনা গেল । প্রতাপ বলিল, “দেখুন আপনাকে আমার অনেক কথা বলবার আছে। বলবার অধিকার আমার আছে কিনা জানি না। না যদি থাকে, অনর্থক আস্পর্দা প্রকাশ করে আপনাকে বিরক্ত করতে আমি চাই না। আপনি কি দয়া করে শুনবেন ?” যামিনী তারকার মত দীপ্ত চোখে তাহার দিকে চাহিয়া বলিল, “শুনব ।” প্রতাপের বক্ষম্পন্দন দ্রুততর হইয়া উঠিল । বলিল, “কবে আপনার সময় হবে বলুন। আমি তখন আসব।” যামিনী একটু ভাবিয়া বলিল, “দুপুর বেলাই এক আমি একেবারে ফ্রি থাকি, অন্য সময় একট-ন-একটা কাজ থাকে। কিন্তু তখন ত আপনার স্কুল।” প্রতাপ বলিল, “ত হোক । কাল দুটোর সময় তাহলে আমি আসব।” যামিনী অন্যদিকে চাহিয়া বলিল, “আচ্ছা।” সময় মিহির আসিয়া হাজির হইল। Jुक्रम > ፃ প্রতাপ বাড়ি ফিরিয়া আসিল। পৃথিবীর মূৰ্ত্তিই তাহার চোখে তখন অন্যরূপ হইয়া গিয়াছে। জন্মাবধি জগৎ সংসারকে এত সুন্দর সে কোনোদিন দেখে নাই। জীবন ছিল তাহার নিকট সংগ্রামেরই নামান্তর মাত্র, তাহার جيo ----- bہ جا মাতৃ-ঋণ Գ:ՏՑ ভিতর না-ছিল আশা, না-ছিল আনন্দ । এইভাবেই আমরণ তাহার কাটিয়া যাইবে, ইহাই ভাবিতে সে অভ্যস্ত ছিল, হয়ত দু-দশদিন অন্নচিন্তাটা একটু বেশী প্রবল হইবে, দু-দশদিন কিছু কম হইবে, ইহার অধিক কোনো বৈচিত্র্য সে আশা করে নাই। বিবাহ করিবে কি-না, সে কথাও ভাবিয়া দেখিবার মত উৎসাহ তাহার কৰ্ম্মক্লান্ত অস্তঃকরণে ছিল না । কিন্তু হঠাৎ যেন ইন্দ্রজালপ্রভাবে সে অন্যমানুষ হইয়৷ গেল। ভবিষ্যৎকে কি উজ্জ্বল বর্ণেই সে চিত্রিত দেখিল । কিন্তু এই চিত্রকে স্বপ্নলোকে বা কল্পলোকে রাখিয়৷ দিলেই ত চলিবে না, নিজের চেষ্টায়, নিজের কৃতিত্বে উহাকে বাস্তবজগতে লইয়া আসিতে হইবে। তাহার আর ভাবস্রোতে গা ঢালিয়া ভাসিয়া যাইবার সময় নাই। মিহিরকে পড়াইবার কোনো চেষ্টা সেদিন সে করে নাই। মনের তখন তাহার যে অবস্থা, তাহাতে কাজ করাই অসম্ভব । ছাত্রকে লিখিবার কিছু কাজ দিয়া সে বাড়ি হইতে বাহির হইয়া গেল । রাস্তায় বেশ খানিকট হাটিয়া আসিয়া তাহার পর তাহার মনে পড়িল যে অসুস্থ শরীরে এত স্থাটাইটি তাহার সহ হইবে না। তখন রাস্তায় দাড়াইয় গাড়ীর সন্ধান করিতে লাগিল । রাজু ফিরিবার আগে গিয়া পৌছিতে পারিলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়, না-হইলে বাজে কথার চোটে অস্থির হইয়া উঠিতে হইবে এখন একমনে কিছুক্ষণ ভাবিতে পাওয়৷ তাহার নিত্যস্ত প্রয়োজন । সমস্ত জীবনের গতি স্থির করিতে হইবে তাহাকে এই কয়েকটি ঘণ্টার মধ্যে। বাড়ির কাছাকাছি আসিয়াই সে গাড়ীটাকে বিদায় করিয়া দিল। পিসিমা তাহাকে দেখিয়া বলিলেন, “সকাল সকাল ছেড়ে দিলে বুঝি আজ ? হাজার হোক মানুষের চামড়া গায়ে আছে ত ” প্রতাপ একটু হাসিয়া ঘরে ঢুকিয়া গেল। কাল যেমন করিয়া হোক, দুপুরে ছুটি লইয়া স্কুল হইতে চলিয়া আসিতে হইবে। যামিনীর নিকট কি ভাবে সে কথাটা পাড়িবে, হাজার ভাবিয়াও স্থির করিতে পারিল না । যাহাই ভাবে, তাহাই অসহ থিয়েটার ঢংএর মনে হয়। অবশেষে হতাশ হইয়া সে ৯ে