পাতা:প্রবাসী (দ্বাত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ:8 SOOచేు ত্যাগ করিল। তখন মুখে যেমন ভাষা জোগাইবে, তাহ বলিলেই চলিবে । একেবারে স্পষ্ট বিবাহের প্রস্তাবই করিবে, না কথাটা এখনও কিছু অস্পষ্ট থাকিতে দিবে ? তাহাও ভাবিয়া ঠিক করা কঠিন। যামিনীর মনের ভাব বুঝিয়া সেইমত ব্যবস্থা করিতে হইবে । - অকারণে বসিয়া বসিয়া নিজেকে শ্রান্ত না করিয়া সে আবার শুইয়াই পড়িল । যামিনী আজ তাহাকে দেখিয়৷ সত্যই খুলী হইয়াছিল। নিজের আনন্দবিহ্বলতা সে লুকাইয়। রাখিতে পারে নাই, চায়ও নাই বোধ হয়। যামিনী কি সত্যই প্রতাপকে ভালবাসে ? ইহা কি সম্ভব ? যাহ-কিছুকে সে হেয়, অকল্যাণের আকর বলিয়া ভাবিতে শিক্ষ। পাইয়াছে, তাহার সব-কয়টিই প্রায় প্রতাপের মধ্যে মূৰ্ত্তিমান । প্রতাপ রূপবান নয়, প্রতাপ পুরাতন সমাজের আচারের ভিতর বৰ্দ্ধিত, সৰ্ব্বোপরি সে কপৰ্দকহীন দরিদ্র । যামিনী কি তাহাকে পতিরূপে নিৰ্ব্বাচন করিবার কথা স্বপ্নেও ভাবিতে পরিবে ? এই অবস্থায় ত নয়ই। প্রতাপকে অন্য মানুষ হইয়। যাইতে হইবে। তাহাকে বিদ্যায়, ধনে, মানে এত উচ্চে উঠিতে হইবে, যেখান হইতে যামিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করা তাহারও নিকট স্পৰ্দ্ধা বলিয়। গণ্য হইবে না। যামিনী যদি তাহাকে ভালবাসিয়া থাকে, তাহা হইলে প্রতাপের জঙ্ক দুঃখদরিদ্র্য বরণ করিয়া লইতে সে হয়ত হাসিমুখে অগ্রসর হইয়া আসিবে, কিন্তু তাহার এই ত্যাগের সুবিধা গ্রহণ করিতে প্রতাপ পরিবে না। করে যদি তবে সে অমানুষ । ভালবাসিয়া যামিনী তা হাকে সম্রাটের পদে বসাইয়াছে, ভিখারী বা চোরের মত হেয় আচরণ সে করিতে পারিবে না। প্রতাপ স্থির করিল, যামিনী যদি তাহাকে ভাবী পতিরূপে গ্রহণ করে, তাহা হইলে কোনো একটা স্কলারশিপ, জুটাইয়া বিলাত কিম্ব আমেরিক চলিয়া যাইবে । কেবলমাত্র পাথেয় খরচ জুটাইয়া পরে কায়িক শ্রমে নিজের খরচ চালাইয় এবং কৃতবিদ্য হইয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়াছে, এমন যুবকেরও দৃষ্টাস্ত তখন বিরল ছিল না। প্রতাপ নিজেই দুই-তিনজনের নাম জানিত। দরিত্রের সন্তান সে, যথাসম্ভব দরিদ্র ভাবে থাকিয়া সাধনায় সিদ্ধি লাভের চেষ্টা সে করিতে পারিবে। ভাই আবার চাকরি করিতেছে, মা এবং ছোট ভাইবোনের ভার গ্রহণ সে-ই কিছুদিনের জন্য করিতে পরিবে । প্রতাপ মশিক্ষিত ও অধিক অর্থোপার্জনের পক্ষে উপযুক্ত হইয়া আসিলে তাহাদেরও লাভ বই লোকসান নাই, সুতরাং মা ভাইও আপত্তি করিবেন না আশা করা যায় । রাজু ফিরিয়া আসিল । ঘরে ঢুকিয়াই জিজ্ঞাস করিল, “কি হে, এখন কেমন ?” প্রতাপ শুইয়া শুইঙ্গাই উত্তর দিল, “ভালই মোটের ওপর ।” রাজু বলিল, “তবে আর কি, কালকেই জয়ধ্বজ তুলে বাড়ির থেকে বেরিয়ে পড়। দুদিনের বিরহেই প্রায় পুণ্ডরকের মত শুকিয়ে উঠেছ। নিতান্ত সদ্ধিজর, না-হলে চন্দনপক্ষ লেপন করে পদ্মপত্রে ব্যঞ্জন করবার চেষ্ট করতাম।” প্রভাপ উত্তর না দিয়া, চুপ করিয়াই রহিল। কথ বঙ্গিতে আরম্ভ করিলে, আর কথার শেয থাকিবে না। যথাসম্ভব সাবধানত অবলম্বন করিয়া সে সন্ধ্যা এবং রাত্রি কাটাইল । সৌভাগ্যক্রমে জর সকাল বেল ছাড়িয় গেল। পিসিমা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কুইনাইনের বড়ি একটা খেয়ে নিবি রে ? আবার জরজাড়ি হ’লে ত বিপদ ।” বিপদ যে কতখানি তাহা তবু ত পিসিমা জানিতেন না। অতি স্থবোধ বালকের মত কুইনাইনের বড়ি প্রতাপ হাসিমুখে গলধঃকরণ করিল। মনে মনে বলিল, “দিনট সুরু হ’ল, কুইনাইন দিয়ে, অমৃত দিয়ে যেন শেষ হয় ।” বৌদিদি জিজ্ঞাসা করিয়া গেলেন, “কি খাবে ঠাকুরপো, ভাতই ? না, দুখানা রুটি করে দেব?” প্রতাপ বলিল, “রুটি হলে ত হয় ডাল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ির ভিতর তুমি করবে কখন ?” বৌদিদি হাসিয়া রাঙা ঠোঁট উণ্টাইয়৷ বলিলেন, “হ্যা, দুটাে রুট নাকি আবার করতে পারব না, তুমি দেখে। এখন ’